ভারতে ম্যাজিস্ট্রেট অফিসের ফাকা জায়গায় নামাজ পড়ায় সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধার বিরুদ্ধে মামলা

ভারতের উত্তর প্রদেশের হামিরপুর জেলায় ৭১ বছর বয়সী এক মুসলিম বৃদ্ধা নামাজ পড়ার কারণে পুলিশি মামলার শিকার হয়েছেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসের সামনে নামাজ পড়ার কারণে ওই বৃদ্ধার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে পরবর্তীতে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এছাড়াও, এ ঘটনার পর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে দায়িত্বরত হোমগার্ডদের অবহেলার কারণে তাদের বরখাস্ত করা হয়।
৩ এপ্রিল ক্লারিওন ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে জানায়, গত ৩১ মার্চ হামিরপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে এক মহিলার নামাজ পড়ার খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার পর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ওই বৃদ্ধার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে ওই বৃদ্ধা মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন, তাই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। পুলিশের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে একজন লিখেছেন, ‘এতটুকু ঘটনায় ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হলো! বিজেপি-আরএসএস সরকার এখন আর লুকিয়ে রাখছে না যে ভারত একটি বর্ণবাদী হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’
সাংবাদিক ভাজৈতা সিং কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘এর জন্য এফআইআর দায়ের করতে হলে আপনার মানসিকতা অত্যন্ত সংকীর্ণ হতে হবে! ইউপি পুলিশের কি এর চেয়ে ভালো কিছু করার নেই?’
সোশ্যাল মিডিয়া কর্মী আসিফ খান লিখেছেন, ‘যে ইউপি পুলিশ কানওয়ারিয়াদের জন্য ফুলের পাপড়ি বর্ষণ করে (অর্থাৎ যারা শিবের পূজা করতে গঙ্গা নদী থেকে জল সংগ্রহ করে এবং তা শিবমন্দিরে নিয়ে যায়), তারাই এক বৃদ্ধা মুসলিম নারীর নামাজ পড়াকে অপরাধ বানিয়ে মামলা দায়ের করছে!’
উল্লেখ্য যে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা স্বাভাবিক হলেও, মুসলিমদের নামাজ পড়া যেন এক অবৈধ কার্যকলাপে পরিণত হয়েছে। মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি সরকারের আচরণে ব্যাপক বৈষম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষত উত্তর প্রদেশে, যেখানে সম্প্রতি খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ পড়ার বিরুদ্ধে পুলিশ সতর্কবার্তা জারি করেছে এবং নামাজ পড়ার কারণে মুসলিমদের পাসপোর্ট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করার মতো হুমকি প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব পদক্ষেপ মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি সরকারের স্পষ্ট বৈষম্যমূলক আচরণ এবং একটি বর্ণবাদী নীতি যা মুসলিম সম্প্রদায়কে অত্যাচার এবং অপদস্থ করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছে। এটি ভারতকে একটি ধর্মীয় বিভাজনের রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করছে, যেখানে একজন নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীরা তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা চর্চা করতে পারলেও অন্যরা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত।
তথ্যসূত্র:
1. UP: Aged Woman Booked for Offering Namaz Near Hamirpur DM’s Office
– https://tinyurl.com/3hymzsxm
Comment