ছবি-ভাস্কর্য নির্মাণের অবৈধতা : প্রামাণ্য একটি আলোচনা
একটি ভ্রান্ত মত ও তার খণ্ডন :
আমাদের বর্তমান যুগে আধুনিকপন্থি একটি ক্ষুদ্র গবেষক দলের দাবি হলো, ছবি-প্রতিকৃতি ও ভাস্কর্য নিষেধাজ্ঞার বিধানটি ইসলামের প্রথম যুগে ছিল। কারণ, তখন লোকেরা নতুন মুসলমান হওয়ায় মূর্খতাযুগের অন্ধকার ও মূর্তিপূজার প্রভাব পুরোপুরি দূর হয়নি এবং ইসলামের তাওহিদ ও একত্ববাদের শিক্ষা তাদের অন্তরে গেঁথে যায়নি, বিধায় তাদেরকে মূর্তিপূজা ও তা ঘরে বা নিজের সাথে রাখা নিষেধের পাশাপাশি প্রাণীর ছবি-প্রতিকৃতি আঁকা ও তা রাখার ব্যাপারেও কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এরপর যখন মুসলমানদের অন্তরে তাওহিদ ও ইসলামের অমিয় বাণী ও শিক্ষা দৃঢ়ভাবে গেঁথে গেল এবং মূর্তিপূজার প্রতি আগ্রহ ও ভক্তি শেষ হয়ে উল্টো সেখানে পরিপূর্ণ ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হলো, তখন ছবি-প্রতিকৃতির ব্যাপারে পূর্বের নিষেধাজ্ঞাও উঠে গেল।
এ ধরনের মনচাহি ও কুরআন-সুন্নাহর বহির্ভূত চিন্তাধারায় এরাই প্রথম নয়; বরং আজ থেকে প্রায় সাতশ বছর পূর্বেও এমন একটি দলের অস্তিত্ব ছিল। এদের বর্ণনা পাওয়া যায় আল্লামা ইবনু দাকিক আল-ইদ রহ.-এর বক্তব্যে। তিনি বলেন :
وَلَقَدْ أَبْعَدَ غَايَةَ الْبُعْدِ مَنْ قَالَ: إنَّ ذَلِكَ مَحْمُولٌ عَلَى الْكَرَاهَةِ، وَإِنَّ هَذَا التَّشْدِيدَ كَانَ فِي ذَلِكَ الزَّمَانِ، لِقُرْبِ عَهْدِ النَّاسِ بِعِبَادَةِ الْأَوْثَانِ. وَهَذَا الزَّمَانُ حَيْثُ انْتَشَرَ الْإِسْلَامُ وَتَمَهَّدَتْ قَوَاعِدُهُ - لَا يُسَاوِيهِ فِي هَذَا الْمَعْنَى. فَلَا يُسَاوِيهِ فِي هَذَا التَّشْدِيدِ - هَذَا أَوْ مَعْنَاهُ - وَهَذَا الْقَوْلُ عِنْدَنَا بَاطِلٌ قَطْعًا. لِأَنَّهُ قَدْ وَرَدَ فِي الْأَحَادِيثِ: الْإِخْبَارُ عَنْ أَمْرِ الْآخِرَةِ بِعَذَابِ الْمُصَوِّرِينَ. وَأَنَّهُمْ يُقَالُ لَهُمْ " أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ " وَهَذِهِ عِلَّةٌ مُخَالِفَةٌ لِمَا قَالَهُ هَذَا الْقَائِلُ وَقَدْ صُرِّحَ بِذَلِكَ فِي قَوْلِهِ - عَلَيْهِ السَّلَامُ - «الْمُشَبِّهُونَ بِخَلْقِ اللَّهِ» وَهَذِهِ عِلَّةٌ عَامَّةٌ مُسْتَقِلَّةٌ مُنَاسِبَةٌ. لَا تَخُصُّ زَمَانًا دُونَ زَمَانٍ. وَلَيْسَ لَنَا أَنْ نَتَصَرَّفَ فِي النُّصُوصِ الْمُتَظَاهِرَةِ الْمُتَضَافِرَةِ بِمَعْنًى خَيَالِيٍّ.
