Announcement

Collapse
No announcement yet.

কিয়ামতের আলামাত — পর্ব -২ কিয়ামতের আলামাত সম্পর্কে ইলম শিক্ষার গুরুত্ব । মাওলানা মাসউদ কাওসার

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কিয়ামতের আলামাত — পর্ব -২ কিয়ামতের আলামাত সম্পর্কে ইলম শিক্ষার গুরুত্ব । মাওলানা মাসউদ কাওসার

    কিয়ামতের আলামাত — পর্ব -১
    কিয়ামতের আলামাত সম্পর্কে ইলম শিক্ষার গুরুত্ব
    মাওলানা মাসউদ কাওসার
    (কিয়ামতের পূর্বে এমন কিছু অবস্থা ও প্রেক্ষাপট তৈরি হবে যার সাথে মুমিনদের জান্নাত ও জাহান্নামের সম্পর্ক। শেষ যমানার ব্যাপারে সবচেয়ে সত্যবাদী সংবাদ প্রদানকারী নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসের সারাংশ হল শেষ যমানায় পুরো পৃথিবী দুইটি তাবুতে বিভক্ত হয়ে যাবে। একটি হবে মুমিনদের তাবু যেখানে নিফাকের অস্তিত্ব থাকবে না। আরেকটি তাবু হবে মুনাফিকদের তাবু যেখানে ইমানের অস্তিত্ব থাকবে না। মাওলানা মাসউদ কাওসার মা: জি: এর এই আলোচনাটি সেই সফলতা ও ব্যর্থতার সাথেই সম্পৃক্ত। এই বয়ানটিতে মুমিনদের চিন্তার খোরাক রয়েছে। মাওলানা সাহেব আলোচনাটি একটি সাধারণ মজলিসে করেছিলেন। যেখানে সম্মানিত ভাই হাফেজ শাহযাদ (মুহিব্বুল্লাহ) শহিদ রহ. উপস্থিত ছিলেন। ভাই হাফেজ শাহযাদ শহিদ রহ. অনেক গুরুত্বসহকারে বয়ানটি রেকর্ড করেন। আর অডিও সেই দরসগুলো ভাই খাইরুদ্দীন লেখার আকৃতিতে নিয়ে আসেন। ইনশাআল্লাহ এই দরসগুলো ধারাবাহিকভাবে আপনাদের সামনে পেশ করা হবে।)
    নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় থেকে শুরু করে কিয়ামত কায়েম হওয়া পর্যন্ত রাবি (অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবিগণ) বলেন যে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা শুরু করলেন এবং তা চলতে থাকল। অতঃপর জোহরের নামাজের সময় হয়ে গেল। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বর থেকে নেমে নামাজ পড়ালেন। এরপর মিম্বারে পুনরায় আরোহণ করলেন এবং নিজের আলোচনা সেখান থেকেই শুরু করলেন যেখানে সমাপ্ত করেছিলেন। তারপর আসরের নামাজের সময় চলে এলো। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বর থেকে অবতরণ করলেন এবং আসরের নামাজ পড়ালেন। এরপর আবার মিম্বরে উঠলেন এবং নিজের আলোচনার ধারাবাহিকতা সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত জারি রাখলেন। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনার শেষে লোকদেরকে প্রশ্ন করলেন: বলো তো সূর্য অস্ত যাওয়ার আর কত সময় বাকি আছে? উত্তর আসল, সামান্য কিছু সময় বাকি আছে, সূর্য অস্ত যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তখন নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বুঝে নাও যে, কিয়ামত তোমাদের উপর এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। তার সময় খুবই নিকটবর্তী। সারাদিনের যতটুকু সময় অতিবাহিত হয়েছে দুনিয়া তার এতটুকু সময় অতিবাহিত করেছে এবং সূর্য অস্ত যেতে যতটুকু সময় বাকি আছে সে পরিমাণ সময় দুনিয়ার বাকি আছে। তোমরা হলে সর্বশেষ উম্মত এবং তোমরা কিয়ামতের পূর্ববর্তী উম্মত। তোমাদের পরে আর কোন উম্মত আসবে না। তোমাদের উপরই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে।
    নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই খুতবা মাদানি যুগে মসজিদে নববীতে হিজরতের পরে হয়েছিল। মদিনার অবস্থা ও মৌসুমের প্রতি লক্ষ রেখে বলা যায় যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই আলোচনাটি আনুমানিক পনেরো ঘণ্টাব্যাপী লম্বা ছিল। শুধু নামাজ ছাড়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের আলোচনা বন্ধ করেননি। দীর্ঘ এই আলোচনার বিষয়বস্তুর ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবিগণ বলেনঃ হুজুরে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এই আলোচনায় সে সব বিষয় বলে দিয়েছেন যা তখন থেকে শুরু করে কিয়ামত প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত সংঘটিত হবে। এই আলোচনার পর নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আলেম সাহাবিগন দুই ভাগ হয়ে যান। আলেম সাহাবিদের ভাগ হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য কী? এ আলোচনার পর এভাবে প্রশ্ন করা হত যে, অমুক সাহাবিও কি আলেম? বলা হত, আলেম। তার