হিন্দুত্ববাদী সেনাবাহিনীর ‘হেফাজতে’ কাশ্মীরি মুসলিম ‘নিখোঁজ’
উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার এক মুসলিম যুবক আব্দুল রশিদ দার। তাকে ১৫ ডিসেম্বর হিন্দুত্ববাদী সেনাবাহিনী বাড়ি থেকে জোরপূর্বক আটক করে নিয়ে যায়। তার সাথে পরিবারকে দেখা করতে না দিয়ে পরে জানানো হয়- তিনি সেনাবাহিনীর হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছেন।
গত ১৫ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার রাত ৮:৩০ মিনিটের দিকে পরিবারের সাথে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন আব্দুল রশিদ দার। তখন ৪১ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ইউনিটের সেনা সদস্যদের একটি টিম কুপওয়ারার সীমান্ত জেলার কুনান গ্রামে তার বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে।
আব্দুল রশিদ দারের বড় ভাই শাবির আহম্মদ দার বলেন, উঠানে ছয় থেকে সাত ডজন সৈন্য দেখতে পেয়ে তিনি দরজা খুলে দেন। “একজন সৈন্য আমাকে বলল যে, তারা রশিদকে খুঁজছে। আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম কিসের জন্য, সে উত্তর দিল তদন্তের সাথে সম্পর্কিত কিছু বিষয়ের জন্য।”
শাবির, যিনি জেএন্ডকে পুলিশের একজন বিশেষ পুলিশ অফিসার হিসাবে কাজ করেন, দ্য ওয়্যারকে তিনি জানিয়েছেন যে, সৈন্যরা তাড়াহুড়ো করে দেখেছিল এবং ঘরে ঢোকার আগে তাকে দ্রুত কাজ করার জন্য চিৎকার চেঁচামেচি করেছিল। “আমি তাদের শান্ত থাকতে বলেছিলাম কারণ আমরা কিছু অতিথিদের আতিথেয়তা করছিলাম। নৈশভোজ, কিন্তু তারা শোনেনি এবং বারবার রশিদকে তাড়া করছিল,” বলেন শাবির।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ভয়ে রশিদকে পিছনে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে বাড়ির একটি কক্ষ থেকে জোরপূর্বক টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং বাকি সৈন্যরা অন্যান্য ঘরে তল্লাশি চালায়। শাবির বলেন, “আমি আবার সৈন্যদের বলেছিলাম যে, তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ করা হয়েছে তা আমাদের জানাতে। কিন্তু তারা আবারো বলে তদন্তের সাথে সম্পর্কিত কিছু বিষয়ের জন্য তাকে নেওয়া হচ্ছে। সে পরের দিন সকালে বাড়িতে চলে আসবে।”
শাবির পুলিশ হওয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি অভিযানে জড়িত আইন সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন; তিনি সেনাবাহিনীকে বলেছিলেন যে তার ভাইকে নিয়ে যাওয়ার আগে তাদের স্থানীয় পুলিশ এবং গ্রামের সরপঞ্চকে জানাতে হবে। তবুও তারা সকালে তাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
১৬ ডিসেম্বর সকালে যখন পরিবারটি তাদের বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ত্রেহগাম গ্রামে আর্মি ক্যাম্পে যায়, তখন সেন্ট্রি তাদের বলেছিল যে ইউনিট কমান্ডার মাঠ পরিদর্শনে এসেছেন। শাবির আহম্মেদ বলেন, “এই কথা বলে তারা আমাদের ভিতরে যেতে দেয়নি।”
সন্ধ্যায় স্থানীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরিবারকে জানানো হয় যে, সেনাবাহিনী পুলিশকে জানিয়েছে, রশিদকে মারহামায় নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছে। তিনি এখন নিখোঁজ আছেন।
‘অনুমতি ছাড়া পাখি উড়তে পারে না’
“এমন খবর শুনে পরিবারটি চরম ধাক্কা খায়,” কান্নার বিজড়িত কণ্ঠে শাবির বলেন, “যেখানে নিরাপত্তা সংস্থার অনুমতি ছাড়া একটা পাখিও উড়তে পারে না, সেখানে আব্দুর রশিদ নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ কিভাবে মেনে নেওয়া যায়? তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে প্রায় শতাধিক সেনা সৈন্য ছিল। সে এভাবে অদৃশ্য হয়ে যাবে কী করে?”
