ফের গাজায় ত্রাণবাহী নৌযান প্রবেশে দুর্বৃত্ত ইসরায়েলের বাধা

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে যাওয়া নৌযান বহরকে আবারও আটকে দিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। দখলদার ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে দাবি করেছে—এ বহরকে ইসরায়েলের আশকেলন বন্দরে ভিড়তে হবে। অর্থাৎ, ইসরায়েলের অনুমোদন ছাড়া কোনো সাহায্য গাজায় যেতে পারবে না। মানবিক ত্রাণকেও নিজেদের রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে তারা।
অন্যদিকে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার আয়োজকরা স্পষ্ট করেছেন, এই নৌযান বহর কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং সাধারণ মানুষ, মানবাধিকারকর্মী, চিকিৎসক, শিল্পী, ধর্মীয় নেতা, আইনজীবী ও নাবিকদের উদ্যোগে গঠিত। তাদের একমাত্র লক্ষ্য—গাজার ওপর ইসরায়েলের অবৈধ ও অমানবিক অবরোধ ভাঙা। বর্তমানে গাজামুখী নৌযানের সংখ্যা ৫১।
২৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার) গভীর রাতে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় গাজামুখী ত্রাণবাহী ফ্লোটিলার উপর নেমে আসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী ইসরায়েলি হামলা। প্রায় বারোটি ড্রোন নৌযানগুলোকে ঘিরে ধরে আকাশ থেকে ছুড়ে দেয় স্টান গ্রেনেড ও অদ্ভুত রাসায়নিক পদার্থ, যার কারণে বহু যাত্রী শ্বাসকষ্ট ও অস্বস্তিতে ভুগতে থাকেন। এর আগে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি হ্যাক করে যাত্রীদের বিভ্রান্ত করতে উচ্চস্বরে সংগীত প্রচার করা হয় এবং পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা জ্যাম করে দেওয়া হয়। টানা তিন ঘণ্টা স্থায়ী এ হামলায় অন্তত এগারোটি নৌযান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আয়োজকেরা এ হামলার জন্য দখলদার ইসরায়েলকেই দায়ী করেন। ইতালি এ ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন আখ্যা দিয়ে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে তাদের নাগরিকদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেয়। পুরো ঘটনা স্পষ্ট করেছে—গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো ঠেকাতেই এ ধরনের সন্ত্রাসী কৌশল নিয়েছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি সংস্থা সম্প্রতি সতর্ক করেছে, গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক প্রধান সরাসরি দায়ী করেছেন ইসরায়েলকে, যারা পদ্ধতিগতভাবে খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু দখলদার রাষ্ট্রটি এই সত্যকে নির্লজ্জভাবে অস্বীকার করেছে।
এর আগেও একই কৌশলে মানবিক সহায়তা আটকে দেয় দুর্বৃত্ত ইসরায়েল। চলতি বছরের জুনে একটি ত্রাণবাহী নৌযান জব্দ করে তারা। সেই নৌযানে থাকা ১২ জনের মধ্যে ছিলেন সুপরিচিত সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও। সবার বিরুদ্ধে অযৌক্তিকভাবে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করেছিল দখলদার বাহিনী।
স্পষ্টতই, মানবিক সাহায্য রোধ করে ফিলিস্তিনি জনগণকে অনাহারে রাখার নীতি ইসরায়েলের বর্বর সন্ত্রাসী চরিত্রকে নগ্নভাবে প্রকাশ করছে। পশ্চিমা বিশ্ব যেসব মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বুলি আওড়ায়, গাজার শিশুদের অনাহার ও মৃত্যুর সামনে তারা সেখানে নির্বিকার দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে—বরং অনেক সময় ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নেয়। এভাবেই উন্মোচিত হয় পশ্চিমা সভ্যতার আসল চেহারা।
তথ্যসূত্র:
1. A new Gaza flotilla is on its way; does Israel have the legal right to intercept it?
– https://tinyurl.com/jecydh3p
2. Italy and Spain deploy ships to help Gaza aid flotilla targeted in drone attack
– https://tinyurl.com/46ah9p5h
Comment