মুসলিমদের বয়কট ও গুজরাটের মতো হত্যার আহ্বান হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের
ঈদের ঠিক এক সপ্তাহ আগে বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের অন্তত ৩০০ কর্মী দিল্লি শহরের নিকটতম এলাকা মানেসার মহাপঞ্চায়েতে একটি সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ থেকে তারা উদয়পুরে নিহত শাতিম কানাইয়া লাল হত্যার প্রতিবাদ জানায়।
পঞ্চায়েত-এর কয়েকদিন আগে থেকেই হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদের বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে আসছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। হিন্দুত্ববাদী নেতারা মুসলিমদের বয়কট করার প্রকাশ্য আহ্বান জানিয়ে মুসলিমদের গুজরাটের মতো হত্যা করার আহ্বান জানায়। যদিও এ ধরনের আহ্বান ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী দণ্ডবিধির ১৫৩ A এবং B ধারার প্রকাশ্য লঙ্ঘন।
গণমাধ্যম কর্মীরা মানেসার পঞ্চায়েত সংগঠিত করা ৩ জন আহ্বায়কের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। জানতে চেয়েছেন তাদের কি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। তাদের মধ্যে প্রত্যকেই উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিতই মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে তারা। তারা নিজেদের ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সদস্য হিসেবে দাবি করে।
সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ
গণমাধ্যম কর্মী: কি কারণে আপনারা মুসলিমদের বয়কটের সিদ্ধান্ত নিলেন? এমন পদক্ষেপের পেছনে উদ্দেশ্য কী? মুসলিম ব্যাবসায়ীদের কারণে আপনি কি কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?
হিন্দুত্ববাদী নেতা: ২০২০ সালে যখন লকডাউন ছিল, তখন ৫০ হাজার রুপি উপার্জনকারী লোকেরাও তাদের পরিবারের কাছে চলে যেতে হয়েছিল। কারণ পরিস্থিতি সম্পর্কে কারো জানা ছিল না। কেউ জানতো না কিভাবে তারা বাড়ি ভাড়া দেবে। আমাদের এলাকার অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে গ্রামে ফিরে গেছে। কিন্তু আপনি মুসলিম বস্তির দিকে তাকান। তারা সেখানে নামাজ আদায় করে। তাদের ভাষা আমাদের থেকে আলাদা। এদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি। তারা তাদের বস্তিগুলোর ভাড়া দিয়েছে। সেই সময় যখন কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি, তখন তারা খাওয়ার ব্যবস্থা করল কী করে? তাদের ভাড়া কে দিয়েছে? এটাই আমার উদ্বেগ!
আপনি এখানে কোন একটি জুস বিক্রেতার কাছে যান। তাকে তার নাম জিজ্ঞাসা করুন। সে বলবে ‘রাজু’। আপনি তার আইডি চেক করলে দেখবেন তার নাম ভিন্ন। অনেক সময় আমরা দেখেছি যে আইডি হিন্দু নামে রয়েছে কিন্তু সে শুক্রবার নামাজ পড়ে। মুসলিমরা ভুয়া আইডি তৈরি করেছে। আমাদের এলাকায় এ ধরনের ঘটনা অনেক বাড়েছে। আমাদের হিন্দু ভাইদের থেকে আমরা প্রতিনিয়ত এই ধরনের অভিযোগ পাই যে, ‘আমার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে।’ ‘আমার বউ চলে গেছে।’ এসব বিষয় বিবেচনা করে আমরা এমন অবস্থান নিয়েছি।
বাসস্ট্যান্ডের দিকে তাকালে দেখা যায় বিরিয়ানির দোকান। আমরা হিন্দুরা বিরিয়ানি খাই না। তারা চার্টে ‘ভেজ/নন-ভেজ বিরিয়ানি’ উল্লেখ করে ঠিকই। কিন্তু আমাদের সন্তানরা যদি কোনো দিন সেখানে গিয়ে নন-ভেজ খায়? মুসলিমরা তাদের খাবারে কী মিশায় কে জানে? যেকোন গলিতে যান, শুধু এই লোকগুলোরই দোকান। আমাদের লোকজনের কোন কাজ নেই, কেন? একজন হিন্দু যে কাজ ৫ রুপিতে কাজ করতে চাই, এই ছেলেরা ২ রুপিতে করে ফেলবে, কেন? কারণ তারা আপনার বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার জন্য একটা কিছু তো করতে চাই। সুতরাং, আমাদের এলাকায় কোন খারাপ জিনিস জন্ম নিচ্ছে কি-না সেটি তো আমাদের পরীক্ষা করতে হবে। আগামী দিনে যদি তারা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে যে আমরা বা সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিনা? আমাদের অবশ্যই জানতে হবে যে, একজন যদি নিজেকে হিন্দু বলে দাবি করে তবে সে আসলেই হিন্দু মুসলিম না।
শাহিনবাগ থেকে যখন রিলায়েন্সকে বয়কট করার ডাক দেয়া হয়, এজন্য যে রিলায়েন্সের টাকায় আরএসএস ও বিজেপি অস্ত্র ক্রয় করে। তাহলে আমরা কেন এমনটা করতে পারি না? হিন্দুদের ক্ষমতায়নে আমাদের কী কোন দায়িত্ব নেই? আমাদের সম্প্রদায়ের কোনো দরিদ্র ব্যক্তি যদি কাজ করতে চায়, তাহলে কি তাকে ছোট ব্যবসা গড়ে তুলতে সাহায্য করা উচিত নয়? এই লোকেরা(মুসলিমরা) মসজিদ থেকে টাকা পায়। তাদের বাড়ির দিকে তাকান, তারা বস্তিতে থাকে, কিন্তু তাদের দোকানগুলো ঘোচানো। আজ যদি আমরা হিন্দুরা না জাগি তবে কখন জাগব?
