Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩৩ || “আজ কি আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য জিহাদ ফরয নয় ???” ।। মাওলানা মুহাম্মাদ মুসান্না হাফিজাহুল্লাহ || শেষ পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩৩ || “আজ কি আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য জিহাদ ফরয নয় ???” ।। মাওলানা মুহাম্মাদ মুসান্না হাফিজাহুল্লাহ || শেষ পর্ব


    আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
    আজ
    কি আল্লাহর কালিমা কে বুলন্দ করার জন্য
    জিহাদ ফরয নয় ???
    ।।মাওলানা মুহাম্মাদ মুসান্না হাফিজাহুল্লাহ ||
    এর থেকেশেষ পর্ব


    শায়েখ আব্দুল্লাহ আযযাম রাহ.[1] এর সেই কথাগুলো আজও কানে বাজে, তিনি বলেছিলেন :

    "هذه قاعدة اتفق عليها جميع الفقهاء والمحدثين والمفسرين والأصوليين، ما رأيت فقيها كتب في الجهاد إلا ونص على هذا النص؛ على أن القتال أو الجهاد يصبح فرض عين على كل مسلم، إذا غزي أي شبر من أراضي المسلمين حتى يطهر هذا الجزء، كالصلاة والصوم، لا يسعهم تركه"۔

    “এ মূলনীতির ব্যাপারে সকল ফকীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবীদ ঐকমত্য পোষণ করেছেন, জিহাদ সম্পর্কে লেখেছেন এমন প্রত্যেক ফকীহকে আমি দেখেছি যে তিনি এ বিষয়টি স্পষ্ট করে ব্যক্ত করেছেন যে, যখন কোন মুসলিম ভূখণ্ডের এক বিঘত পরিমাণ জায়গার ওপর কাফেরদের পক্ষ থেকে আক্রমণ করা হয়, তখন প্রত্যেক মুসলমানের ওপর নামায ও রোজার মত যুদ্ধ বা জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়, কাফেরদের থেকে এ ভূখণ্ডটুকুকে পবিত্র করার আগ পর্যন্ত তাদের জন্য তা পরিত্যাগ করার কোন অবকাশ নেই।”

    আমেরিকার পক্ষ থেকে ঘোষিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তো বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে দিয়েছে, এটাই কারণ ছিল যে, যখন আমাদের পাকিস্তানের ওপর ক্ষমতাশীল শাসক ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাগণ এ যুদ্ধে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে তখন আমাদের এ প্রিয় অঞ্চলের বুযুর্গ আলেমে দ্বীন আমাদের মাথার মুকুট মুফতি নিজামুদ্দীন শামযাই শহীদ রাহ.[2] তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের ফতোয়া প্রদান করেছেন।

    আর এ কথাটিই এ যুগের সম্মানিত আলেমে দ্বীন মুফতি আতীকুর রহমান শহীদ রাহ. বর্ণনা করে বলেন :

    ’’اگربے ایمان صدر بُش صلیبی جنگ کا اعلان کرسکتا ہے تو ہمیں کوئی نہیں روک سکتا اسلامی جہاد کا اعلان کرنے سے۔ آج جو لوگ کہتے ہیں کہ ہم پاکستان میں جہاد نہیں کریں گے، میں انھیں بتانا چاہتا ہوں کہ جہاں بھی اسلام کو سر نگوں کرنے کی کوشش کی جائے گی، ان شاء اللہ مجاہدین اپنی ہتھیلیوں پر سر رکھ کر اور اپنے کفن سر پر باندھ کر نکل آئیں گے اور اللہ کی قسم کسی جگہ پر بھی ان شاء اللہ پیچھے نہیں ہٹیں گے‘‘۔
    ’’اللہ کا فیصلہ ہے اب اللہ کا نور پیچھے نہیں ہٹے گا اور کامل واکمل ہوکر رہے گا۔ اور ان شاء اللہ انھی مدارس سے تحریک اٹھے گی اور پاکستان کے لیے ہمارے لاکھوں مسلمانوں نے جانیں دیں تھیں اور خون کے دریا عبور کرکے پاکستان میں لا الہ الا اللہ کا نظام نافذ کرنے کے لیے آئے تھے، آج تک ہمیں دھوکہ دیا گیا۔ ہمارا فیصلہ ہے کہ جس طریقے پر افغانستان میں اسلامی نظام نافذ ہوچکا ہے، ان شاء اللہ پاکستان میں بھی اسلامی نظام نافذ کرکے دم لیں گے۔‘‘