‘কত বড় ভুলের মধ্যে আছে ওই সকল লোক, যারা এ কথা বলে যে, ছবি-প্রতিকৃতি নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটি অনুত্তম হিসেবে বিবেচিত হবে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মূর্তিপূজা ছেড়ে দেওয়ার সময় নিকট অতীত হওয়ায় ছবির ব্যাপারে কঠোরতা ছিল। আর এ যুগ, যখন ইসলাম প্রচার-প্রসার লাভ করেছে এবং নীতিমালা ও বিধান মানা (জন্মসূত্রে মুসলমান হওয়ায়) সহজ হয়ে পড়েছে তখন কঠোরতার বিষয়ে এ যুগ সে (ইসলামের প্রাথমিক) যুগের বরাবর হতে পারে না। (আল্লামা দাকিক আল-ইদ রহ. বলেন,) এ উক্তিটি আমাদের নিকট নিশ্চিতই ভ্রান্ত ও বাতিল। কেননা, হাদিস ও আসারসমূহে ছবি-প্রতিকৃতি নির্মাণকারীদের কিয়ামত দিবসে শাস্তি দেওয়ার কথা এসেছে। (শাস্তি দেওয়ার সময়) তাদেরকে বলা হবে, “তোমরা যা সৃষ্টি করেছ, তাতে প্রাণ সঞ্চার করো।” আর এটা এমন একটি ইল্লত বা কার্যকারণ, যা এ প্রবক্তার কথিত কার্যকারণের সম্পূর্ণ বিপরীত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী الْمُشَبِّهُونَ بِخَلْقِ اللَّهِ (আল্লাহর সৃষ্টি করার গুণের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী)-তে এ (ইল্লতের) ব্যাপারে স্পষ্টাকারেই বলা হয়েছে। আর এটা (অর্থাৎ تَشْبِيْهٌ بِخَلْقِ اللهِ) উপযোগী, স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যাপক একটি ইল্লত এবং তা কোনো যুগের সাথে বিশেষায়িত নয়। আর আমাদের এ অধিকার নেই যে, কেবল অলীক ও কল্পনাপ্রসূত যুক্তি দর্শিয়ে ছবি নিষেধের সুস্পষ্ট সকল নসসমূহে (অপব্যাখ্যা করে) অযাচিত হস্তক্ষেপ করব। (ইহকামুল আহকাম শারহু উমদাতিল আহকাম : ১/৩৭১-৩৭২, হা নং ১৬৬-সংশ্লিষ্ট আলোচনা, প্রকাশনী : মাতবাআতুস সুন্নাতিল মুহাম্মাদিয়্যা)
আল্লামা আহমাদ শাকির রহ. মুসনাদু আহমাদ-এর তালিকে ইবনু দাকিক রহ.-এর উপরিউক্ত বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন :
هذا ما قاله ابن دقيق العيد، منذ أكثرُ من 670 سنة، يرد على قوم تلاعبوا بهذه النصوص، في عصره أو قبل عصره. ثم يأتي هؤلاء المفتون المضللون، وأتباعهم المقلدون الجاهلون، أو الملحدون الهدموان، يعيدونها جذعة، ويلعبون بنصوص الأحاديث، كما لعب أولئك من قبل!!. ثم كان من أثر هذه الفتاوى الجاهلة، أن ملئت بلادنا بمظاهر الوثنية كاملة، فنصبت التماثيل وملئت بها البلاد، تكريمًا لذكرى من نسبت إليه وتعظيمًا!، ثم يقولون لنا إنها لم يقصد بها التعظيم!. ثم ازدادوا كفراً ووثنية، فصنعوا الأنصاب ورفعوها، تكريمًا لمن صنعت لذكراهم. وليست الأنصاب مما يدخل في التصوير، حتى يصلح لهم تأويلهم!، إنما هي وثنية كاملة صرف، نهى الله عنها في كتابه، بالنص الصريح الذي لا يحتمل التأويل.
وكان من أثر هذه الفتاوى الجاهلة أن صنعت الدولة، وهي تزعم أنها دولة إسلامية، في أمة إسلامية-: ما سمته "مدرسة الفنون الجميلة" أو "كلية الفنون الجميلة"!!، صنعت معهدًا للفجور الكامل الواضح!، ويكفي للدلالة على ذلك أن يدخله الشبان الماجنون، من الذكور والإناث، إباحيين مختلطين، لا يرد عهم دين ولا عفاف ولا غيرة، يصورون فيه الفواجر من الغانيات، اللائي لا يستحين أن يقفن عرايا، ويجلسن عرايا، ويضجعن عرايا، على كل وضع من الأوضاع الفاجرة، يظهرن مفاتن الجسد، وخفايا الأنوثة، لا يسترن شيئا، ولا يمنعن شيئاً!!، ثم يقولون لنا: هذا فن!!، لعنهم الله، ولعن من رضي هذا منهم أو سكت عليه. وإنا له وإنا إليه راجعون.