রশিদের নিখোঁজ হওয়ার খবরে তার মা খেরা বেগম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পড়ে যাওয়ার সময় তার নাকে গুরুতর আঘাত লাগে।
“তার মা বলেছিলেন, যে সৈন্যরা তাদের গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আগে তিনি তার ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। তিনি বলেন, “আমি সৈন্যদের বলেছিলাম যে তারা তাকে যে অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে সেই অবস্থায় তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।”
মা খেরা বেগম এবং তার অসুস্থ স্বামী আব্দুল ফারিক দার, তাদের দুই মেয়ে এবং ছেলে শাবির, কুনান গ্রামের দুই ডজনেরও বেশি পুরুষ ও মহিলার সাথে ২১ ডিসেম্বর বুধবার শ্রীনগরের প্রেস এনক্লেভে যায়। সেখানে তারা আবদুর রশিদ দারের প্রকৃত অবস্থা জানানোর দাবি জানায়।
প্রেস এনক্লেভের পরিবেশ যখন স্লোগান আর হাহাকারে উত্তাল হয়ে ওঠে, তখন রশিদের এক বোন, ভাই হারানোর শোকে অজ্ঞান হয়ে যায়।
তার মার খেরা বেগম চিৎকার করে বলেন “আমার প্রিয় পুত্রকে ফিরিয়ে দাও। আমার নিষ্পাপ ছেলেকে ফিরিয়ে দাও। আমি তার মুখ দেখতে চাই। যদি তারা তাকে ফিরিয়ে না দেয়, আমি আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে নিজেকে আগুন ধরিয়ে দেব।” তার নাকে তখনোও ব্যান্ডেজ করা ছিল।
আবদুর রশিদ দারের মা খেরা বেগম
শত শত ‘নিখোঁজ’
গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাশ্মীরে অশান্তি, নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে শত শত বেসামরিক লোক নিখোঁজ হয়েছে। কয়েকজনের লাশ পাওয়া গেলেও বেশিরভাগেরই সন্ধান পাওয়া যায়নি। মানবাধিকার কর্মীদের মতে, ১৯৮৯ সাল থেকে কাশ্মীরে ৮০০০ টিরও বেশি লোক নিখোঁজ হয়েছে। তাদের পরিবার প্রতি মাসে শ্রীনগরের প্রেস কলোনিতে তাদের অবস্থান জানানোর দাবিতে বিক্ষোভ করত। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী সরকার ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বাতিলের পরে স্বজন হারাদের এই দাবি জানানোর সুযোগ টুকুও বন্ধ করে দেয়।
তথ্যসূত্র:
———-
1. ‘Tell Us What You Did to Him,’ Family of Kashmiri Man Who Went ‘Missing’ in Custody Tells Army
– https://bit.ly/3VphRAd
উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার এক মুসলিম যুবক আব্দুল রশিদ দার। তাকে ১৫ ডিসেম্বর হিন্দুত্ববাদী সেনাবাহিনী বাড়ি থেকে জোরপূর্বক আটক করে নিয়ে যায়। তার সাথে পরিবারকে দেখা করতে না দিয়ে পরে জানানো হয়- তিনি সেনাবাহিনীর হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছেন।
গত ১৫ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার রাত ৮:৩০ মিনিটের দিকে পরিবারের সাথে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন আব্দুল রশিদ দার। তখন ৪১ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ইউনিটের সেনা সদস্যদের একটি টিম কুপওয়ারার সীমান্ত জেলার কুনান গ্রামে তার বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে।
আব্দুল রশিদ দারের বড় ভাই শাবির আহম্মদ দার বলেন, উঠানে ছয় থেকে সাত ডজন সৈন্য দেখতে পেয়ে তিনি দরজা খুলে দেন। “একজন সৈন্য আমাকে বলল যে, তারা রশিদকে খুঁজছে। আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম কিসের জন্য, সে উত্তর দিল তদন্তের সাথে সম্পর্কিত কিছু বিষয়ের জন্য।”
শাবির, যিনি জেএন্ডকে পুলিশের একজন বিশেষ পুলিশ অফিসার হিসাবে কাজ করেন, দ্য ওয়্যারকে তিনি জানিয়েছেন যে, সৈন্যরা তাড়াহুড়ো করে দেখেছিল এবং ঘরে ঢোকার আগে তাকে দ্রুত কাজ করার জন্য চিৎকার চেঁচামেচি করেছিল। “আমি তাদের শান্ত থাকতে বলেছিলাম কারণ আমরা কিছু অতিথিদের আতিথেয়তা করছিলাম। নৈশভোজ, কিন্তু তারা শোনেনি এবং বারবার রশিদকে তাড়া করছিল,” বলেন শাবির।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ভয়ে রশিদকে পিছনে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে বাড়ির একটি কক্ষ থেকে জোরপূর্বক টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং বাকি সৈন্যরা অন্যান্য ঘরে তল্লাশি চালায়। শাবির বলেন, “আমি আবার সৈন্যদের বলেছিলাম যে, তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ করা হয়েছে তা আমাদের জানাতে। কিন্তু তারা আবারো বলে তদন্তের সাথে সম্পর্কিত কিছু বিষয়ের জন্য তাকে নেওয়া হচ্ছে। সে পরের দিন সকালে বাড়িতে চলে আসবে।”