    “যদি বেঈমানদের প্রেসিডেন্ট ‘বুশ’ ক্রুসেড যুদ্ধের কথা ঘোষণা করতে পারে তবে ইসলামী যুদ্ধের কথা ঘোষণা করতে আমাদেরও কেউ বাধা দিতে পারবে না। আজ যে সব লোকেরা এ কথা বলে যে, আমরা পাকিস্তানে যুদ্ধ করব না, আমি তাদেরকে বলতে চাই যে, যেখানেই ইসলামকে অবনত মস্তক করার ইচ্ছা করা হবে আল্লাহ চাহেন তো সেখানেই মুজাহিদগণ নিজেদের হাতের তালুতে মাথা রেখে এবং নিজের কাফন মাথায় বেঁধে বের হয়ে পড়বে, আল্লাহর শপথ! ইনশাআল্লাহ! কোথাও তারা পিছু হটবে না।”

    “আল্লাহর ফায়সালা, এখন আল্লাহর ‘নূর’ পিছু হটবে না, বরং তা পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গই হয়ে থাকবে, ইনশাআল্লাহ! এই মাদ্রাসাগুলো হতে আন্দোলন শুরু হবে, আর পাকিস্তানের জন্য আমাদের লাখ লাখ মুসলমান প্রাণ দিয়েছিলেন, এবং রক্তের সাগর পাড়ি দিয়ে পাকিস্তানে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে এসেছিলেন, আজ পর্যন্ত আমাদেরকে শুধু ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ফায়সালা হল, যেভাবে আফগানিস্তানে ইসলামী নেযাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ইনশাআল্লাহ! পাকিস্তানেও ইসলামী নেযাম প্রতিষ্ঠিত করেই তবে দম নিব।”

    হে পাকিস্তানের সম্মানিত মুসলমান ও দ্বীনী আত্মমর্যাদার ধারক, ইসলামের নওজোয়ানেরা! আজ আমাদের জিম্মাদারী হল, জমীনে বিশেষকরে পাকিস্তান সহ পুরো উপমহাদেশে ইসলামের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জিহাদের পতাকা উঁচু করা। আমাদের বড়রা অনেক ত্যাগ স্বীকার করে এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে উলামা ও বুযুর্গদের একটি মাত্র উদ্দেশ্য ছিল, যেন এই ইসলামের কালিমা উঁচু হয় এবং মুসলমানগণ ইসলামের ছায়াতলে জীবন যাপন করতে পারেন। কিন্তু এ অঞ্চলের ক্ষমতাসীন ও এখানকার বিশ্বাসঘাতক সেনাবাহিনী অন্যান্য ইসলামী রাষ্ট্রের শাসকবর্গ ও সৈন্যদের মত আমেরিকা ও পাশ্চাত্য কুফরী সম্প্রদায়ের কাতারে শামিল হওয়া এবং তাদের নেতৃত্বে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা ও শরীয়তের বিধান প্রয়োগকে রোধ করার পথ নির্বাচন করে নিয়েছে, পার্লামেন্টের মাথায় কালিমা লিখে দেওয়া এবং আইনের মধ্যে আল্লাহ তাআলা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার ধারা অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া তো ঠিক ঐরূপ যেমনটা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই করে ছিল এবং যেমনটা পুরো ইসলামী ইতিহাসে বেদ্বীন ও যিন্দিকরা করে এসেছে, তাদের থেকে কোন কল্যাণের আশা করা অনর্থক, কেননা স্বয়ং এরাই দ্বীনের দুশমন, এই বাস্তবতা আজ প্রত্যেক পাকিস্তানীর সামনে স্পষ্ট হয়ে যাওয়া আবশ্যক, তাদের ইতিহাস, তাদের কথাবার্তা ও তাদের কর্ম সবই এ কথার ইঙ্গিতবহন করে, এ ধরণের লোকদের না ইসলামের সাথে কোন সম্পর্ক আছে, না উপমহাদেশের মুসলমানদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক আছে, না পাকিস্তান গঠনের ত্যাগের সাথে তাদের কোন গরজ ছিল, বরং তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল তাদের পশ্চিমা মনিবদের ন্যায় ইসলামের বিধানাবলী প্রয়োগের রাস্তা রোধ করে নিজেদের দুনিয়াবী উদ্দেশ্য হাসিল করা।


