আল হিকমাহ মিডিয়া পরিবেশিত
“আল আকসা পুনরুদ্ধারের ফরয আদায় করুন ” ।।
মুঈনুদ্দীন শামী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে ৩য়পর্ব
===================
“আল আকসা পুনরুদ্ধারের ফরয আদায় করুন ” ।।
মুঈনুদ্দীন শামী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে ৩য়পর্ব
===================
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৈনিক হও! …বিশ্বময় সেনাবাহিনীতে কর্মরত আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন মুসলিম সৈনিক ও অফিসারদের প্রতি
০4 জুন ২০২৩ এ একজন মিশরীয় সৈনিক মুহাম্মদ সালাহ ইবরাহীম, ইসরাঈল-মিশর সীমান্তে তিনজন ইসরাঈলি সৈন্যকে হত্যা করেন, অতঃপর শাহাদাতের সুধা পান করে চিরস্থায়ী জান্নাতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান। তারপর ১8 অক্টোবর ২০২৩ ‘তুফানুল আকসা’ যুদ্ধ শুরুর দ্বিতীয় দিন একজন মিশরীয় পুলিশ অফিসার মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরে তিনজন ইসরাঈলি ইহুদীকে তার ব্যক্তিগত পিস্তল দিয়ে গুলি করে। ঘটনাস্থলেই দুই ইহুদী নিহত হয় এবং একজন আহত হয়ে সাহায্যের জন্য ডাকতে থাকে, অথচ এই ইহুদীদের সাথে আসা মহিলাকে এই মর্দে মুজাহিদ কিছুই বলেননি।
এ দুটি সাম্প্রতিক কালের ঘটনা। এর আগে মার্কিন সেনাবাহিনীর সৈনিক, ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মেজর নিদাল হাসান মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ফোর্ট হুড, টেক্সাসে তার গ্লক/১৭ পিস্তল দিয়ে প্রায় ৫০ জন আমেরিকান সৈন্যকে গুলি করে ১৩ জন সৈন্যকে হত্যা করেছিল। সৌদি ফাইটার পাইলট মুহাম্মদ সাঈদ শিমরানি পেনসাকোলায় আমেরিকান নৌ ঘাঁটিতে ০৩ জন মার্কিন সেনাকে হত্যা করেন অতঃপর নিজে শাহাদাতের সুধা পান করে জান্নাত পানে রওয়ানা করেন।
পাকিস্তানে পাঞ্জাব পুলিশের সৈনিক গাজী মুমতাজ হুসাইন কাদেরি ২০১১ সালের ০4 জানুয়ারী তারিখে পাঞ্জাবের গভর্নর শাতেমে রাসূল সালমান তাসিরকে সরকারি লাইসেন্সকৃত ক্লাশিনকোভ থেকে 27টি গুলি ছুঁড়ে গোস্তাখে রাসূলকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেন।
জিসান রফিক এবং ওয়াইস জাখরানি, সমুদ্রে আমেরিকান কমান্ডের অধীনে ctf অভিযানে যুক্ত ছিল। তারা ভারত মহাসাগরে আমেরিকান নৌ বহরে আক্রমণ করার চেষ্টা করতে গিয়ে বেশ কিছু আমেরিকান গোলাম সৈন্যকে হত্যা করেছিল। এই কয়েকটি ঘটনাও উদাহরণস্বরূপ পেশ করলাম, নতুবা ইতিহাসে এ রকম আরও অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে।
এসবই মুসলিম সৈন্য কর্তৃক শত্রুকে আক্রমণ করার সর্বোত্তম উদাহরণ। তাই সেই সমস্ত মুসলিম সৈনিক ও অফিসারদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছি- যাদের অন্তরে ঈমানের স্ফুলিঙ্গ প্রজ্জ্বলিত আছে - মহান আল্লাহ আপনাদের অস্ত্র চালনার যোগ্যতা দিয়েছেন। অস্ত্র আপনাদের হাতে বা কয়েক মিটার দূরত্বেই থাকে। দীনের শত্রু বিশেষ করে আমেরিকান এবং ইহুদীদের কাছেও আপনাদের সহজ প্রবেশাধিকার রয়েছে। এমতাবস্থায় ইসলামের বিরুদ্ধে চলমান বিশ্বযুদ্ধে ইসলামপন্থিদেরকে সমর্থন করুন।আমেরিকান ও ইহুদিীদের জন্য তাদের নিরাপদ সামরিক ব্যারাকে বসবাস করাকেও হারাম করে দিন।নিশ্চয়এতেই রয়েছে দুনিয়ার সম্মান এবং পরকালের সফলতা!
