গাজায় নৃশংস ইসরায়েলি হামলায় শহীদ আরও ১২০, প্রাণহানি ছাড়াল ৫৫ হাজার

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে দখলদার ইহুদিবাদী ইসরায়েলের নৃশংস ইসরায়েলি বিমান হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ১২০ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও সাড়ে তিন শতাধিক। শহীদদের মধ্যে ক্ষুধার্ত ত্রাণপ্রার্থীও রয়েছেন। এতে করে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে শহীদের মোট সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ১২ জুন, বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও বিমান হামলায় ১১ জুন, বুধবার ১২০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন বলে আল জাজিরাকে জানিয়েছে গাজার চিকিৎসা সূত্র।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫৭ জন ত্রাণ সংগ্রহকারী নিহত এবং ৩৬৩ জন আহত হয়েছেন। এসব ঘটনা ঘটেছে এমন সব বিতরণকেন্দ্রে, যেগুলো পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) নামের একটি বিতর্কিত সংস্থা। বিতরণকেন্দ্রগুলো গাজায় ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানেই বারবার হামলার ঘটনা ঘটছে।
“মানবিক গণহত্যার কেন্দ্র” হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে রাফাহ ও নেৎসারিম করিডোরে অবস্থিত বিতরণকেন্দ্রগুলো। জিএইচএফ গত ২৭ মে থেকে কার্যক্রম শুরু করার পর এসব স্থানে ত্রাণ নিতে গিয়ে ২২০ জনের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। দখলদার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে যে তারা নেৎসারিম করিডোর এলাকায় “সতর্কতামূলক গুলি” চালিয়েছে, আর সেটিই হয়তো বহু প্রাণহানির কারণ।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, “ইসরায়েল গাজায় ইচ্ছাকৃতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, অভুক্ত মানুষদের ওপর গুলি চালিয়ে ও খাদ্য অবরোধ দিয়ে অনাহারে মারার কৌশল নিচ্ছে।” জাতিসংঘও এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে জানিয়েছে, তারা জিএইচএফ এর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণে অংশ নেবে না। কারণ এতে ইসরায়েলি সামরিক সহায়তাপ্রাপ্ত বেসরকারি ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে, যা মানবিক নীতিমালার লঙ্ঘন।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, জিএইচএফ-এর ত্রাণ বিতরণব্যবস্থা “চলমান নৃশংসতা থেকে মনোযোগ সরানোর একটি কৌশল ও সম্পদের অপচয় মাত্র”। সংস্থাটি বলেছে, “আমরা ও অন্যান্য অভিজ্ঞ সংস্থাগুলো গাজায় সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের সেই সক্ষমতা রয়েছে।” তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাস্তবে ‘জাতিসংঘ’ আমেরিকা-ইসরায়েলের মত বর্বর পরাশক্তিগুলোর হাতেই জিম্মি, সংস্থাটি বহু অঞ্চলে মুসলিম মুজাহিদদের বিরুদ্ধে তথাকথিত শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠিয়ে মানবতাবিরোধী কার্যক্রমে অংশ নিতে সক্ষম হলেও ইসরায়েলের অনুমতি ছাড়া গাজায় ত্রাণ বিতরণে সক্ষম হচ্ছেনা।
দখলদার ইসরায়েল এখনো ইউএনআরডব্লিউএ ও অন্যান্য অভিজ্ঞ সংস্থাগুলোকে গাজায় কাজ করতে দিচ্ছে না এবং খাদ্য সহায়তায় কঠোর অবরোধ বজায় রেখেছে। গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা এখন আরও তীব্র হয়েছে। সন্ত্রাসী ইসরায়েল এমন একটি সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যা ইচ্ছাকৃতভাবে বিশৃঙ্খল, সহিংস এবং জনগণকে আরও দক্ষিণ অঞ্চলের দিকে ঠেলে দেয়ার মাধ্যমে অনাহারে রাখার কৌশল হিসেবে কাজ করছে।
তথ্যসূত্র:
1. Israeli gunfire, strikes kill 120 Palestinians in Gaza, many at aidhttps://tinyurl.com/379mtnd2 https://tinyurl.com/ytajyecx
Comment