‘ইবনু দাকিক রহ. যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা (আজ হতে) ৬৭০ বছরেরও বেশি পূর্বের (ঘটনা)। তিনি ওই দলের দাবি খণ্ডন করেছেন, যারা তাঁর সময়ে বা তাঁর পূর্ব যুগে (ছবি-প্রতিকৃতিসংক্রান্ত) এ সকল নসসমূহকে খেলনার বস্তুতে রূপান্তরিত করেছিল। এরপর এ সকল (বর্তমান যুগের) পথভ্রষ্টকারী মুফতিগণ ও তাদের অন্ধভক্ত অজ্ঞ অনুসারীগণ বা (ইসলাম) ধ্বংসকারী অবিশ্বাসী নাস্তিকগণ এসে সে ফতোয়ার অবশিষ্টাংশের পুনরাবৃত্তি করছে এবং হাদিসের বাণীসমূহ নিয়ে খেলা করছে, যেমন খেলেছিল পূর্বের ওই সকল লোক। অতঃপর এ অজ্ঞতাপূর্ণ ফতোয়ার ফলাফল এ দাঁড়িয়েছে যে, আমাদের দেশ মূর্তিপূজা ও পৌত্তলিকতার দৃশ্যে পুরোপুরি ভরে গেছে। এরপর (বিভিন্ন স্থানে) মূর্তি ও ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে এবং সারাদেশ তা দিয়ে ভরে দেওয়া হয়েছে ওই সকল (মহান) লোকের স্মৃতিচারণের মর্যাদা ও সম্মানার্থে, যাদের দিকে এসব ভাস্কর্য সম্বন্ধিত। অতঃপর তারা আবার আমাদের বলে বেড়ায় যে, এদ্বারা সম্মান প্রদর্শন উদ্দেশ্য নয়। এরপর তাদের কুফরি ও মূর্তিপুজা আরও বৃদ্ধি পেল এবং (স্থানে স্থানে) অনেক ভাস্কর্য প্রতিস্থাপিত করল। উদ্দেশ্য তাদের স্মরণে সম্মান প্রদর্শন করা। এসব ভাস্কর্য (মতভেদপূর্ণ) ছবির অন্তর্ভুক্ত নয় যে, এখানে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা চলতে পারে। বরং এগুলো তো পরিপূর্ণ ও সুস্পষ্ট মূর্তি, যা নির্মাণের ব্যাপারে কুরআনে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট ভাষ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, যেখানে কোনোরূপ ব্যাখ্যা প্রযোজ্য নয়। আর এ মূর্খতায় ভরা ফতোয়ার বিষফলে এটাও হয়েছে যে, নামসর্বস্ব ইসলামি রাষ্ট্রগুলো মুসলিম জাতির মাঝে চারুকলা বিদ্যালয় (Fine arts school) চারুকলা কলেজ (Fine arts College) ইত্যাদি নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে। (এর দ্বারা) রাষ্ট্র (মূলত) সম্পূর্ণ প্রকাশ্য পাপাচার ও লাম্পট্যের একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। এটা প্রমাণের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এসব প্রতিষ্ঠানে বেহায়া ও নির্লজ্জ ধরনের যুবক-যুবতীরা ভর্তি হয়। ফলে তারা হয়ে ওঠে নৈরাজ্যবাদী ও বিশৃঙ্খল। তাদেরকে (খারাপ কাজ হতে) না দ্বীন, না সংযম, না আত্মমর্যাদাবোধ কোনো কিছুই নিবৃত্ত করতে পারে না। এসব প্রতিষ্ঠানে এরা পতিতা ও চরিত্রহীনা (নর্তকী ও) গায়িকাদের ছবি-প্রতিকৃতি অঙ্কন করে, যারা উঠতে-বসতে ও শয়নে-স্বপনে কোনো অবস্থাতেই বেহায়াপনা ও উলঙ্গ হতে লজ্জা বা দ্বিধাবোধ করে না। এরা প্রত্যেক অশ্লীল ও খারাপ স্থানে ও পরিস্থিতিতে দেহের আকর্ষণীয় অঙ্গগুলো ও নারীদের গোপন বিষয়গুলো প্রকাশ করে। কিছুই গোপন করে না এবং কোনো কিছুই হিফাজত করে না। এরপর আবার এরা আমাদের বলে, এটা একটা শিল্প ও বিদ্যা! আল্লাহ অভিশাপ দিক এবং অভিসম্পাত করুক ওই লোকদের প্রতি, যারা এদের এ সকল কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বা নীরব থাকে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।(আত-তা’লিক আলা মুসনাদি আহমাদ : ৭/১৯-২০, হা. নং ৭১৬৬ সংশ্লিষ্ট আলোচনা, প্রকাশনী : দারুল হাদিস, কায়রো)
কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যাকারীদের আলোচনার সারকথা হলো, ছবি-প্রতিকৃতি নিষেধ করা ইসলামের মৌলিক ও স্থায়ী কোনো বিধান নয়; বরং তা ছিল মূর্তিপূজার প্রভাব বলয় থেকে বের হয়ে আসার জন্য সাময়িক নিষেধাজ্ঞা মাত্র। ইসলামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার ও মূর্তিপূজার প্রতি মুসলিমদের ব্যাপক ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হওয়ার পর এ সাময়িক নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। তাই বর্তমান সময়ে ছবি-প্রতিকৃতির ব্যাপারে ইসলামের প্রাথমিক যুগের ছবি-প্রতিকৃতির নিষেধাজ্ঞা-সংবলিত হাদিসগুলো কার্যকর বলে বিবেচিত হবে না; বরং তা রহিত হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
আমরা বলব, তাদের এ ধরনের উক্তি ও যুক্তি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। কুরআন-সুন্নাহয় এর কোনোই প্রমাণ পাওয়া যায় না। যদি ছবি-প্রতিকৃতি নিষেধের বিধান রহিতই হতো, তাহলে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা পরিস্কারভাবে বলে দিতেন বা স্বীয় কাজ-কর্মে তা বুঝিয়ে দিতেন। কমপক্ষে সাহাবা ও তাবিয়িদের ফতোয়া বা আমলে অবশ্যই তা বুঝা যেত। অথচ পূর্বে বর্ণিত সাহাবা ও তাবিয়িদের আসারসমূহে এবং আরও অন্যান্য রিওয়ায়াতে আমরা দেখতে পাই, যেসব বাড়িতে ছবি-প্রতিকৃতি থাকত সাহায়ে কিরাম রা. সেসব বাড়িতে প্রবেশ করতেন না এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছবিশিল্পের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মানুষকে সতর্ক করেছেন। তাবিয়িদের হতেও এ ধরনের ফতোয়া ও আমল পাওয়া যায়। এটি একটি সুস্পষ্ট দলিল যে, ছবি-প্রতিকৃতি নিষেধের বিধান রহিত হয়নি। কারণ, রহিত হলে তাঁরা তৎসম্পর্কে আমাদের চাইতে ভালো জানতেন। তদুপরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছবি নিষেধাজ্ঞার কারণ নিজেই হাদিসে تَشْبِيْهًا بِخَلْقِ اللهِ ‘আল্লাহর সৃষ্টি করার গুণের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন’ বলে বর্ণনা দিয়েছেন। আর এটা এমন ব্যাপক একটি ইল্লত বা কার্যকারণ, যা শুধু ইসলামের প্রাথমিক যুগের সাথে বিশেষায়িত নয়; বরং তা সর্বক্ষেত্রে সর্বযুগেই বিদ্যমান। কারণ, এটা হতে পারে না যে, একটা যুগে ছবি-প্রতিকৃতি নির্মাণ করলে তা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্যতার মতো ধৃষ্টতার শামিল হবে, আর অন্য যুগে করলে তা হবে না। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে, তাদের এ ধরনের মত ও ব্যাখ্যা ভ্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
আধুনিক চিন্তাধারায় বেড়ে ওটা আরেকটি দল আবার যুক্তি-জগৎ থেকে একটু অগ্রসর হয়ে কুরআন দ্বারা ছবি-প্রতিকৃতি বৈধকরণের বৃথাই প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তাদের দলিল হলো, কুরআনের এ আয়াত :
يَعْمَلُونَ لَهُ مَا يَشَاءُ مِنْ مَحَارِيبَ وَتَمَاثِيلَ وَجِفَانٍ كَالْجَوَابِ وَقُدُورٍ رَاسِيَاتٍ