কলম সৈনিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের প্রতি
মিডিয়া ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের গুরুত্ব এবং কলমের শক্তি সম্পর্কে, দরদী কলম সৈনিক ও মিডিয়া ব্যক্তিবর্গের (মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রভাব বিস্তারকারী ভাই-বোনদের) তুলনায় আর কে বেশি সচেতন! প্রিয়নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরকতময় বাণী:
جاهِدوا المُشركينَ بأَموالِكُم وأَنفُسِكُم وأَلسِنَتِكُم.
“তোমরা তোমাদের জান-মাল দিয়ে এবং জবানের মাধ্যমে মুশরিকদের (কাফেরদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর।” (আবু দাউদ, দারেমী, নাসায়ী, আহমাদ)
অর্থনৈতিক বয়কট
যতটা সম্ভব মুসলমানদের স্ব-নির্মিত পণ্য ব্যবহার করা উচিত। চাই তা খাদ্য দ্রব্য হোক, পোশাক হোক, যানবাহন অথবা যোগাযোগের সরঞ্জাম (মোবাইল এবং কম্পিউটার) হোক। আর যদি স্ব-নির্মিত জিনিসপত্র পাওয়া না যায়, তবে যারা আমেরিকার চেয়ে কম বিপজ্জনক শত্রু, তাদের জিনিসপত্র ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে। নিশ্চয়ই আমরা ইচ্ছা করলেই আমাদের আত্মচাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে শত্রুর ক্ষতি করতে পারি। আমরা কোকাকোলার পরিবর্তে স্থানীয় ব্র্যান্ডের পানীয় পান করতে পারি। আমেরিকান অ্যাপল এর পরিবর্তে জাপানি বা কোরিয়ান স্যামসাং ব্যবহার করতে পারি। গুচি, আরমানি, লেভিস, পোলো, অ্যাডিডাস এবং নাইকির পরিবর্তে স্থানীয় ব্র্যান্ড এবং স্থানীয় দর্জিদের তৈরি পোশাক পরিধান করতে পারি।
গাজার জনগণের বিরুদ্ধে চলমান ইসরাঈলি যুদ্ধে ইসরাঈলি ইহুদী সৈন্যদের বিনামূল্যে খাবার সরবরাহকারী ম্যাকডোনাল্ডের পরিবর্তে আপনি আপনার শহরের কোনো ফাস্ট ফুড দোকান কিংবা আপনার দেশের স্থানীয় ফাস্ট ফুড কোম্পানির বার্গার, চিপস খেতে পারেন।
নিজের প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী আমেরিকান, ইউরোপীয় ও ইসরাঈলি পণ্য বর্জন করলে কুফরের অর্থনীতি দুর্বল হবে। অবশ্য যে মুসলমান এই বয়কটের যোগ্যতা রাখে না অথবা যার প্রয়োজন দুশমনের ব্যান্ডের সাথে সম্পৃক্ত তার ব্যাপারে আমরা মুসলিম ভাইদের কাছে অজুহাত পেশ করবো।
দোয়া জারি রাখা
হাদীস শরীফে বলা হয়েছে-
الدُّعاءُ سلاحُ المؤمنِ
“দোয়া মুমিনের অস্ত্র (হাতিয়ার)।” (মুসতাদরাকে হাকেম)
আজকের এই নিষ্ক্রিয়তার যুগে, টিভি পর্দার সামনে সোফা ও বালিশে হেলান দিয়ে কখনও কখনও আমরা আমাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে শুধু দোয়াকেই মূল কাজ বলে মনে করি। এই মনোভাব শরীয়ত ও যুক্তি অনুযায়ী সঠিক নয়। কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থে অন্য কোনো পথ খুঁজে পান না, তাদের জন্য ফিলিস্তিনের জনগণ সহ সারা বিশ্বের মুসলমান ও নির্যাতিতদের জন্য দোয়া করা, কুনুতে নাযিলার আয়োজন করা অনেক বড় ইবাদত। প্রকৃতপক্ষে এটি অনেক বড় অস্ত্র।
