আলেমদের মুখ থেকে আমাদের পছন্দসই ফতোয়া বের করার জন্য জোরাজুরি করা জায়েজ নেই বলেই জানি। বরং আমরাই নফসকে জোরাজুরি করবো আলেমসমাজের ইখলাসপূর্ণ ফতোয়া অনুসরণ করার জন্য। আলেমগণকে রাখতে হবে ভীতিমুক্ত। এর পর যদি কোনো আলেম নামধারী ব্যক্তি সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করে বা জেনেশুনে সত্য গোপন করে, তাহলে ভিন্ন কথা। কারণ আল্লাহকে ভয় করলে এসব কাজ কেউ করবে না। আর আল্লাহকে ভয় করাকেই কুরআনে আলেমের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু আলেমদের মাথায় যে কি পরিমাণ বন্দুক তাক করা থাকে, তা বোঝা যায় বিশেষ বিশেষ উপলক্ষে পত্রিকায় তাঁদের লেখাগুলো পড়লে। বাঙ্গালি ধর্মের চারটি হারাম মাস ফেব্রুয়ারি, মার্চ, আগস্ট, ডিসেম্বর আসলেই বাঙ্গালিরা আবেগে কেমন থরথর করে কাঁপতে থাকে, তা তো অজানা নয়। এরকম আবেগের মাথায় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। প্রায় প্রতিটি জাতীয় দৈনিকের কোনো না কোনো পাতায় 'ধর্ম' নামের একটা চিপা থাকে। সিলেক্টেড কিছু আলেমকে দয়া করে এই চিপায় কিছু লেখার অনুমতি দেওয়া হয়। এই বিশেষ মাসগুলোতে এই আলেমগণ ঐ মাসের হট টপিক নিয়েও যথারীতি লিখে থাকেন। সমস্যা সেখানে না। সমস্যা অন্য জায়গায়।
তাঁদের এসব লেখায় এইসকল চেতনার ইসলামী বিশ্লেষণ থাকা জরুরি ছিল। চেতনাগুলোর কতখানি ইসলামসম্মত, কোন অংশটুকু ইসলামবিরোধী, কোন অংশটাকে একটু মডিফাই করলে ইসলামের সাথে বিরোধ মিটে যায়, এসব নিয়ে নির্মোহ ও নির্ভীক আলোচনা থাকা উচিত ছিল। কিন্তু এমনটা করার বদলে আলেমদের যেন চেষ্টা থাকে আমাদের বাঙ্গালি আবেগের সামনে কুঁজো হয়ে জি হুজুর জি হুজুর করা। আমাদের আবেগ মহাশয় যেন আচমকা ইসলামের বিরুদ্ধে খেপে গিয়ে তেড়েফুঁড়ে না আসে, তা এনশিউর করা।
ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত কয়েকটা এমন লেখা পড়ে জানলাম মাতৃভাষা নাকি আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। তাহলে ইসলাম কি? একটা হাদিস দেখলাম রাসূল (সাঃ) আরবিকে ভালবাসতেন কারণ এটা তাঁর 'মাতৃভাষা' (হাদিস এখানে শেষ, পরেরটা লেখকের কথা)। অতএব আমাদেরো উচিত বাংলাকে ভালবাসা। প্রয়োজনে এজন্য প্রাণ দেওয়া! আমি হাদিস বিশারদও নই, ছাত্রও নই। কিন্তু দলীল উল্লেখবিহীন এই কথাটা কেমন যেন খটকা লাগে। দীনের জন্য প্রাণ দেওয়ার কথা উল্লেখ ছাড়াই ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়ার কথা তোলা বাদ দিলাম। কিন্তু 'মাতৃভাষা' শব্দটার প্রতিশব্দ আরবি ইবারতে আসলে কি ছিল? কারণ আমরা যেরকম মনে করি 'মাতৃভাষা' 'মাতৃভূমি' এগুলো ইউনিভারসাল কিছু শব্দ, বাস্তবে আসলে তা নয়। মাতৃভূমি বলতে আজকে জাতিরাষ্ট্রের যুগে আমরা বুঝি যেই 'দেশে' আমরা জন্মেছি, সেটার পুরোটা। কিন্তু আফ্রিকার ট্রাইবাল সোসাইটিগুলোতে গেলে দেখবেন তারা মাতৃভূমি বলতে বোঝে নানাবাড়ি, আর পিতৃভূমি বলতে বোঝে দাদাবাড়ি। ভাষার ক্ষেত্রেও এমনই। তা ছাড়া আরবি ভাষা শেখার গুরুত্ব নিয়ে একটা-দুটা লাইন লিখলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত?
