ময়মনসিংহে আওয়ামী দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে বাস চালক নিহত, দুজন দগ্ধ

গত ১০ নভেম্বর গভীর রাতে ফুলবাড়িয়ায় আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তদের ছোড়া আগুনের ঘটনায় প্রাণ হারান ৩৫ বছর বয়সী চালক জুলহাস মিয়া।
এ ঘটনায় শহিদুল ইসলাম ও তার মা শারমিন সুলতানা নামে আরও দুজন যাত্রী গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছেন। তাদের বাড়ি ফুলবাড়িয়ার একটি গ্রামে। মা-ছেলে সেদিন ঢাকা থেকে ফিরছিলেন। গভীর রাত হওয়ায় তারা বাড়িতে না গিয়ে চালকের অনুমতি নিয়ে বাসেই ভোর হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু সূর্য ওঠার আগেই আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিক্ষিপ্ত আগুনে পুড়ে যায় তাদের জীবন। বর্তমানে তারা আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসটি রাত পৌনে তিনটার দিকে ফুলবাড়িয়া পৌঁছে তেল নেওয়ার জন্য একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে থামে। যাত্রীরা সবাই নেমে গেলেও চালক জুলহাস ও মা-ছেলে বাসের ভেতরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ঠিক তখনই তিনজন দুর্বৃত্ত হঠাৎ এসে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে, বের হওয়ার সুযোগ পাননি জুলহাস।
কৈয়ারচালায় জুলহাসের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, শোকের ছায়া পুরো গ্রামজুড়ে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধা মা সাজেদা বেগম। তিনি বলেন, ‘তিন লাখ টাকা ঋণ ছিল ওর। সাতদিন পরপর কিস্তি দিতে হইতো। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করতাম, জুলহাস বলতো— মা, তুমি আর কামে যাইও না, আমি কষ্ট করে সংসার চালামু।’
জুলহাসের স্ত্রী জাকিয়া আক্তার এক বছর আগে বিয়ে করেছিলেন। স্বামীর মৃত্যুসংবাদে ছুটে এসে তিনি বলেন, ‘এক বছর হলো আমাদের সংসার শুরু। এখন আমি কারে নিয়ে বাঁচব?’
জুলহাস ছিলেন পরিশ্রমী ও নিরীহ মানুষ। মায়ের কষ্ট লাঘব করতে ঋণের টাকায় ছোট্ট একটি ঘর তুলেছিলেন। সংসারটাকে একটু স্বস্তিতে টেনে নেওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু এক রাতের আগুনে নিঃশেষ হলো সবকিছু। মা হারালেন সন্তানকে, স্ত্রী হারালেন স্বামীকে, আর এক পরিবার হারাল তাদের আশ্রয়-ভরসা।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটা যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই ফল, তা সবার জানা। আগুন সন্ত্রাসে সাধারণ মানুষই এখন বলি হচ্ছে।’
তথ্যসূত্র:
1. পুড়ে অঙ্গার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী জুলহাস
– https://tinyurl.com/2zyzp5ds








Comment