‘তারা (জিনেরা) সুলাইমানের ইচ্ছানুযায়ী দূর্গ, ভাস্কর্য, হাউজসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির ওপর স্থাপিত বিশাল ডেগ তৈরি করত।’(সুরা আস-সাবা : ১৩)
এ আয়াত হতে তারা ছবি-প্রতিকৃতি বৈধকরণের প্রমাণ এভাবে পেশ করে থাকে যে, আয়াতে বলা হয়েছে, সুলাইমান আ.-এর ইচ্ছায় জিনজাতি ছবি-প্রতিকৃতি বানিয়ে দিত। আর এ বর্ণনাটি আল্লাহ তাআলা সুলাইমান আ.-এর প্রতি স্বীয় অনুগ্রহ ও নিয়ামত দানের আলোচনায় এসেছেন। এতে বুঝা যায়, ছবি-প্রতিকৃতি বানানো নিষিদ্ধ কোনো কাজ নয়। নতুবা নবির ইচ্ছানুসারে তাঁর জন্য জিনদের ছবি-প্রতিকৃতি বানিয়ে দেওয়া তাঁর প্রতি মহান রবের কোনো অনুগ্রহ বলে বিবেচিত হতো না। আর এটা অবৈধ হলে কোনো নবি কখনো তা করতে আদেশ দিতেন না। এতে এটাই প্রমাণিত হলো, ছবি-প্রতিকৃতি বানানো বৈধ একটি কাজ।
আমরা বলব, দুটি কারণে তাদের এ প্রমাণপদ্ধতি বাতিল ও ভ্রান্ত।
এক : উক্ত আয়াতটিতে تماثيل শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যা تمثال এর বহুবচন। আমাদের এখন জানতে হবে, تمثال মানে কী? এ ব্যাপারে আল্লামা ইবনু মানজুর রহ. লিসানুল আরবে লিখেন :
والتِّمْثَالُ: الصُّورةُ، وَالْجَمْعُ التَّمَاثِيل. ومَثَّلَ لَهُ الشيءَ: صوَّره حَتَّى كأَنه يَنْظُرُ إِليه. وامْتَثَلَه هُوَ: تصوَّره. والمِثَالُ: مَعْرُوفُ، وَالْجَمْعُ أَمْثِلَة ومُثُل. ومَثَّلْتُ لَهُ كَذَا تَمْثيلًا إِذا صوَّرت لَهُ مِثَالَهُ بِكِتَابَةٍ وَغَيْرِهَا. وَفِي الْحَدِيثِ: أَشدُّ النَّاسِ عَذَابًا مُمَثِّل مِنَ المُمَثِّلين أَي مصوِّر. يُقَالُ: مَثلْت، بِالتَّثْقِيلِ وَالتَّخْفِيفِ، إِذا صوَّرت مِثالًا. والتِّمْثَالُ: الِاسْمُ مِنْهُ، وظِلُّ كُلِّ شَيْءٍ تِمْثَالُه. ومَثَّلَ الشَّيْءَ بِالشَّيْءِ: سوَّاه وشبَّهه بِهِ وَجَعَلَهُ مِثْلَه وَعَلَى مِثالِه. وَمِنْهُ الْحَدِيثِ: رأَيت الجنةَ وَالنَّارَ مُمَثَّلَتين فِي قِبْلةِ الجِدار أَي مصوَّرتين أَو مثالُهما؛ وَمِنْهُ الْحَدِيثُ: لَا تَمَثِّلُوا بنَامِيَةِ اللَّهِ أَي لَا تُشَبِّهُوا بِخَلْقِهِ وتصوِّروا مِثْلَ تَصْوِيرِهِ، وَقِيلَ: هُوَ مِنَ المُثْلة. والتِّمْثَال: اسْمٌ لِلشَّيْءِ الْمَصْنُوعِ مشبَّهاً بِخَلْقٍ مِنْ خَلْقِ اللَّهِ، وَجَمْعُهُ التَّمَاثِيل، وأَصله مِنْ مَثَّلْت الشَّيْءَ بِالشَّيْءِ إِذا قدَّرته عَلَى قَدْرِهِ، وَيَكُونُ تَمْثيل الشَّيْءِ بِالشَّيْءِ تَشْبِيهًا بِهِ، وَاسْمُ ذَلِكَ الممثَّل تِمْثال.
‘আত-তিমসাল (التِّمْثَالُ) অর্থ আকৃতি। এর বহুবচন হলো التَّمَاثِيل। (বলা হয়) مَثَّلَ لَهُ الشَّيْئَ অর্থাৎ সে তার আকৃতি বানাল, যেন সে তাকে দেখছে। امْتَثَلَه هُوَ অর্থাৎ সে তাকে কল্পনা করল। المِثَالُ এর অর্থ প্রসিদ্ধ (অর্থাৎ উদাহরণ বা প্রতিচ্ছবি)। এর বহুবচন হলো, أَمْثِلَة ও مُثُل। বলা হয়, مَثَّلْتُ لَهُ كَذَا تَمْثيلًا অর্থাৎ আমি লেখা ইত্যাদির মাধ্যমে তার আকৃতি এঁকে দিলাম। হাদিসে এসেছে : أَشدُّ النَّاسِ عَذَابًا مُمَثِّل مِنَ المُمَثِّلين অর্থাৎ মানুষের মধ্যে সর্বাধিক শাস্তিপ্রাপ্ত হবে আকৃতি নির্মাণকারী অর্থাৎ ছবি-প্রতিকৃতি অঙ্কনকারী। বলা হয়, مَثلْت (তাশদিদ সহকারে ও তাশদিদ ছাড়া) অর্থাৎ আমি প্রতিচ্ছবি অঙ্কন