আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।।
শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ৯ম পর্ব
===================
“আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।।
শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ৯ম পর্ব
===================
০৫. কাফেরদের নিদর্শন ও কুসংস্কারসমূহকে সম্মান জানানো, কাফের-মুরতাদদের সাথে তাদের ভ্রষ্টতায় একমত পোষণ করা এবং সেগুলোর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা:
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন-
فصل فى الولاية والعداوة؛ فإن المؤمنين أولياء الله، وبعضهم أولياء بعض، والكفار أعداء الله وأعداء المؤمنين، وقد أوجب الموالاة بين المؤمنين وبين أن ذلك من لوازم الإيمان، ونهى عن موالاة الكفار، وبين أن ذلك منتف فى حق المؤمنين وبين حال المنافقين فى موالاة الكافرين.
وقال: (إن الذين ارتدوا على أدبارهم من بعد ما تبين لهم الهدى الشيطان سول لهم وأملى لهم، ذلك بأنهم قالوا للذين كرهوا ما نزل الله سنطيعكم فى بعض الأمر والله يعلم إسرارهم)، وتبين أن موالاة الكفار كانت سبب ارتدادهم على أدبارهم.
ولهذا ذكر فى سورة المائدة أئمة المرتدين عقب النهى عن موالاة الكفار؛ قوله : {ومن يتولهم منكم فإنه منهم} ، وقال : {يا أيها الرسول لا يحزنك الذين يسارعون فى الكفر من الذين قالوا آمنا بأفواهم ولم تؤمن قلوبهم ومن الذين هادوا سماعون للكذب سماعون لقوم آخرين لم يأتوك يحرفون الكلم من بعد مواضعه يقولون إن أوتيتم هذا فخذوه وإن لم تؤتوه فاحذروا}، فذكر المنافقين والكفار المهادنين، وأخبر أنهم يسمعون لقوم آخرين لم يأتوك وهو استماع المنافقين والكفار المهادنين للكفار المعلنين الذين لم يهادنوا.
كما أن فى المؤمنين من قد يكون سماعاً للمنافقين، كما قال: {وفيكم سماعون لهم}، وبعض الناس يظن أن المعنى سماعون لأجلهم بمنزلة الجاسوس أى يسمعون ما يقول وينقلونه اليهم.
وإنما المعنى فيكم من يسمع لهم أى يستجيب لهم ويتبعهم، كما فى قوله سمع الله لمن حمده استجاب الله لمن حمده أى قبل منه، يقال فلان يسمع لفلان أى يستجيب له ويطيعه.
فمن كان من الأمة موالياً للكفار من المشركين أو أهل الكتاب ببعض أنواع الموالاة ونحوها -مثل إتيانه أهل الباطل واتباعهم فى شئ من مقالهم وفعالهم الباطل- كان له من الذم والعقاب والنفاق بحسب ذلك.
والله تعالى يحب تمييز الخبيث من الطيب والحق من الباطل، فيعرف أن هؤلاء الأصناف منافقون أو فيهم نفاق، وإن كانوا مع المسلمين، فإن كون الرجل مسلماً فى الظاهر لا يمنع أن يكون منافقاً فى الباطن.
فإن المنافقين كلهم مسلمون فى الظاهر، والقرآن قد بين صفاتهم وأحكامهم، واذا كانوا موجودين على عهد رسول الله -صلى الله عليه وسلم- وفى عزة الاسلام مع ظهور أعلام النبوة ونور الرسالة، فهم مع بعدهم عنهما أشد وجوداً، لاسيما وسبب النفاق هو سبب الكفر وهو المعارض لما جاءت به الرسل.
.
“বন্ধুত্ব ও শত্রুতা অধ্যায়: মু’মিনগণ আল্লাহর বন্ধু। তারা পরস্পরের বন্ধু। আর কাফেররা আল্লাহরও শত্রু, মু’মিনদেরও শত্রু। মু’মিনদের মাঝে পারস্পরিক বন্ধুত্ব আবশ্যক। এটি ঈমানের আবশ্যকীয় শর্ত। কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ। মু’মিনদের মাঝে এটি পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে, মুনাফিকদের প্রকৃত অবস্থাই হলো কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَىٰ أَدْبَارِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَىٰ لَهُمْ ﴿محمد: ٢٥﴾ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا لِلَّذِينَ كَرِهُوا مَا نَزَّلَ اللَّهُ سَنُطِيعُكُمْ فِي بَعْضِ الْأَمْرِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِسْرَارَهُمْ ﴿محمد: ٢٦﴾