তাই আমাদের ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত মজলিসগুলোতে দোয়া অবশ্যই করতে হবে। নিজে দোয়া করুন, আপনার পরিবার ও সন্তানদের দোয়া করতে বলুন। নিজেদের মসজিদগুলোতেও এই দোয়া চালু করুন। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কোনো দোয়া প্রত্যাখ্যান করেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚ ﴿٦٠﴾
“তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব।” (সূরা গাফির ৪০: ৬০)
বিশেষ করে তাহাজ্জুদের সময় এবং জুমআর দিন দোয়া কবুলের বিশেষ সময়ে অবশ্যই দোয়া করবেন।
اللَّهمَّ اهدِنا فيمَنْ هدَيْتَ وعافِنا فيمَنْ عافَيْتَ وتولَّنا فيمَنْ تولَّيْتَ وبارِكْ لنا فيما أعطَيْتَ وقِنا شرَّ ما قضَيْتَ إنَّك تَقضي ولا يُقضَى عليكَ إنَّه لا يذِلُّ مَن والَيْتَ ولا يَعِزُّ مَن عادَيْتَتبارَكْتَ وتعالَيْتَ.
“হে আল্লাহ, আমাদেরকে হেদায়াত দান করুন, তাদের মাঝে যাদেরকে আপনি হেদায়াত দান করেছেন। আমাদেরকে নিরাপত্তা দান করুন, তাদের মাঝে যাদেরকে আপনি নিরাপত্তা দান করেছেন। আমাদের দায়িত্বভার গ্রহণ করুন, তাদের মাঝে যাদের দায়িত্বভার আপনি গ্রহণ করেছেন। আপনি আমাদেরকে যা কিছু প্রদান করেছেন, তাতে বারাকাহ দিন। আমাদেরকে রক্ষা করুন, আপনার মন্দ ফায়সালা থেকে। নিশ্চয়ই আপনি ফায়সালা করেন, আপনার উপর কেউ ফায়সালা করতে পারে না। আপনি যার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, তাকে কেউ অপদস্থ করতে পারে না। আপনি যার সাথে শক্রতা করেন, তাকে কেউ ইজ্জত দিতে পারে না। আপনি বরকতময় এবং সুমহান।” (সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ প্রভৃতি)
اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الكِتَابِ، ومُجْرِيَ السَّحَابِ، وهَازِمَ الأحْزَابِ، اهْزِمْهُمْ وانْصُرْنَا عليهم.
“হে আল্লাহ, কুরআন অবতীর্ণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, সৈন্য দলকে পরাজয় দানকারী, আপনি কাফের সম্প্রদায়কে পরাজিত করুন এবং আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন।” (সহীহ বুখারী: ৩০২৪, সহীহ মুসলিম: ১৭৪২)
উলামায়ে কেরামের নিকট অনুরোধ
সৃষ্টিজীবের পথ প্রদর্শক ও দিশারী হলেন নবী আলাইহিমুস সালাম। নবীগণের ওয়ারিশ হলেন উলামায়ে কেরাম। যেমন- হাদীস শরীফে বলা হয়েছে:
إنَّ العُلماءَ ورثةُ الأنبياءِ
“আলেমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী।”(আবু দাউদ ৩৬৪৩, তিরমিযী: ২৬৮২)
অর্থাৎ উলামায়ে কেরাম মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত পথ প্রদর্শক। আজ কাফের বিশ্ব বিশেষ করে অভিশপ্ত ইহুদীদের বিরুদ্ধে উম্মাহকে সংগঠিত করে দাঁড় করানো, ইহুদী ও তাদের মদদ দাতাদের, বিশেষ করে আমেরিকার আসল চেহারা মুসলিম উম্মাহর কাছে প্রকাশ করা, নিজেদের ফতোয়া ও খুতবার মাধ্যমে উম্মাহকে তাদের ফরয দায়িত্বের প্রতি আহ্বান করা, এটা তাদের সাথে সর্বোত্তম শক্রতা হতে পারে।
Comment