উত্তপ্ত নাগাল্যান্ডে ভারতীয় সেনাদের নিষেধাজ্ঞা নাগাবাসীর, মুসলিমদের দুশ্চিন্তা
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খ্রিস্টান অধ্যুষিত অঞ্চল নাগাল্যান্ড। বহুদিন ধরেই এলাকাটি ভারতের কবল থেকে আলাদা হতে চাচ্ছে। স্থানীয়রা গড়ে তুলেছে কয়েকটি স্বাধীকার সংগঠন, যারা ভারতের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ জন্য ভারতীয় সরকার নাগাবাসীদের প্রতি ক্ষিপ্ত।
গত ৪ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী নাগাল্যান্ডের মন জেলায় স্বাধীনতাকামী ভেবে একটি ট্রাক লক্ষ্য করে গুলিবৃষ্টি শুরু করলে, গুলিতে ১৪ জন সাধারণ যুবক নিহত হয়েছিল। এর পরই থেকেই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে নাগাল্যান্ডে।
ঐ মৃত্যুর ঘটনার পর কেটে গিয়েছে বেশ কিছুদিন। কিন্তু নাগাল্যান্ডে উত্তাপ কমার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টা তা বেড়েই চলেছে। এত দিন আন্দোলন সংগঠনগুলোয় সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো নাগাবাসীদের মধ্যে।
গত শুক্রবার ১৭ ডিসেম্বর নাগাল্যান্ডের কোহিমায় বিরাট মিছিল করেছে রাজ্যের প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন। প্রতিবাদ মিছিল থেকে দাবি উঠে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির এবং আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট (আফস্পা) প্রত্যাহারের। ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি জেলার মধ্যে চারটিতে জারি রয়েছে বিশেষ সন্ত্রাস দমন আইন আর্মড ফোর্সেস অ্যাক্ট (স্পেশাল পাওয়ারস)। এই আইনের মাধ্যমেই দমন-পীড়ন চালাচ্ছে ভারত। এর বিরুদ্ধেও ফুঁসে উঠেছে নাগাল্যান্ড। পাশাপাশি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকাও পুড়িয়ে তার প্রত্যাহারের দাবি করে আন্দোলনকারীরা।
এর মধ্যে মোনে ভারতের সেনাবাহিনীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন আন্দোলনকর্মীরা। বিষয়টি ভারতের জন্য কৌশলগত কারণে অস্বস্তিকর। কারণ, এসব জেলার পূর্বে রয়েছে মিয়ানমার আর উত্তরে অরুণাচল প্রদেশ।
প্রায় ২০টি প্রধান নাগা উপজাতির অন্যতম কনিয়াক, নাগাদের সংগঠন কনিয়াক ইউনিয়নই বর্তমানে সেনাবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এর বাইরে অন্যান্য উপজাতির পক্ষ থেকেও আন্দোলনকে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে।
কনিয়াক ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসহযোগিতার পথে হাঁটবে তারা। সেনাবাহিনীর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছেদ করার জন্য স্থানীয়দের নির্দেশ দিয়ে ইউনিয়ন বলেছে, কনিয়াকদের কোনো গ্রাম পরিষদ, ছাত্র বা সমাজের কোনো অংশের মানুষ কোনোরকম সাহায্য বা অনুদান (সরকারের থেকে) নিতে পারবেন না। এছাড়াও নাগাল্যান্ডে ভারতীয় কোন সামাজিক অনুষ্ঠান হবে না এবং জাতীয় উৎসব-অনুষ্ঠানও বর্জন করা হবে।
বিভিন্ন গোষ্ঠীকে এক ছাতার তলায় আনার কাজ করছে যে সংগঠন, তার নাম ইস্টার্ন নাগা পিপলস অর্গানাইজেশন (ইএনপিও)। অন্য বেশ কয়েকটি উপজাতীয় গোষ্ঠী, যেমন ফোম, চাঙ্গ, খিয়ামিয়াঙ্গান, সংটামও আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।
অন্যদিকে প্রধান নাগা রাজনৈতিক সংগঠন ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ডের মুইভা গোষ্ঠীর সঙ্গে কিছুদিন আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের শান্তি আলোচনা ভেস্তে গেছে। এ ঘটনার জেরেও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নাগাল্যান্ড।
এর আগে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও এবং মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা উত্তর-পূর্ব থেকে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তারা দু’জনেই কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন এনডিএ-এর সদস্য। সব মিলিয়ে নাগাল্যান্ড নিয়ে ভারত সরকারের মাথাব্যথা ক্রমেই বাড়ছে।
এখন যেহেতু পূর্ব-ভারতের নাগাল্যান্ড, মনিপুর, মিজোরাম - সীমান্তের অপর পারের মিয়ানমারের শিন ও কাচিন - এই রাজ্যগুলোর অদিবাসিরা সবাই মোটামুটি এক আদি গোত্রভুক্ত, পাশাপাশি এদের সিংহভাগ এখন খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত। সেই সাথে বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলের উপজাতিদের খ্রিস্টানিকরণ - সব মিলিয়ে পশ্চিমাদের এই অঞ্চলে স্বাধীন খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর তত্ত্বকে শক্তিশালী করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আর এই তিন অঞ্চলের বিদ্রোহী বাহিনীগুলো তো আলাদা আলাদাভাবে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার দাবিই করে আসছে। তাই গোটা ঘটনাপ্রবাহ অত্র অঞ্চলের মুসলিমদের জন্য চিন্তার কারণ বই কি।
তথ্যসূত্র:
=====
১। Kohima Protest: উত্তপ্ত কোহিমা, মিছিল থেকে আফস্পা তোলার ডাক, সেনা-গতিবিধিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল-