“নিশ্চয়ই যারা তাদের নিকট সৎপথ ব্যক্ত হওয়ার পর তা থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে, শয়তান তাদের কাজকে সুন্দর করে দেখায় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশা দেয়। এটা এজন্য যে, যারা আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব অপছন্দ করে; তারা তাদেরকে বলে, আমরা কোনো কোনো ব্যাপারে তোমাদের কথা মান্য করব। আল্লাহ তাদের গোপন অভিসন্ধি অবগত আছেন।” (সূরা মুহাম্মাদ: ২৫-২৬)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে বলেছেন, কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করা তাদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে মুরতাদ হওয়ার কারণ ছিল।
তাই সূরা মায়েদায় কাফেরদের সাথে বন্ধুত্বে নিষেধাজ্ঞার পর মুরতাদ সর্দারদের আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ﴿المائدة: ٥١﴾
“তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।”(সূরামায়িদা: ৫১)
তিনি আরো ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ لَا يَحْزُنكَ الَّذِينَ يُسَارِعُونَ فِي الْكُفْرِ مِنَ الَّذِينَ قَالُوا آمَنَّا بِأَفْوَاهِهِمْ وَلَمْ تُؤْمِن قُلُوبُهُمْ وَمِنَ الَّذِينَ هَادُوا سَمَّاعُونَ لِلْكَذِبِ سَمَّاعُونَ لِقَوْمٍ آخَرِينَ لَمْ يَأْتُوكَ يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ مِن بَعْدِ مَوَاضِعِهِ يَقُولُونَ إِنْ أُوتِيتُمْ هَٰذَا فَخُذُوهُ وَإِن لَّمْ تُؤْتَوْهُ فَاحْذَرُوا … ﴿المائدة: ٤١﴾
“হে রাসূল! তাদের জন্য দুঃখ করবেন না, যারা দৌড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয়; যারা মুখে বলে, আমরা মু’মিন; অথচ তারা অন্তরে ঈমান আনেনি এবং যারা ইয়াহুদী, মিথ্যা বলার জন্য তারা গুপ্তচরবৃত্তি করে। তারা অন্য দলের গুপ্তচর, যারা আপনার কাছে আসেনি। তারা বাক্যকে স্বস্থান থেকে পরিবর্তন করে। তারা বলে, যদি তোমরা এ নির্দেশ পাও; তবে কবুল করে নিও এবং যদি এ নির্দেশ না পাও, তবে বিরত থেকো।”(সূরামায়িদা: ৪১)
এরপর মুনাফিক ও চুক্তিবদ্ধ কাফেরদের আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা অন্যদের কথা শোনে। আপনার কাছে আসে না। অর্থাৎ, মুনাফিক ও চুক্তিবদ্ধ কাফেররা চুক্তির বাহিরে গিয়ে প্রকাশ্য কাফেরদের কথা মান্য করে।
যেমন, মু’মিনদের মধ্যে অনেকেই মাঝে মধ্যে মুনাফিকদের কথা শোনে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
وَفِيكُمْ سَمَّاعُونَ لَهُمْ ﴿التوبة: ٤٧﴾
“আর তোমাদের মাঝে রয়েছে তাদের অনুগতরা।” (সূরাতাওবা: ৪৭)
অনেকে মনে করেন, এখানে سَمَّاعُونَঅর্থ গুপ্তচর। যে শোনে এবং তাদের কাছে বলে দেয়।
বরং সঠিক অর্থ হলো, তোমাদের মাঝে তাদের কথা শ্রবণকারী আছে। অর্থাৎ, তাদের ডাকে সাড়া দেয় এবং আনুগত্য করে। যেমন, سمع الله لمن حمده বাক্যে سمع শব্দের অর্থ সাড়াপ্রদান। যে আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন। অর্থাৎ তার দুআ কবুল করেন।
আরবিতে বলা হয়, فلان يسمع لفلان أى يستجيب له ويطيعهঅর্থাৎ, অমুক অমুকের কথা শোনে। তথা তার ডাকে সাড়া দেয় এবং আনুগত্য করে।
সুতরাং মুসলমানদের কেউ যদি কাফের-মুশরিকদের বন্ধু হয়, বন্ধুত্বের ধরন যা-ই হোক না কেন, (যেমন বাতিলের কাছে আসা এবং তাদের বাতিল কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ডে আনুগত্য করা) সে সে-মতে শাস্তি, তিরস্কার ও মুনাফেকীর অধিকারী হবে।
আল্লাহ তা‘আলা ভালোকে মন্দ থেকে পৃথক করতে চান, হক্বকে বাতিল থেকে পৃথক করতে চান। যদিও এসব লোক মুসলমানদের সাথে থাকুক, এরা মুনাফিক হিসেবে চিহ্নিত হবে অথবা বুঝা যাবে তাদের মাঝে নিফাক রয়েছে। কারণ, কেউ বাহিরে মুসলমান হলেও অভ্যন্তরীণভাবে মুনাফিক হতে কোনো বাধা নেই।
কারণ, সমস্ত মুনাফিকই বাহ্যত মুসলমান হয়ে থাকে। কুরআন মাজীদ তাদের বৈশিষ্ট্য ও বিধান বলে দিয়েছে। যদি রাসূলের যুগে, নবুওয়াতের নিদর্শনাদি এবং রিসালাতের আলো প্রকাশিত হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ইসলামের বিজয়ের সময়ে মুনাফিক থাকতে পারে, এর পরের যুগে তো এদের অস্তিত্ব আরও বাড়বে। বিশেষত, নিফাকের যে কারণ কুফরের একই কারণ। তা হলো, রাসূলগণ যা এনেছেন তার বিরোধিতা করা।” (মাজমূউল ফাতাওয়া, ২৮/১৯০-২০২ পৃ.)