গাজায় দৈনিক মৃত্যুহার ২১ শতকের যেকোনো সংঘাতকে ছাড়িয়ে গেছে
গাজায় বেসামরিক মুসলিমদের হত্যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন এক মাত্রায় পৌঁছে গেছে। গত তিন মাস ধরে ইসরায়েলি হামলায় চলতি শতকে সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে সেখানে। গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) ব্রিটেন-ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
অক্সফাম বলছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃসংসতা ও দৈনিক গড় হত্যাকাণ্ড ২১ শতকের অন্য যেকোনো বড় সংঘাতকে ছাড়িয়ে গেছে। এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে যেকোনো সংঘাতের দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে বেশি। অব্যাহত বোমা হামলার মাঝে বেঁচে থাকা মানুষ ক্ষুধা, রোগ ও ঠাণ্ডার কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
চলতি শতকের অন্যান্য যুদ্ধ ও সংঘাতে প্রতিদিনের গড় মৃত্যুর তালিকাও দেয়া হয় প্রতিবেদনে। এর মধ্যে সিরিয়ায় প্রতিদিন গড় মৃত্যুহার ৯৬.৫ জন, সুদানে ৫১.৬ জন, ইরাকে ৫০.৮ জন, ইউক্রেনে ৪৩.৯ জন, আফগানিস্তানে ২৩.৮ জন ও ইয়েমেনে ১৫.৮ জন নিহত হয়েছে।
অক্সফাম বলছে, গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশের ওপর ইসরায়েলের বিধিনিষেধে সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। সেখানে সাপ্তাহিক খাদ্য সহায়তার মাত্র ১০ শতাংশ প্রবেশ করতে পারে। এ পরিস্থিতি বিরামহীন বোমাবর্ষণ থেকে বেঁচে যাওয়াদের জন্য অনাহারের গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করেছে।
গত ১১ জানুয়ারি গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেয়া তথ্য অনুসারে, ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২৩ হাজার ৪৬৯ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৫৯ হাজার ৬০৪ জন আহত হয়েছেন।
৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর জঘন্য অপরাধের পেছনে রয়েছে কয়েক দশক ধরে বেআইনি আক্রমণের দায়মুক্তি ও ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের পদ্ধতিগত দমন-পীড়ন। এইচআরডব্লিউয়ের ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন অঞ্চলের পরিচালক ওমর শাকির জানান, ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলোর লাগাম টেনে ধরা উচিত। নইলে যুদ্ধাপরাধের ফলে আরও অগণিত বেসামরিক মানুষকে নিহত হতে হবে।
এদিকে গত ১১ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকা হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’র অভিযোগ উত্থাপন করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এটা স্বাভাবিক যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করবে। এবং গাজায় গণহত্যার অভিযোগকে ‘ভণ্ডামি ও মিথ্যা’ উল্লেখ করবে, এবং সে তা-ই করেছে।
প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ উল্লেখ করেছে যে, গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ ‘যুদ্ধাপরাধের দিকে’ পরিচালিত হচ্ছে, এ যুদ্ধের পদ্ধতি হিসেবে গাজাবাসীকে সম্মিলিত শাস্তি দেয়া হচ্ছে। খাবার, পানি ও বিদ্যুতের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবা বন্ধের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে।
শুধু গাজা নয় অধিকৃত পশ্চিম তীরেও হামলা অব্যাহত রয়েছে। এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, এখানে ২০২৩ সালের প্রথম আট মাসে ফিলিস্তিনিদের ও তাদের সম্পত্তির ওপর বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার ঘটনা ২০০৬ সাল থেকে সর্বোচ্চ দৈনিক গড়ে পৌঁছেছে। গত আট মাসে কমপক্ষে তিন হাজার ২৯১ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে। বিচার ছাড়াই তাদের আটকে রাখার কথাও স্বীকার করে ইসরায়েলি প্রশাসন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ্য করা হয়, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংসতা ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সিরিয়ার আলেপ্পো, ইউক্রেনের মারিউপোল বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিতে মিত্র বাহিনীর বোমা হামলার চেয়ে বেশি ধ্বংসাত্মক। গবেষণা গ্রুপের সংগৃহীত স্যাটেলাইট তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি আক্রমণে সম্ভবত উত্তর গাজার অবকাঠামোর দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি এবং খান ইউনিসের দক্ষিণাঞ্চলে এক-চতুর্থাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ির পাশাপাশি বিদ্যালয়, হাসপাতাল, মসজিদ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা বলেছেন যে গাজা জুড়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বিদ্যালয় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তথ্যসূত্র:
1. Daily death rate in Gaza higher than any other major 21st Century conflict – Oxfam
