আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।।
শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ৫ম পর্ব
===================
“আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।।
শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ৫ম পর্ব
===================
খ. আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, “কাফেররা সর্বদা মুসলমানদের প্রতি শত্রুতাপরায়ণ হয়ে থাকে।”
মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
مَّا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَلَا الْمُشْرِكِينَ أَن يُنَزَّلَ عَلَيْكُم مِّنْ خَيْرٍ مِّن رَّبِّكُمْ … ﴿البقرة: ١٠٥﴾
“আহলে-কিতাবদের মধ্যে যারা কাফের ও মুশরিকরা চায় না যে, তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি কোনো কল্যাণ অবতীর্ণ হোক।” (সূরাবাকারা: ১০৫)
وَدَّ كَثِيرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّونَكُم مِّن بَعْدِ إِيمَانِكُمْ كُفَّارًا حَسَدًا مِّنْ عِندِ أَنفُسِهِم … ﴿البقرة: ١٠٩﴾
“আহলে কিতাবদের অনেকেই প্রতিহিংসাবশত চায় যে, তোমরা মুসলমান হওয়ার পর তোমাদেরকে যদি কোনো রকমে কাফের বানিয়ে দিতে পারত।” (সূরাবাকারা: ১০৯)
তিনি আরও ইরশাদ করেছেন-
هَا أَنتُمْ أُولَاءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِالْكِتَابِ كُلِّهِ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا عَضُّوا عَلَيْكُمُ الْأَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِ قُلْ مُوتُوا بِغَيْظِكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ ﴿آلعمران: ١١٩﴾ إِن تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ ﴿آلعمران: ١٢٠﴾
“দেখ, তোমরাই তাদের ভালবাসো। কিন্তু তারা তোমাদের প্রতি মোটেও সদভাব পোষণ করে না। আর তোমরা সমস্ত কিতাবেই বিশ্বাস কর; অথচ তারা যখন তোমাদের সংস্পর্শে আসে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের উপর বিদ্বেষবশত আঙুল কামড়াতে থাকে। বলুন, তোমাদের আক্রোশে তোমরাই মর। আর অন্তরে যা কিছু আছে, আল্লাহ তা ভালোই জানেন। তোমাদের যদি কোনো মঙ্গল হয়; তাহলে তা তাদেরকে কষ্ট দেয়। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয়; তাহলে তারা আনন্দিত হয়। তোমরা যদি ধৈর্যশীল হও এবং মুত্তাকী হও; তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কিছুই করতে পারবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে, সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে।” (সূরাআলে-ইমরান: ১১৯-১২০)
আল্লামা কুরতুবী রহ. বলেন,
والمعنى في الآية: أن من كانت هذه صفته من شدة العداوة والحقد والفرح بنزول الشدائد على المؤمنين لم يكن أهلاً لأن يتخذ بطانة، لاسيما في هذا الأمر الجسيم من الجهاد الذي هو ملاك الدنيا والآخرة
“আয়াতের উদ্দেশ্য হলো, যার মধ্যে শত্রুতা, বিদ্বেষ, মু’মিনরা বিপদে পড়লে খুশি হওয়া- এসব থাকবে, সে কখনো অন্তরঙ্গ বন্ধু হওয়ার যোগ্য নয়। বিশেষত জিহাদের মতো এ গুরুত্বপূর্ণ কাজে, যেটি দুনিয়া-আখিরাতের খুঁটি স্বরূপ।” (তাফসীরে কুরতুবী, ৪/১৮১-১৮৩ পৃ.)
গ. তেমনিভাবে আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, “যতদিন মু’মিনগণ ঈমানের উপর থাকবেন, ততদিন তারা মু’মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হবে না।”
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَىٰ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم بَعْدَ الَّذِي جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ ﴿البقرة: ١٢٠﴾
“ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানরা কখনোই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রদর্শিত পথই প্রকৃত পথ। যদি আপনি তাদের আকাক্সক্ষাসমূহের অনুসরণ করেন, ঐ জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে; তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী থাকবে না।” (সূরাবাকারা: ১২০) ঘ. বরং তারা ঈমান আনার পর মু’মিনদেরকে আবার কাফের বানিয়ে ফেলতে চায়:
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تُطِيعُوا فَرِيقًا مِّنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ يَرُدُّوكُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ كَافِرِينَ ﴿آلعمران: ١٠٠﴾
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আহলে কিতাবদের কোনো দলের আনুগত্য কর; তাহলে তোমাদের ঈমান আনার পর তারা তোমাদেরকে কাফেরে পরিণত করে ছাড়বে।” (সূরাআলে-ইমরান: ১০০)
তিনি আরও ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تُطِيعُوا الَّذِينَ كَفَرُوا يَرُدُّوكُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ فَتَنقَلِبُوا خَاسِرِينَ ﴿آلعمران: ١٤٩﴾
“হে মু’মিনগণ! তোমরা যদি কাফেরদের আনুগত্য কর; তাহলে তারা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে দেবে; তাতে তোমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়বে।” (সূরাআলে-ইমরান: ১৪৯)
ইবনে জারীর ত্ববারী রহ. বলেন, এ আয়াত দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য হলো, হে লোকসকল! যারা আল্লাহর অঙ্গীকার, তাঁর শাস্তি ও আদেশ-নিষেধের ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সত্যবাদী জেনেছ, إِن تُطِيعُوا الَّذِينَ كَفَرُوا “তোমরা যদি কাফেরদের আনুগত্য কর” অর্থাৎ, যেসব ইয়াহুদী ও নাসারা তোমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতকে অস্বীকার করে, তারা তোমাদেরকে যা আদেশ-নিষেধ করে; তোমরা যদি সে ক্ষেত্রে তাদের মতামতকে গ্রহণ কর এবং যে বিষয়ে তোমরা ধারণা কর যে, তারা তোমাদের কল্যাণকামী, উক্ত ব্যাপারে যদি তাদের কাছ থেকে কল্যাণ কামনা কর; তবে يَرُدُّوكُمْ عَلٰى أَعْقَابِكُمْ “ওরা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে দেবে” অর্থাৎ আল্লাহ বলেন, তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর মুরতাদ বানিয়ে ছাড়বে। ইসলাম গ্রহণের পর আল্লাহ, তাঁর নিদর্শনাবলি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অস্বীকার করিয়ে ছাড়বে। ফলে فَتَنقَلِبُوا خَاسِرِينَ“তাতে তোমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়বে” অর্থাৎ তোমাদেরকে যে ঈমান ও দ্বীনের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা পথ প্রদর্শন করেছেন, তা থেকে তোমরা সরে যাবে। خَاسِرِينَ “ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে” অর্থাৎ তোমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে, নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করেছ এবং নিজেদের দ্বীন থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছ। খুইয়েছ তোমাদের দুনিয়া ও আখিরাত। এ আয়াতের মাধ্যমে মু’মিনদেরকে কাফেরদের মতের আনুগত্য করতে এবং তাদের ধর্মের কল্যাণ কামনা করতে নিষেধ করা হয়েছে।” (তাফসীরে ত্ববারী, ৪/১২২-১২৩ পৃ.)
আরও পড়ুন