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খ্রিস্টান অধ্যুষিত অঞ্চল নাগাল্যান্ড। বহুদিন ধরেই এলাকাটি ভারতের কবল থেকে আলাদা হতে চাচ্ছে। স্থানীয়রা গড়ে তুলেছে কয়েকটি স্বাধীকার সংগঠন, যারা ভারতের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ জন্য ভারতীয় সরকার নাগাবাসীদের প্রতি ক্ষিপ্ত।
গত ৪ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী নাগাল্যান্ডের মন জেলায় স্বাধীনতাকামী ভেবে একটি ট্রাক লক্ষ্য করে গুলিবৃষ্টি শুরু করলে, গুলিতে ১৪ জন সাধারণ যুবক নিহত হয়েছিল। এর পরই থেকেই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে নাগাল্যান্ডে।
ঐ মৃত্যুর ঘটনার পর কেটে গিয়েছে বেশ কিছুদিন। কিন্তু নাগাল্যান্ডে উত্তাপ কমার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টা তা বেড়েই চলেছে। এত দিন আন্দোলন সংগঠনগুলোয় সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো নাগাবাসীদের মধ্যে।
গত শুক্রবার ১৭ ডিসেম্বর নাগাল্যান্ডের কোহিমায় বিরাট মিছিল করেছে রাজ্যের প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন। প্রতিবাদ মিছিল থেকে দাবি উঠে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির এবং আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট (আফস্পা) প্রত্যাহারের। ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি জেলার মধ্যে চারটিতে জারি রয়েছে বিশেষ সন্ত্রাস দমন আইন আর্মড ফোর্সেস অ্যাক্ট (স্পেশাল পাওয়ারস)। এই আইনের মাধ্যমেই দমন-পীড়ন চালাচ্ছে ভারত। এর বিরুদ্ধেও ফুঁসে উঠেছে নাগাল্যান্ড। পাশাপাশি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকাও পুড়িয়ে তার প্রত্যাহারের দাবি করে আন্দোলনকারীরা।
এর মধ্যে মোনে ভারতের সেনাবাহিনীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন আন্দোলনকর্মীরা। বিষয়টি ভারতের জন্য কৌশলগত কারণে অস্বস্তিকর। কারণ, এসব জেলার পূর্বে রয়েছে মিয়ানমার আর উত্তরে অরুণাচল প্রদেশ।
প্রায় ২০টি প্রধান নাগা উপজাতির অন্যতম কনিয়াক, নাগাদের সংগঠন কনিয়াক ইউনিয়নই বর্তমানে সেনাবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এর বাইরে অন্যান্য উপজাতির পক্ষ থেকেও আন্দোলনকে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে।
কনিয়াক ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসহযোগিতার পথে হাঁটবে তারা। সেনাবাহিনীর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছেদ করার জন্য স্থানীয়দের নির্দেশ দিয়ে ইউনিয়ন বলেছে, কনিয়াকদের কোনো গ্রাম পরিষদ, ছাত্র বা সমাজের কোনো অংশের মানুষ কোনোরকম সাহায্য বা অনুদান (সরকারের থেকে) নিতে পারবেন না। এছাড়াও নাগাল্যান্ডে ভারতীয় কোন সামাজিক অনুষ্ঠান হবে না এবং জাতীয় উৎসব-অনুষ্ঠানও বর্জন করা হবে।
বিভিন্ন গোষ্ঠীকে এক ছাতার তলায় আনার কাজ করছে যে সংগঠন, তার নাম ইস্টার্ন নাগা পিপলস অর্গানাইজেশন (ইএনপিও)। অন্য বেশ কয়েকটি উপজাতীয় গোষ্ঠী, যেমন ফোম, চাঙ্গ, খিয়ামিয়াঙ্গান, সংটামও আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।
অন্যদিকে প্রধান নাগা রাজনৈতিক সংগঠন ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ডের মুইভা গোষ্ঠীর সঙ্গে কিছুদিন আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের শান্তি আলোচনা ভেস্তে গেছে। এ ঘটনার জেরেও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নাগাল্যান্ড।
এর আগে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও এবং মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা উত্তর-পূর্ব থেকে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তারা দু’জনেই কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন এনডিএ-এর সদস্য। সব মিলিয়ে নাগাল্যান্ড নিয়ে ভারত সরকারের মাথাব্যথা ক্রমেই বাড়ছে।
এখন যেহেতু পূর্ব-ভারতের নাগাল্যান্ড, মনিপুর, মিজোরাম - সীমান্তের অপর পারের মিয়ানমারের শিন ও কাচিন - এই রাজ্যগুলোর অদিবাসিরা সবাই মোটামুটি এক আদি গোত্রভুক্ত, পাশাপাশি এদের সিংহভাগ এখন খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত। সেই সাথে বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলের উপজাতিদের খ্রিস্টানিকরণ - সব মিলিয়ে পশ্চিমাদের এই অঞ্চলে স্বাধীন খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর তত্ত্বকে শক্তিশালী করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আর এই তিন অঞ্চলের বিদ্রোহী বাহিনীগুলো তো আলাদা আলাদাভাবে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার দাবিই করে আসছে। তাই গোটা ঘটনাপ্রবাহ অত্র অঞ্চলের মুসলিমদের জন্য চিন্তার কারণ বই কি।
তথ্যসূত্র:
=====
১। Kohima Protest: উত্তপ্ত কোহিমা, মিছিল থেকে আফস্পা তোলার ডাক, সেনা-গতিবিধিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল-
Comment