করলাম। আর اَلتِّمْثَالُ হলো مَثَّلَ এর ক্রিয়ামূল বিশেষ। প্রত্যেক বস্তুর ছায়া বা প্রতিবিম্বকে تمثال বলা হয়। (বলা হয়) مَثَّلَ الشَّيْئَ بِالشَّيْئِ সে তার বস্তুকে অন্য বস্তুর সমান করল বা সে তাকে অন্যের সাথে তুলনা করল বা সে তাকে অন্যের সদৃশ্য ও প্রতিচ্ছবি বানাল। এ অর্থেই হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে যে, رأَيت الجنةَ وَالنَّارَ مُمَثَّلَتين فِي قِبْلةِ الجِدار ‘আমি দেয়ালের সামনের অংশে সদৃশ্যরূপে জান্নাত-জাহান্নাম দেখেছি, অর্থাৎ তাদের আকৃতি ও প্রতিচ্ছবি।’ ...আর কারও মতে, এটা المُثْلة থেকে নির্গত। আর التِّمْثَالُ হলো, আল্লাহর কোনো সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য রেখে তৈরিকৃত বস্তু। এর বহুবচন হলো, التَّمَاثِيل। এটার মূল হলো, مَثَّلْت الشَّيْءَ بِالشَّيْءِ যখন তাকে তার অনুমান মতো পরিমাপ করলাম। বস্তুকে অন্য বস্তুর মতো বানানো অর্থ তাকে তার সদৃশ বানানো। আর ওই সদৃশ বস্তুকেই التِّمْثَالُ বলে।(লিসানুল আরব : ১১/৬১৩-৬১৪, শব্দ : مثل, প্রকাশনী : দারু সাদির, বৈরুত)
আরবি ভাষার বিখ্যাত অভিধান ‘আল-মুনজিদ-এ বলা হয়েছে :
التمثال، ج التماثيل : الصورة المصورة أو هو ما تصنعه وتصوره مشبها بخلق الله من ذوات الروح والصورة
‘আত-তিমসাল (التِّمْثَالُ) এর বহুবচন হলো التَّمَاثِيل। এর অর্থ হলো, চিত্রিত বা অঙ্কিত কোনো ছবি-প্রতিকৃতি। অথবা (এর আরেকটি অর্থ হলো) প্রাণ ও আকৃতিবিশিষ্ট কোনো সৃষ্টিজীবের সাথে মিল রেখে যে প্রতিচ্ছবি বানানো হয় (অর্থাৎ ভাস্কর্য ও ত্রিমাত্রিক মূর্তি)।’(আল-মুনজিদ ফিল-লুগাহ : পৃ. নং ৭৩৭, প্রকাশনী : দারুল মাশরিক, বৈরুত)
উপরিউক্ত উদ্ধৃতি হতে বুঝা যায়, التمثال আভিধানিকভাবে প্রত্যেক ওই আকৃতিকে বলে, যা অন্য কোনো বস্তুর আকৃতির অনুরূপ হয়। এতে কোনো পার্থক্য নেই যে, তা প্রাণীর ছবি-প্রতিকৃতি হবে বা অন্য কোনো কিছুর। অর্থাৎ শব্দটি শুধু প্রাণীর ছবি-প্রতিকৃতির সাথেই বিশেষায়িত নয়। সুতরাং আমরা উক্ত আয়াতের জবাব এভাবে দিতে পারি যে, জিনেরা সুলাইমান আ.-এর ইচ্ছানুযায়ী যেসব ছবি-প্রতিকৃতি বানাত, তা প্রাণী ছাড়া অন্যান্য বস্তু যথা- গাছপালা, তরুলতা, নদী-নালা ইত্যাদির ছবি-প্রতিকৃতি ছিল। কোনো আয়াত বা হাদিসেই আসেনি যে, জিনেরা সুলাইমান আ.-এর জন্য প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণ করত। সুতরাং এ আয়াত দ্বারা প্রাণীর ছবি-ভাস্কর্য বানানো বৈধ হওয়ার দলিল দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে নন্দিত মুফাসসির আল্লামা জারুল্লাহ জমাখশারি তাঁর বিশ্ববিখ্যাত তাফসিরগ্রন্থ 'কাশশাফ'-এ বলেন :
والتماثيل: صور الملائكة والنبيين والصالحين، كانت تعمل في المساجد من نحاس وصفر وزجاج ورخام ليراها الناس فيعبدوا نحو عبادتهم. فإن قلت: كيف استجاز سليمان عليه السلام عمل التصاوير؟ قلت: هذا مما يجوز أن تختلف فيه الشرائع، لأنه ليس من مقبحات العقل كالظلم والكذب، وعن أبى العالية: لم يكن اتخاذ الصور إذ ذاك محرّما. ويجوز أن يكون غير صور الحيوان كصور الأشجار وغيرها، لأنّ التمثال كل ما صوّر على مثل صورة غيره من حيوان وغير حيوان. أو تصوّر محذوفة الرؤوس.