    সুতরাং আমাদের উপর জরুরী হল, আমাদের এ ভূমিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ঘর থেকে বের হওয়া, এ পথের প্রতিবন্ধকতাগুলোর মোকাবেলা করা এবং এ ভূমিতে আরোপিত পশ্চিমা রাজনৈতিক ব্যবস্থা খতম করা। আর এ প্রথার (গণতন্ত্রের) পরিচালক ও সংরক্ষকদের থেকে (দেশ ও জাতীকে) মুক্ত করা এবং এদের স্থলে নেককার, মুখলেস ও মুসলমান নেতৃত্বে নিয়ে আসা। যিনি এখানে গণতন্ত্র ধ্বংস করে শরীয়ত মোতাবেক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন। যেখানে ন্যায়-ইনসাফের আলোচনা হবে। শরীয়তের হকসমূহ বিজয়ী হবে। আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতাকে প্রতিহত করা হবে। মজলুমদের ন্যায় বিচারে স্থান হবে এবং দুনিয়ার সকল মুসলমানদের জন্য আশ্রয়স্থল হবে।

    এমনকি তের শতাব্দী যাবত দ্বীপ্তিময় যে ইসলাম এখানে মস্তকাবনত হয়ে আছে তা আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এবং ইসলামাবাদ থেকে শুরু করে দিল্লি, ঢাকা ও রেঙ্গুন (ইয়াঙ্গুন) পর্যন্ত তা ছড়িয়ে যাবে।

    এখানে আমি আমাদের সম্মানিত উলামায়ে কেরামদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কারণ আল্লাহ তায়ালা নেক কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব উলামায় কেরামদের দিয়েছেন। আমাদের এ ফরয বিধানের কাম্য হল, সাধ্যানুযায়ী আমাদের প্রিয় জন্মভূমি পাকিস্তান (এবং বাংলাদেশ) এর উপর জোরপূর্বক আরোপিত আমেরিকান (এবং ভারতের) চাটুকার সরকার এবং সেনাপ্রধানদের অনিষ্টতাকে হাত দ্বারা প্রতিহত করা। যেখানে মুখ দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে বলার সাধ্য থাকবে সেখানে মুখ দ্বারা তাদের বিরোধিতা করা। আর যেখানে এ দুটো সম্ভব নয় সেখানে অন্তর দ্বারা এদেরকে খারাপ ধারণা করতে হবে। তবে আমাদের কোন কথা বা কাজ তাদের পক্ষে যেন শক্তি না যোগায় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা -আল্লাহ না করেন- তাদের পক্ষে শক্তি যোগানো দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে ধ্বংস করার নামান্তর।

    ইমাম আবুল মানসূর মাতুরিদী রহ. এর বক্তব্য -আশা করি সবারই জানা আছে- তা হল, "من قال لسلطان زماننا عادل فقد کفر" - কারণ এর দ্বারা যুলুমকে ইনসাফ বলা হয়।[3]

    ইমাম আবু মানসূর মাতুরিদী রহ. এর সময়ের বাদশাহদের ব্যাপারে এ কথা বলেছেন, তাহলে আজ-কালের সরকার প্রধানদের বিষয় কী হবে!!