– http://tinyurl.com/57f5xvjk
গাজায় বেসামরিক মুসলিমদের হত্যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন এক মাত্রায় পৌঁছে গেছে। গত তিন মাস ধরে ইসরায়েলি হামলায় চলতি শতকে সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে সেখানে। গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) ব্রিটেন-ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
অক্সফাম বলছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃসংসতা ও দৈনিক গড় হত্যাকাণ্ড ২১ শতকের অন্য যেকোনো বড় সংঘাতকে ছাড়িয়ে গেছে। এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে যেকোনো সংঘাতের দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে বেশি। অব্যাহত বোমা হামলার মাঝে বেঁচে থাকা মানুষ ক্ষুধা, রোগ ও ঠাণ্ডার কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
চলতি শতকের অন্যান্য যুদ্ধ ও সংঘাতে প্রতিদিনের গড় মৃত্যুর তালিকাও দেয়া হয় প্রতিবেদনে। এর মধ্যে সিরিয়ায় প্রতিদিন গড় মৃত্যুহার ৯৬.৫ জন, সুদানে ৫১.৬ জন, ইরাকে ৫০.৮ জন, ইউক্রেনে ৪৩.৯ জন, আফগানিস্তানে ২৩.৮ জন ও ইয়েমেনে ১৫.৮ জন নিহত হয়েছে।
অক্সফাম বলছে, গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশের ওপর ইসরায়েলের বিধিনিষেধে সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। সেখানে সাপ্তাহিক খাদ্য সহায়তার মাত্র ১০ শতাংশ প্রবেশ করতে পারে। এ পরিস্থিতি বিরামহীন বোমাবর্ষণ থেকে বেঁচে যাওয়াদের জন্য অনাহারের গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করেছে।
গত ১১ জানুয়ারি গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেয়া তথ্য অনুসারে, ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২৩ হাজার ৪৬৯ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৫৯ হাজার ৬০৪ জন আহত হয়েছেন।
৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর জঘন্য অপরাধের পেছনে রয়েছে কয়েক দশক ধরে বেআইনি আক্রমণের দায়মুক্তি ও ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের পদ্ধতিগত দমন-পীড়ন। এইচআরডব্লিউয়ের ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন অঞ্চলের পরিচালক ওমর শাকির জানান, ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলোর লাগাম টেনে ধরা উচিত। নইলে যুদ্ধাপরাধের ফলে আরও অগণিত বেসামরিক মানুষকে নিহত হতে হবে।
এদিকে গত ১১ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকা হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’র অভিযোগ উত্থাপন করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এটা স্বাভাবিক যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করবে। এবং গাজায় গণহত্যার অভিযোগকে ‘ভণ্ডামি ও মিথ্যা’ উল্লেখ করবে, এবং সে তা-ই করেছে।
প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ উল্লেখ করেছে যে, গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ ‘যুদ্ধাপরাধের দিকে’ পরিচালিত হচ্ছে, এ যুদ্ধের পদ্ধতি হিসেবে গাজাবাসীকে সম্মিলিত শাস্তি দেয়া হচ্ছে। খাবার, পানি ও বিদ্যুতের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবা বন্ধের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে।
শুধু গাজা নয় অধিকৃত পশ্চিম তীরেও হামলা অব্যাহত রয়েছে। এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, এখানে ২০২৩ সালের প্রথম আট মাসে ফিলিস্তিনিদের ও তাদের সম্পত্তির ওপর বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার ঘটনা ২০০৬ সাল থেকে সর্বোচ্চ দৈনিক গড়ে পৌঁছেছে। গত আট মাসে কমপক্ষে তিন হাজার ২৯১ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে। বিচার ছাড়াই তাদের আটকে রাখার কথাও স্বীকার করে ইসরায়েলি প্রশাসন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ্য করা হয়, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংসতা ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সিরিয়ার আলেপ্পো, ইউক্রেনের মারিউপোল বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিতে মিত্র বাহিনীর বোমা হামলার চেয়ে বেশি ধ্বংসাত্মক। গবেষণা গ্রুপের সংগৃহীত স্যাটেলাইট তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি আক্রমণে সম্ভবত উত্তর গাজার অবকাঠামোর দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি এবং খান ইউনিসের দক্ষিণাঞ্চলে এক-চতুর্থাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ির পাশাপাশি বিদ্যালয়, হাসপাতাল, মসজিদ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা বলেছেন যে গাজা জুড়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বিদ্যালয় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তথ্যসূত্র:
1. Daily death rate in Gaza higher than any other major 21st Century conflict – Oxfam
– http://tinyurl.com/57f5xvjk
Comment