‘আত-তামাসিল (التماثيل) হলো ফেরেশতা, নবি ও নেক লোকদের ছবিসমূহ। জিনেরা পিতল, স্বর্ণ, শিশা ও শ্বেতপাথর তা (তাদের ভাস্কর্য) মসজিদে বানিয়ে রাখত; যেন মানুষ তা দেখে তাদের মতো ইবাদত-উপাসনা করে। যদি তুমি প্রশ্ন করো, সুলাইমান আ. কীভাবে ছবিসমূহ বানানোর অনুমতি দিলেন? আমি বলব, এটা এ কারণে যে, হতে পারে ছবির ব্যাপারে বিভিন্ন শরিয়তের বিধান ভিন্ন ভিন্ন। কারণ, এটা (ছবি-প্রতিকৃতি বানানো) বিবেকবিবর্জিত কোনো কদর্য ও নিকৃষ্ট কাজ যথা- অত্যাচার করা, মিথ্যা বলা ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত নয় (যে, তা সব শরিয়তেই নিষিদ্ধ ও অবৈধ হতে হবে)। আবুল আলিয়া রহ. হতে বর্ণিত, সে সময়ে (সুলাইমান আ.-এর যুগে) ছবি রাখা হারাম ছিল না। আর এটাও হতে পারে যে, তা প্রাণী ছাড়া অন্যান্য বস্তু যথা- গাছপালা ইত্যাদির ছবি-প্রতিকৃতি ছিল। কারণ, التمثال বলা হয় প্রত্যেক ওই ছবি-প্রতিকৃতিকে, যা অন্য কোনো জিনিসের আকৃতির ন্যায় বানানো হয়; হোক তা প্রাণী বা প্রাণী ব্যতীত অন্য কিছু। অথবা এটাও হতে পারে যে, মাথাকাটা অবস্থায় প্রাণীর ছবি-প্রতিকৃতি বানানো হতো।’ (আল-কাশশাফ আন হাকায়িকি গাওয়ামিজিত তানজিল : ৩/৫৭২, সুরা সাবা : ১৩, প্রকাশনী : দারুল কিতাবিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)
জিনেরা যে সুলাইমান আ.-এর জন্য প্রাণী ব্যতীত অন্য কিছুর ছবি-প্রতিকৃতি বানাত, তার পক্ষে শক্তিশালী একটি নিদর্শন হলো, তাঁর সময়ে শরয়ি বিধানের কিতাব ছিল তাওরাত। আর তাওরাতে ছবি-প্রতিকৃতি আঁকা হারাম বলা হয়েছে। এমনকি বর্তমানে বিদ্যমান বিকৃত তাওরাতে এখন পর্যন্ত সে বিধান লিখা আছে। (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম : ৪/৯৬, প্রকাশনী : মাকতাবা দারুল উলুম, করাচি)
আর এটা প্রসিদ্ধ যে, সুলাইমান আ. তাওরাতের অনুসরণ করতেন। সুতরাং এটা হতে পারে না যে, তাওরাত যা হারাম করেছে, একজন নবি তা তৈরির আদেশ দেবেন। তাই এটাই স্বাভাবিক যে, জিনেরা যে ছবি-প্রতিকৃতি বানাত, তা ছিল প্রাণহীন বস্তু যথা- গাছপালা, ফুল-ফল, প্রাকৃতিক দৃশ্য ইত্যাদির ছবি-প্রতিকৃতি। আবুল আলিয়া রহ. হতে সুলাইমান আ.-এর সময়ে ছবি-প্রতিকৃতি হারাম না হওয়ার যে বর্ণনা পাওয়া যায়, তা ছবি রাখা সংক্রান্ত বর্ণনা, বানানো ও তৈরি করা সংক্রান্ত নয়। কারণ, বর্ণনায় اتخاذ الصور এসেছে, যার অর্থ ছবি-প্রতিকৃতি ব্যবহার করা বা রাখা। আর এটা সম্ভব যে, কোনো জিনিস বানানো হারাম হলেও ব্যবহার হারাম হবে না। যেমন অস্পষ্ট ছোট ছবি বানানো হারাম ঠিকই, কিন্তু তা রাখা হারাম নয়।
দুই : যদি একথা মেনে নেওয়া হয় যে, জিনেরা সুলাইমান আ.-এর নির্দেশে প্রাণীর ছবি-প্রতিকৃতিই বানাত তাহলে এর জবাব হলো, এটা আমাদের পূর্বের শরিয়ত। আর পূর্বেকার শরিয়ত দ্বারা প্রমাণ পেশ করা তখনই সহিহ হবে, যখন এর বিপরীতে আমাদের শরিয়তের কোনো বিধান না পাওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে ড. আবদুল করিম জাইদান রহ. 'আল-আজিজু ফি উসুলিল ফিকহ'-এ বলেন :
النوع الثاني: أحكام قصها الله في قرآنه، أو بينها الرسول صلى الله عليه وسلم في سنته وقام الدليل من شريعتنا على نسخها في حقنا أي أنها خاصة بالأمم السابقة، فهذا النوع لا خلاف في أنه غير مشروع في حقنا.