দিন দিন ভারত ভূমি মুসলিমদের জন্য সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতারা প্রকাশ্যে মুসলিমদের হত্যার আহ্বান জানালেও কোন প্রকার আইনের মুখোমুখি হতে হয় না তাদের। বিপরীতে মুসলিমদের ঠুনকো অযুহাত দেখিয়ে হত্যা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমদের এখন একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী সময়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীরা তাদেরকে হয় মৃত্যু না হয় ইসলাম ত্যাগ – এই দু’টির একটি বেছে নেওয়ার মতো অবস্থায় নামিয়ে আনছে। মুসলিমদেরকে তাই নিজেদের জান-মাল-ইজ্জত-আব্রুর হেফাজতের প্রস্তুতি গ্রহণের আহব্বান জানিয়েছেন হক্কানী উলামাগণ।
তথ্যসূত্র:
——–
1. After ‘Boycott Muslims’ Call Comes VHP Threat of Killings, ‘Will Repeat Gujarat if Situation Demands’
– https://tinyurl.com/99z4y49h
ঈদের ঠিক এক সপ্তাহ আগে বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের অন্তত ৩০০ কর্মী দিল্লি শহরের নিকটতম এলাকা মানেসার মহাপঞ্চায়েতে একটি সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ থেকে তারা উদয়পুরে নিহত শাতিম কানাইয়া লাল হত্যার প্রতিবাদ জানায়।
পঞ্চায়েত-এর কয়েকদিন আগে থেকেই হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদের বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে আসছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। হিন্দুত্ববাদী নেতারা মুসলিমদের বয়কট করার প্রকাশ্য আহ্বান জানিয়ে মুসলিমদের গুজরাটের মতো হত্যা করার আহ্বান জানায়। যদিও এ ধরনের আহ্বান ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী দণ্ডবিধির ১৫৩ A এবং B ধারার প্রকাশ্য লঙ্ঘন।
গণমাধ্যম কর্মীরা মানেসার পঞ্চায়েত সংগঠিত করা ৩ জন আহ্বায়কের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। জানতে চেয়েছেন তাদের কি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। তাদের মধ্যে প্রত্যকেই উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিতই মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে তারা। তারা নিজেদের ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সদস্য হিসেবে দাবি করে।
সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ
গণমাধ্যম কর্মী: কি কারণে আপনারা মুসলিমদের বয়কটের সিদ্ধান্ত নিলেন? এমন পদক্ষেপের পেছনে উদ্দেশ্য কী? মুসলিম ব্যাবসায়ীদের কারণে আপনি কি কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?
হিন্দুত্ববাদী নেতা: ২০২০ সালে যখন লকডাউন ছিল, তখন ৫০ হাজার রুপি উপার্জনকারী লোকেরাও তাদের পরিবারের কাছে চলে যেতে হয়েছিল। কারণ পরিস্থিতি সম্পর্কে কারো জানা ছিল না। কেউ জানতো না কিভাবে তারা বাড়ি ভাড়া দেবে। আমাদের এলাকার অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে গ্রামে ফিরে গেছে। কিন্তু আপনি মুসলিম বস্তির দিকে তাকান। তারা সেখানে নামাজ আদায় করে। তাদের ভাষা আমাদের থেকে আলাদা। এদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি। তারা তাদের বস্তিগুলোর ভাড়া দিয়েছে। সেই সময় যখন কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি, তখন তারা খাওয়ার ব্যবস্থা করল কী করে? তাদের ভাড়া কে দিয়েছে? এটাই আমার উদ্বেগ!