    এ জন্য উলামায়ে কেরামদের নিকট আরয, তাঁরা যেন এ দেশে আরোপিত যালেম সরকার এবং সেনা-অফিসারদের থেকে নিজেদের দূরে রাখে এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্বীনদার-মুজাহিদদের সহযোগিতা করে।

    সর্বশেষ কথা হল, আজ জিহাদ আমেরিকা, ইসরাইল, হিন্দুস্তান এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশে আমেরিকান গোলাম সরকার ও জেনারেলদের বিরুদ্ধে দাড় করানো হয়েছে। সুতরাং এ উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে সমাজে কোন অস্বাভাবিক কার্য পরিচালনা করা- যার দ্বারা সাধারণ মুসলমানের ক্ষতি হয় এবং যাতে শরীয়তের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করা হয় না, এমন কোন কাজ জিহাদ হওয়ার যোগ্য নয়, বরং এগুলো বিশৃঙ্খলাএজন্য জিহাদ এবং বিশৃঙ্খলার মধ্যে পার্থক্যটা প্রত্যেক মুসলমানের নিকট স্পষ্ট থাকা জরুরী। যেন তিনি (মুসলমান) ইসলাম ও শরীয়ত বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে জিহাদ করে এবং বিশৃঙ্খলার পথ রোধ করে। বিশৃঙ্খলার কারণে যেন পরিণত না হয়।

    আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে ইসলামের বিজয়ের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করার তাওফিক দান করেন এবং আমাদেরকে এই উপমহাদেশে ইসলামের বিজয় দেখান। আমীন।




    [1] শায়েখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্ললাহ ১৯৪১ সালে ফিলিস্তিনের জেনিন প্রদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী আসবাহ আল হারতিয়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন । প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া সুনামের সাথেই শেষ করেন। ক্লাসে সবার চেয়ে ছোট হওয়া সত্তেও তিনি সবচেয়ে বেশী সুদর্শন ও মেধাবী ছিলেন। এরপর তিনি এগ্রিকালচার কাদরী কলেজে ভর্তি হন। এবং সেখান থেকেই ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর দক্ষিণ জর্দানের আদ্দির নামক গ্রামে শিকতা পেশায় যোগদান করেন। কিন্তু তার পিপাসার্ত মন তখনো ছিল অস্থির-উতলা। তাই দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে শরিয়াহ বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৬৬ সালে শরিয়াহ (ইসলামী আইন) এর উপর বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি জর্দানে থাকাবস্থায় ইসরাঈলী আগ্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি জিহাদে যোগ দেন। অতঃপর মিসরে আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হনএবার তিনি ইসলামী আইন শাস্ত্রে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করলেন। এবং ১৯৭১ সালে তিনি আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাণ্ডিত্যের পুরস্কার লাভ করেন। সে বৎসরই তিনি ইসলামি আইনের বিজ্ঞান ও দর্শন (উসূলুল ফিকহ) এর উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে মিশরে অবস্থানকালে শহীদ সাইয়্যেদ কুতুব (রহ) এর (১৯০৬-১৯৬৬) পরিবারের খোঁজখবর নিতে যান। অতঃপর শায়েখ এক পর্যায়ে আরবে শিক্ষকতা পরিত্যাগ করে জিহাদের উদ্দেশ্যে আফগানিস্তানে হিজরত করেন। শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামের চেষ্টা ও মুজাহাদার ফলে আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি মুজাহিদ গ্রুপ একত্রিত হয়তারা একই আমীরের নির্দেশে চলতে লাগল, ফলে শত্রদের মাঝে ভীতি ছড়িযে পড়ল। মুজাহিদরা প্রত্যেক ফ্রন্টে বিজয় ছিনিয়ে আনতে লাগল। এ অবস্থায় শত্রুরা তাকে সহ্য করতে পারল না। তারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করল। তাকে হত্যার কৌশল খুঁজতে লাগল। ১৯৮৯ সালের ২৪শে নভেম্বর, শুক্রবার শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম যে পথ দিয়ে জুমআর নামায আদায় করতে যেতেন সে পথে তিনটি বোমা পুঁতে রাখল। রাস্তাটি ছিল সরু। একটির বেশি গাড়ি তা দিয়ে অতিক্রম করতে পারত না। দুপুর ১২.৩০ মিনিটে শাইখের গাড়িটি ঠিক বোমা যেখানে পুঁতে রাখা হয়েছিল সেখানে এসে থামল। সে গাড়িতে ছিলেন শাইখ ও তাঁর দুই ছেলে ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ। তার আরেক পুত্র তামীম আদনানী আরেকটি করে পিছনে পিছনে আসছিল। শাইখ গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলেন। আর তখনই বিকট শব্দ করে শত্রুদের পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরিত হল। বিস্ফোরণের ভয়াবহ আওয়াজে কেঁপে উঠল শহর। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। তারপরই মসজিদ ও আশপাশের মানুষেরা দৌঁড়ে এল। ইতোমধ্যে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। শায়েখ ও তাঁর সঙ্গে থাকা সন্তানরা শাহাদাত বরণ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