একইরকম মার্চ-ডিসেম্বর মাস আসলে শুরু হয় স্বাধীনতাবন্দনা। মানুষ জন্মগত স্বাধীন, স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার, এখন যেই দল ক্ষমতায় আছে সেই দলের নেতাই স্বাধীনতার মহান ঘোষক - এসব সেকুলার বুলিগুলোই নতুন করে আওড়ানো হয়। খালি একটু ইসলামিক ফ্লেভার দিয়ে আরকি। তো এখান থেকে আমরা ইসলামের ব্যাপারে কি শিখলাম? ইসলাম যে আমাদেরকে আল্লাহর দাস হতে বলে, তাগুতের দাসত্ব থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে বলে, সেসব আলোচনা কোথায়? ২৫শে মার্চের গণহত্যা, বঙ্গবন্ধু হত্যা এসব নিয়ে লেখা হয় যে মানুষ হত্যা পাপ। ভাল কথা। তো এসব চেতনার সোল এজেন্ট দাবিদাররা যে স্বাধীনতার পর থেকে এত এত হারাম রক্তপাত করল, সেগুলোর আলোচনা কি একটা-দুইটা শব্দে, অন্তত ইঙ্গিতেও আসতে পারত না?
আসলে আমার মনে হয় আমরা আমাদের আলেমসমাজকে ঠিকমত সাপোর্ট দিতে পারছি না। ওনারা হক কথা বলে বলার কারণে যদি ওনাদের দিকে বুলেট আসে, তাহলে মাদ্রাসা-জেনারেল উভয় লাইনের হাজারো মানুষ যে নিজের বুক ভেদ করার আগে সেই বুলেট ওনাদের বুকে লাগতে দেবে না, এটা প্রমাণ করে দেখাতে হবে। তাঁদেরকে জানিয়ে দিতে হবে 'আপনাদের জনসমর্থনের কোনো অভাব নেই। আপনারা হক কথা বলুন। সেকুলারদের খায়েশাতকে ইসলামী পরিভাষা দিয়ে রিইনফোর্স করা থামান। জনসমর্থন না থাকলেও হক কথা বলুন। আল্লাহ্* তো আছেন। আল্লাহ্র গায়েবি সেনাবাহিনী তো আছে। আর কি লাগে? কাকে লাগে? কেন লাগে?'
কিন্তু আলেমদের মাথায় যে কি পরিমাণ বন্দুক তাক করা থাকে, তা বোঝা যায় বিশেষ বিশেষ উপলক্ষে পত্রিকায় তাঁদের লেখাগুলো পড়লে। বাঙ্গালি ধর্মের চারটি হারাম মাস ফেব্রুয়ারি, মার্চ, আগস্ট, ডিসেম্বর আসলেই বাঙ্গালিরা আবেগে কেমন থরথর করে কাঁপতে থাকে, তা তো অজানা নয়। এরকম আবেগের মাথায় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। প্রায় প্রতিটি জাতীয় দৈনিকের কোনো না কোনো পাতায় 'ধর্ম' নামের একটা চিপা থাকে। সিলেক্টেড কিছু আলেমকে দয়া করে এই চিপায় কিছু লেখার অনুমতি দেওয়া হয়। এই বিশেষ মাসগুলোতে এই আলেমগণ ঐ মাসের হট টপিক নিয়েও যথারীতি লিখে থাকেন। সমস্যা সেখানে না। সমস্যা অন্য জায়গায়।
তাঁদের এসব লেখায় এইসকল চেতনার ইসলামী বিশ্লেষণ থাকা জরুরি ছিল। চেতনাগুলোর কতখানি ইসলামসম্মত, কোন অংশটুকু ইসলামবিরোধী, কোন অংশটাকে একটু মডিফাই করলে ইসলামের সাথে বিরোধ মিটে যায়, এসব নিয়ে নির্মোহ ও নির্ভীক আলোচনা থাকা উচিত ছিল। কিন্তু এমনটা করার বদলে আলেমদের যেন চেষ্টা থাকে আমাদের বাঙ্গালি আবেগের সামনে কুঁজো হয়ে জি হুজুর জি হুজুর করা। আমাদের আবেগ মহাশয় যেন আচমকা ইসলামের বিরুদ্ধে খেপে গিয়ে তেড়েফুঁড়ে না আসে, তা এনশিউর করা।
ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত কয়েকটা এমন লেখা পড়ে জানলাম মাতৃভাষা নাকি আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। তাহলে ইসলাম কি? একটা হাদিস দেখলাম রাসূল (সাঃ) আরবিকে ভালবাসতেন কারণ এটা তাঁর 'মাতৃভাষা' (হাদিস এখানে শেষ, পরেরটা লেখকের কথা)। অতএব আমাদেরো উচিত বাংলাকে ভালবাসা। প্রয়োজনে এজন্য প্রাণ দেওয়া! আমি হাদিস বিশারদও নই, ছাত্রও নই। কিন্তু দলীল উল্লেখবিহীন এই কথাটা কেমন যেন খটকা লাগে। দীনের জন্য প্রাণ দেওয়ার কথা উল্লেখ ছাড়াই ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়ার কথা তোলা বাদ দিলাম। কিন্তু 'মাতৃভাষা' শব্দটার প্রতিশব্দ আরবি ইবারতে আসলে কি ছিল? কারণ আমরা যেরকম মনে করি 'মাতৃভাষা' 'মাতৃভূমি' এগুলো ইউনিভারসাল কিছু শব্দ, বাস্তবে আসলে তা নয়। মাতৃভূমি বলতে আজকে জাতিরাষ্ট্রের যুগে আমরা বুঝি যেই 'দেশে' আমরা জন্মেছি, সেটার পুরোটা। কিন্তু আফ্রিকার ট্রাইবাল সোসাইটিগুলোতে গেলে দেখবেন তারা মাতৃভূমি বলতে বোঝে নানাবাড়ি, আর পিতৃভূমি বলতে বোঝে দাদাবাড়ি। ভাষার ক্ষেত্রেও এমনই। তা ছাড়া আরবি ভাষা শেখার গুরুত্ব নিয়ে একটা-দুটা লাইন লিখলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত?
একইরকম মার্চ-ডিসেম্বর মাস আসলে শুরু হয় স্বাধীনতাবন্দনা। মানুষ জন্মগত স্বাধীন, স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার, এখন যেই দল ক্ষমতায় আছে সেই দলের নেতাই স্বাধীনতার মহান ঘোষক - এসব সেকুলার বুলিগুলোই নতুন করে আওড়ানো হয়। খালি একটু ইসলামিক ফ্লেভার দিয়ে আরকি। তো এখান থেকে আমরা ইসলামের ব্যাপারে কি শিখলাম? ইসলাম যে আমাদেরকে আল্লাহর দাস হতে বলে, তাগুতের দাসত্ব থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে বলে, সেসব আলোচনা কোথায়? ২৫শে মার্চের গণহত্যা, বঙ্গবন্ধু হত্যা এসব নিয়ে লেখা হয় যে মানুষ হত্যা পাপ। ভাল কথা। তো এসব চেতনার সোল এজেন্ট দাবিদাররা যে স্বাধীনতার পর থেকে এত এত হারাম রক্তপাত করল, সেগুলোর আলোচনা কি একটা-দুইটা শব্দে, অন্তত ইঙ্গিতেও আসতে পারত না?
আসলে আমার মনে হয় আমরা আমাদের আলেমসমাজকে ঠিকমত সাপোর্ট দিতে পারছি না। ওনারা হক কথা বলে বলার কারণে যদি ওনাদের দিকে বুলেট আসে, তাহলে মাদ্রাসা-জেনারেল উভয় লাইনের হাজারো মানুষ যে নিজের বুক ভেদ করার আগে সেই বুলেট ওনাদের বুকে লাগতে দেবে না, এটা প্রমাণ করে দেখাতে হবে। তাঁদেরকে জানিয়ে দিতে হবে 'আপনাদের জনসমর্থনের কোনো অভাব নেই। আপনারা হক কথা বলুন। সেকুলারদের খায়েশাতকে ইসলামী পরিভাষা দিয়ে রিইনফোর্স করা থামান। জনসমর্থন না থাকলেও হক কথা বলুন। আল্লাহ্* তো আছেন। আল্লাহ্র গায়েবি সেনাবাহিনী তো আছে। আর কি লাগে? কাকে লাগে? কেন লাগে?'
Comment