রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে কর্পোরেট সাম্রাজ্য: ইসরায়েলের গণহত্যায় সহযোগী ১৫৮ কোম্পানি

অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতিতে কার্যক্রম চালানো আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর কদর্য মুখোশ অবশেষে উন্মোচন করেছে জাতিসংঘ। জেনেভা থেকে প্রকাশিত হালনাগাদ ডেটাবেজে উঠে এসেছে ১১টি দেশের ১৫৮টি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের নাম, যাদের মধ্যে রয়েছে এয়ারবিএনবি, বুকিং.কম, মটোরোলা সলিউশন্স ও ট্রিপ অ্যাডভাইজরের মতো বিশ্বখ্যাত কর্পোরেট জায়ান্ট। এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ব্যবসায়িক মুনাফার জন্য দখলদার ইসরায়েলের নৃশংস দমননীতি ও গণহত্যার কুশীলব হয়ে উঠেছে। ফিলিস্তিনি ভূমি দখল, ঘরবাড়ি ধ্বংস আর জনগণকে উচ্ছেদ করে রক্তের ওপর দাঁড় করানো এ বসতিগুলো আসলে চলছে তাদেরই সরবরাহকৃত অর্থ, প্রযুক্তি আর সেবার জোরে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক স্পষ্ট ভাষায় বলেছে— দুর্বৃত্ত ইসরায়েলের বসতি স্থাপন কার্যক্রম আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন, যা ‘যুদ্ধাপরাধের শামিল’। অথচ পশ্চিমা ও এশীয় নানা দেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিন্দুমাত্র নৈতিক দায়বদ্ধতা না দেখিয়ে এই অবৈধ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।
এয়ারবিএনবি ও বুকিং.কম ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা ভূমিতে নির্মিত অবৈধ বসতিতে পর্যটন ও হোটেল বুকিংয়ের সুযোগ দিচ্ছে। মটোরোলা সলিউশন্স দখলদার সেনাদের নজরদারি ও দমনযন্ত্রে প্রযুক্তি সরবরাহ করছে। ট্রিপ অ্যাডভাইজর দখলকৃত জমি ‘পর্যটন কেন্দ্র’ হিসেবে প্রচার করে বিশ্বকে প্রতারণা করছে। এভাবে গ্লোবাল কর্পোরেটগুলো নিজেদের মুনাফার পিপাসায় ফিলিস্তিনিদের রক্তকে পণ্য বানিয়ে তুলছে।
রয়টার্স ও আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই ইসরায়েলভিত্তিক হলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, কানাডা, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল ও স্পেনের সংস্থাও এতে জড়িত। এই তালিকা থেকে প্রমাণ মেলে, ফিলিস্তিনিদের বিপর্যয় কেবল ইসরায়েলের একার নয়, বরং বহুজাতিক ব্যবসায়িক স্বার্থে মোড়ানো এক আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এসব কোম্পানি চাইলে সহজেই অবৈধ বসতিগুলো থেকে সরে দাঁড়াতে পারত। কিন্তু তারা বিপরীতে বেছে নিয়েছে রক্তমাখা মুনাফার পথ। এই নোংরা মুনাফাবাজির ফলে দখলদার ইসরায়েলের হাতে আরও শক্তি জুটছে, আর গাজার ধ্বংসস্তূপে প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন লাশের সারি।
আজকের বিশ্ব যখন মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের বুলি আওড়াচ্ছে, তখন তথাকথিত সভ্য দুনিয়ার এই কর্পোরেট দৈত্যরা রক্তের বাণিজ্য চালাচ্ছে নির্বিকারভাবে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ মানুষদের কান্না, শিশুদের লাশ, মায়েদের আর্তনাদ—এসব কিছুই তাদের কাছে কেবল ব্যবসায়িক হিসাবের বাইরে কিছু নয়। জাতিসংঘের এই তালিকা কেবল একটি ডেটাবেজ নয়—এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে সহযোগী হয়ে ওঠা কর্পোরেট মুখোশগুলোর আসল চেহারা।
তথ্যসূত্র:
1.UN Human Rights Office updates database of businesses involved in Israeli settlements in occupied West Bank
– https://tinyurl.com/mr3mmnyn
2. More than 150 companies have ties to Israeli settlements, UN database shows
– https://tinyurl.com/cefssumh
Comment