    [2] মুফতী নিজামউদ্দিন শামজাই (রঃ) সোয়াতে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর ১৯৬০ সালের দিকে দ্বীনি তালিম হাসিলের জন্য করাচির দারুল খায়ের মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি দীর্ঘদিন ছাত্র এবং শিক্ষক হিসেবে জামিয়া ফারুকিয়া মাদ্রাসার সাথে যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘ চৌদ্দ বছর তিনি জামিয়া ফারুকিয়া মাদ্রাসার ইফতা বিভাগের প্রধান ছিলেন। ১৯৮৮ সালে মুফতি এবং শিক্ষক হিসেবে তিনি করাচির বিনরি টাউনে জমিয়াতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসায় যোগ দেন এবং শাহাদাত লাভের পূর্ব পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। মাওলানা হাবিবুল্লাহ মুখতার এর মৃত্যুর পর থেকে তিনি জমিয়াতুল উলুম ইসলামিয়ার ইফতা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৯৯০ সালের শুরুর দিকে, জামশর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইমাম বুখারীর শায়েখদের (শিক্ষকের) উপর পিএইচডি করেন। তারপর থেকে তিনি বিনরি টাউন মাদ্রাসায় বুখারী শরীফেরও দারস দিতেন।

    তিনি আরবি, ফারসি, পুশতু ও উর্দু ভাষায় পন্ডিত ছিলেন। প্রতি জুমুয়াবার উর্দু ‘দৈনিক জং’ পত্রিকায় তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতেন। এর আগে তাঁর উস্তাদ মাওলানা মোহাম্মাদ ইউসুফ লুদিয়ানবি (রঃ) করাচিতে শহীদ হবার আগ পর্যন্ত এই প্রশ্ন-উত্তর প্রদান করতেন। মুফতি শামজাই (রঃ) ছিলেন ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান এবং তালিবান মুজাহিদীনদের একজন বড় সমর্থক। আফগানিস্তানের ইসলামিক শাসনামলে তিনি কয়েকবার সেখানে সফর করেন এবং মোল্লা মোহাম্মদ ওমর (রহ.) এর সাথে সাক্ষাত করেন। মোল্লা ওমর (রহ.) তাঁকে অনেক সম্মান করতেন।

    মুফতি শামজাই (রঃ) ঐ সকল আলেমদের অন্যতম যারা ১৯৭৯-৮০ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদের ফাতওয়া প্রদান করেন। ২০০১ সালের শেষের দিকে ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তানে ক্রুসেডার আমেরিকার হামলার পরও তিনি মুজাহিদীনদেরকে ক্রমাগতভাবে সমর্থন দিয়ে যান।

    ২০০৪ সালের মে মাসে ইসলামের শত্রুরা আততায়ী প্রেরণ করে তাঁকে শহীদ করে দেয়। তাঁর শাহাদাত লাভের পর করাচিতে শেরশাহ এলাকার জামিয়া উসমানিয়ার প্রধান ক্বারী মোহাম্মদ উসমান তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেনঃ

    তিনি ছিলেন পাকিস্তানে ইসলামের সর্বোচ্চ আলেমযদিওপাকিস্থানের মুফতিআম হচ্ছেনমুফতি রাফিউদ্দিনউসমানী কিন্তুআমরা সহজেই মুফতি নিজামউদ্দিন শামজাইকে সমান মাপের বলতে পারি।


    [3] ردالمحتار کتاب الاشربہ مطبوعہ مصطفی البابی مصر ٥/ ٣٢٧





    আরও পড়ুন​
Working...
X