‘দ্বিতীয় প্রকার হলো, এমন বিধিবিধান, যা আল্লাহ তাআলা কুরআনে বা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে বর্ণনা করেছেন এবং আমাদের জন্য সে বিধান রহিত হওয়ার ব্যাপারে আমাদের শরিয়তে প্রমাণ রয়েছে যে, উক্ত বিধান শুধু পূর্বেকার উম্মাতদের জন্যই বিশেষিত ও নির্দিষ্ট। এ জাতীয় পূর্বেকার শরিয়তের ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই যে, আমাদের জন্য তা (মানা) শরিয়তবহির্ভূত (অর্থাৎ তা মানা ও অনুসরণ করা আমাদের জন্য বৈধ নয়)।’(আল-অজিজ ফি উসুলিল ফিকহ : পৃ. নং ২৬৪, মূলনীতি নং ২৪৮, প্রকাশনী : মুআসসাসাতু কুরতুবা, কায়রো)
এ মূলনীতির আলোকে আমরা বলতে পারি যে, ছবি-প্রতিকৃতি আঁকা ও বানানোর ব্যাপারে আমাদের শরিয়তে দ্ব্যর্থহীন ও সুস্পষ্ট ভাষ্য রয়েছে। সুতরাং আমাদের পূর্বেকার শরিয়তের ওপর ভিত্তি করে ছবি-প্রতিকৃতিকে বৈধ করার কোনো অবকাশ নেই।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا
‘তোমাদের প্রত্যেক জাতির জন্যই আমি আলাদা শরিয়ত ও পথ বানিয়েছি।’(সুরা আল-মায়িদা : ৪৮)
এখানে জবাবটি এভাবেও দেওয়া যায় যে, জিনেরা সুলাইমান আ.-এর নির্দেশে ছবি-প্রতিকৃতি ঠিকই বানাত, কিন্তু তা ছিল মাথাকাটা। কারণ, ছবি-প্রতিকৃতি আঁকা বা বানানো নাজায়িজ হলেও মাথাবিহীন হলে তা সব শরিয়তেই জায়িজ; যেমনটি আল্লামা জারুল্লাহ জমাখশারি বলেছেন। সুতরাং এই জবাব অনুসারে সুলাইমান আ.-এর সময় ছবি-প্রতিকৃতি অবৈধ ছিল। কিন্তু তিনি এ ধরনের অবৈধ ছবি-প্রতিকৃতি বানানোর নির্দেশ দেননি; বরং তাঁর নির্দেশিত ছবি-প্রতিকৃতিগুলো ছিল মাথাকাটা, যা সব শরিয়তেই বৈধ।
পূর্বের সংক্ষিপ্ত আলোচন থেকে প্রমাণ হলো যে, ভাস্কর্য বানানো ইসলামে সুস্পষ্ট হারাম। এ ব্যাপারে উম্মাহর কারও কোনো মতভেদ নেই। অর্থাৎ এট একটি ইজমায়ি বা ঐকমত্য-সমর্থিত মাসআলা। এ মাসআলায় কেবল তারাই ভিন্নমত পোষণ করতে পারে, যাদের কুরআন-সুন্নাহর সাথে ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই, আর না আছে ইজমা, কিয়াস, ইজতিহাদ ও উসুলের ব্যাপারে সামান্য ধারণা। এরকম ইজমায়ি বিষয়ে মূলত দলিলের দরকার পড়ে না। তবুও দুর্বল মুসলিমরা যেন কোনো অপব্যাখ্যা দ্বারা প্রতারিত না হয়, সেজন্য আজকের এ সংক্ষিপ্ত আলোচনা। এতকিছুর পরও যদি বিষয়টি কারও বুঝে না আসে, এরপরও যদি কেউ এটা নিয়ে মতভিন্নতা করে তাহলে তার জন্য আল্লাহর কাছে হিদায়াতের দুআ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বস্তুত কারও অন্তরে যখন মোহর মারা হয় তখন দুনিয়ার তাবৎ দলিল সামনে এনে দিলেও তা তার হিদায়াতের জন্য যথেষ্ট হয় না। আমরা হিদায়াত পাওয়ার পর পুনরায় গোমরাহির পথে চলে যাওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।
*****
সমাপ্ত
✍️
Collected
আল্লাহ তাআলা লেখককে জাযায়ে খাইর দান করুন। আমীন
Comment