শাবির পুলিশ হওয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি অভিযানে জড়িত আইন সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন; তিনি সেনাবাহিনীকে বলেছিলেন যে তার ভাইকে নিয়ে যাওয়ার আগে তাদের স্থানীয় পুলিশ এবং গ্রামের সরপঞ্চকে জানাতে হবে। তবুও তারা সকালে তাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
১৬ ডিসেম্বর সকালে যখন পরিবারটি তাদের বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ত্রেহগাম গ্রামে আর্মি ক্যাম্পে যায়, তখন সেন্ট্রি তাদের বলেছিল যে ইউনিট কমান্ডার মাঠ পরিদর্শনে এসেছেন। শাবির আহম্মেদ বলেন, “এই কথা বলে তারা আমাদের ভিতরে যেতে দেয়নি।”
সন্ধ্যায় স্থানীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরিবারকে জানানো হয় যে, সেনাবাহিনী পুলিশকে জানিয়েছে, রশিদকে মারহামায় নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছে। তিনি এখন নিখোঁজ আছেন।
‘অনুমতি ছাড়া পাখি উড়তে পারে না’
“এমন খবর শুনে পরিবারটি চরম ধাক্কা খায়,” কান্নার বিজড়িত কণ্ঠে শাবির বলেন, “যেখানে নিরাপত্তা সংস্থার অনুমতি ছাড়া একটা পাখিও উড়তে পারে না, সেখানে আব্দুর রশিদ নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ কিভাবে মেনে নেওয়া যায়? তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে প্রায় শতাধিক সেনা সৈন্য ছিল। সে এভাবে অদৃশ্য হয়ে যাবে কী করে?”
রশিদের নিখোঁজ হওয়ার খবরে তার মা খেরা বেগম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পড়ে যাওয়ার সময় তার নাকে গুরুতর আঘাত লাগে।
“তার মা বলেছিলেন, যে সৈন্যরা তাদের গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আগে তিনি তার ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। তিনি বলেন, “আমি সৈন্যদের বলেছিলাম যে তারা তাকে যে অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে সেই অবস্থায় তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।”
মা খেরা বেগম এবং তার অসুস্থ স্বামী আব্দুল ফারিক দার, তাদের দুই মেয়ে এবং ছেলে শাবির, কুনান গ্রামের দুই ডজনেরও বেশি পুরুষ ও মহিলার সাথে ২১ ডিসেম্বর বুধবার শ্রীনগরের প্রেস এনক্লেভে যায়। সেখানে তারা আবদুর রশিদ দারের প্রকৃত অবস্থা জানানোর দাবি জানায়।
প্রেস এনক্লেভের পরিবেশ যখন স্লোগান আর হাহাকারে উত্তাল হয়ে ওঠে, তখন রশিদের এক বোন, ভাই হারানোর শোকে অজ্ঞান হয়ে যায়।
তার মার খেরা বেগম চিৎকার করে বলেন “আমার প্রিয় পুত্রকে ফিরিয়ে দাও। আমার নিষ্পাপ ছেলেকে ফিরিয়ে দাও। আমি তার মুখ দেখতে চাই। যদি তারা তাকে ফিরিয়ে না দেয়, আমি আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে নিজেকে আগুন ধরিয়ে দেব।” তার নাকে তখনোও ব্যান্ডেজ করা ছিল।
আবদুর রশিদ দারের মা খেরা বেগম
শত শত ‘নিখোঁজ’
গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাশ্মীরে অশান্তি, নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে শত শত বেসামরিক লোক নিখোঁজ হয়েছে। কয়েকজনের লাশ পাওয়া গেলেও বেশিরভাগেরই সন্ধান পাওয়া যায়নি। মানবাধিকার কর্মীদের মতে, ১৯৮৯ সাল থেকে কাশ্মীরে ৮০০০ টিরও বেশি লোক নিখোঁজ হয়েছে। তাদের পরিবার প্রতি মাসে শ্রীনগরের প্রেস কলোনিতে তাদের অবস্থান জানানোর দাবিতে বিক্ষোভ করত। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী সরকার ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বাতিলের পরে স্বজন হারাদের এই দাবি জানানোর সুযোগ টুকুও বন্ধ করে দেয়।
তথ্যসূত্র:
———-
1. ‘Tell Us What You Did to Him,’ Family of Kashmiri Man Who Went ‘Missing’ in Custody Tells Army
– https://bit.ly/3VphRAd
Comment