আপনি এখানে কোন একটি জুস বিক্রেতার কাছে যান। তাকে তার নাম জিজ্ঞাসা করুন। সে বলবে ‘রাজু’। আপনি তার আইডি চেক করলে দেখবেন তার নাম ভিন্ন। অনেক সময় আমরা দেখেছি যে আইডি হিন্দু নামে রয়েছে কিন্তু সে শুক্রবার নামাজ পড়ে। মুসলিমরা ভুয়া আইডি তৈরি করেছে। আমাদের এলাকায় এ ধরনের ঘটনা অনেক বাড়েছে। আমাদের হিন্দু ভাইদের থেকে আমরা প্রতিনিয়ত এই ধরনের অভিযোগ পাই যে, ‘আমার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে।’ ‘আমার বউ চলে গেছে।’ এসব বিষয় বিবেচনা করে আমরা এমন অবস্থান নিয়েছি।
বাসস্ট্যান্ডের দিকে তাকালে দেখা যায় বিরিয়ানির দোকান। আমরা হিন্দুরা বিরিয়ানি খাই না। তারা চার্টে ‘ভেজ/নন-ভেজ বিরিয়ানি’ উল্লেখ করে ঠিকই। কিন্তু আমাদের সন্তানরা যদি কোনো দিন সেখানে গিয়ে নন-ভেজ খায়? মুসলিমরা তাদের খাবারে কী মিশায় কে জানে? যেকোন গলিতে যান, শুধু এই লোকগুলোরই দোকান। আমাদের লোকজনের কোন কাজ নেই, কেন? একজন হিন্দু যে কাজ ৫ রুপিতে কাজ করতে চাই, এই ছেলেরা ২ রুপিতে করে ফেলবে, কেন? কারণ তারা আপনার বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার জন্য একটা কিছু তো করতে চাই। সুতরাং, আমাদের এলাকায় কোন খারাপ জিনিস জন্ম নিচ্ছে কি-না সেটি তো আমাদের পরীক্ষা করতে হবে। আগামী দিনে যদি তারা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে যে আমরা বা সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিনা? আমাদের অবশ্যই জানতে হবে যে, একজন যদি নিজেকে হিন্দু বলে দাবি করে তবে সে আসলেই হিন্দু মুসলিম না।
শাহিনবাগ থেকে যখন রিলায়েন্সকে বয়কট করার ডাক দেয়া হয়, এজন্য যে রিলায়েন্সের টাকায় আরএসএস ও বিজেপি অস্ত্র ক্রয় করে। তাহলে আমরা কেন এমনটা করতে পারি না? হিন্দুদের ক্ষমতায়নে আমাদের কী কোন দায়িত্ব নেই? আমাদের সম্প্রদায়ের কোনো দরিদ্র ব্যক্তি যদি কাজ করতে চায়, তাহলে কি তাকে ছোট ব্যবসা গড়ে তুলতে সাহায্য করা উচিত নয়? এই লোকেরা(মুসলিমরা) মসজিদ থেকে টাকা পায়। তাদের বাড়ির দিকে তাকান, তারা বস্তিতে থাকে, কিন্তু তাদের দোকানগুলো ঘোচানো। আজ যদি আমরা হিন্দুরা না জাগি তবে কখন জাগব?
দিন দিন ভারত ভূমি মুসলিমদের জন্য সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতারা প্রকাশ্যে মুসলিমদের হত্যার আহ্বান জানালেও কোন প্রকার আইনের মুখোমুখি হতে হয় না তাদের। বিপরীতে মুসলিমদের ঠুনকো অযুহাত দেখিয়ে হত্যা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমদের এখন একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী সময়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীরা তাদেরকে হয় মৃত্যু না হয় ইসলাম ত্যাগ – এই দু’টির একটি বেছে নেওয়ার মতো অবস্থায় নামিয়ে আনছে। মুসলিমদেরকে তাই নিজেদের জান-মাল-ইজ্জত-আব্রুর হেফাজতের প্রস্তুতি গ্রহণের আহব্বান জানিয়েছেন হক্কানী উলামাগণ।
তথ্যসূত্র:
——–
1. After ‘Boycott Muslims’ Call Comes VHP Threat of Killings, ‘Will Repeat Gujarat if Situation Demands’
– https://tinyurl.com/99z4y49h
Comment