মাসআলার ইলম আছে? মাসআলার ইলম আছে। যে আলেমগণ সাহাবি ছিলেন, যাদের তাফসির ও হাদিসের উপর পা-িত্য ছিল, মাসায়েল ও ফাজায়েলের ইলম ছিল এবং আহকাম ও মিরাসের ইলম যাদের কাছে ছিল তাদের ক্ষেত্রে দেখা হত যে, তাদের আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই দীর্ঘ আলোচনা মুখস্থ আছে কি নেই। এই আলোচনায় বর্ণিত বর্ণনা ও হাদিসগুলো, অবস্থা ও ঘটনাগুলো তার স্মরণে আছে নাকি নেই? যদি বিস্তারিত মাসায়েল এবং আহকাম, মিরাস এবং আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসগুলোর সাথে সাথে কোন আলেম সাহাবির আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই দীর্ঘ আলোচনা স্মরণে থাকে তাহলে তাকে সবচেয়ে বড় আলেম মনে করা হত।
    সহিহ মুসলিমের বর্ণনা যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবিগণ বলতেন যে, এই আলোচনার পর আমাদের সাহাবিদের মাঝে সবচেয়ে বড় আলেম তাকেই মনে করা হত যিনি আমাদের মাঝে সবচেয়ে বেশি এই আলোচনা মুখস্থ রাখতে পেরেছেন। যার কাছে সমস্ত অবস্থা ও ঘটনাবলীর এবং ভবিষ্যত ও ফেতনার ইলম ছিল তাকেই সবচেয়ে বড় আলেম মনে করা হত। এভাবেই এই আলোচনার পর সাহাবিদের মাঝে ভাগ তৈরি হয়। তাহলে আপনি চিন্তা করুন তো কোন জিনিসটি নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করল যে, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল কাজ-কর্ম ফেলে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মানুষকে তাদের প্রয়োজন থেকে অবসর করে কোন ধরণের বিরতী ছাড়া ফজর থেকে মাগরিব পর্যন্ত এত দীর্ঘ ও ধারাবিহক একটি আলোচনা পেশ করলেন?
    এই আলোচনায় কী কী বর্ণনা করা হয়েছে? তার এক একটি অংশ প্রত্যেক সাহাবি নিজ নিজ স্মৃতি অনুযায়ী বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারীদের মাঝে হযরত আবু হুরায়রা রা. হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা., হযরত নাওয়াস বিন সামআন রা. হযরত ওমর বিন খাত্তাব রা.ও আছেন। এছাড়া আরও কতিপয় সাহাবিও বর্ণনা করেছেন। তবে মৌলিকভাবে এই চার সাহাবি ঘটনাগুলোকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। তারা এগুলো স্মরণে রেখেছেন এবং এই অবস্থা ও ঘটনাবলী এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই আলোচনাকে নকল করেছেন। এগুলো হাদিসের আকৃতিতে হাদিসের বিশুদ্ধ ছয় গ্রন্থে বিদ্যমান আছে। এর অধিকাংশ হাদিস হযরত নুআইম ইবনে হাম্মাদ রহ. পৃথকভাবে একত্রিত করেছেন। হাদিসের এই কিতাবটির নাম হল “আল-ফিতান” । নুআইম ইবনে হাম্মাদ রহ. ইমাম বুখারি রহ. এরও উস্তাদ ছিলেন। আর “আল-ফিতান” কিতাবটি সহিহ বুখারি অর্থাৎ হাদিসের বিশুদ্ধ ছয়টি কিতাবের আগে রচিত হয়েছে। ২২৯ হিজরীতে ইমাম নুআইম ইবনে হাম্মাদ আল-আরুজি রহ. এর মৃত্যু হয়েছে। ইমাম বুখারি রহ. এর জন্ম ছিল ১৯৪ হিজরীতে এবং ২৫৬ হিজরীতে তাঁর রহ. এর ইনতিকাল হয়েছিলা। ২৭১ হিজরীতে ইমাম মুসলিম রহ. এর মৃত্যু হয়েছিল, ২৭৩ হিজরীতে ইমাম তিরমিজি রহ. এর মৃত্যু হয়েছে এবং ২৭৯ হিজরীতে ইমাম আবু দাউদ রহ. এর ইনতিকাল হয়েছিল এবং ৩০৩ হিজরীতে ইনতিকাল হয়েছে ইমাম নাসায়ী রহ. এর। এদের সবার আগে এবং সবার প্রথমে ২২৯ হিজরীতে ইমাম নুআইম ইবনে হাম্মাদ রহ. এর ইনতিকাল হয়েছিল। তিনি ছিলেন ইমাম বুখারি রহ. এর একজন শাইখ ও উস্তাদ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই দীর্ঘ আলোচনার সাথে সম্পৃক্ত যত হাদিস আছে এবং আংশিকভাবে যা বর্ণিত হয়েছে ইমাম নুআইম বিন হাম্মাদ রহ. সে যমানায় এসবগুলো হাদিসকে এক জায়গায় একত্রিত করে কিতাবের নাম দিয়েছেন “আল-ফিতান”। আর এই কিতাবটি উম্মতের কাছে সংরক্ষিত আছে। কিছু দিনের জন্য কিতাবটি হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন নতুনভাবে এটি ছেপে প্রকাশিত হয়ে সংরক্ষিত আছে। এগুলো হল সে সব হাদিস যা নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণ মজলিসে বলেছিলেন। এই ইলমের দ্বিতীয় অংশ হল সে সব হাদিস যা তিনি ফেতনার ভয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বর্ণনা করেননি। বরং ইলম হিসেবে এবং রহস্য হিসেবে নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু সাহাবির কাছে তা বর্ণনা করেছেন। এসব সাহাবি পরবর্তীতে নিজেদের একজন একজন করে বা দুইজন দুইজন করে ছাত্র তৈরি করে গেছেন। এভাবেই তা উম্মতের কাছে পৌঁছেছে এবং শেষ পর্যন্ত তা সিহাহ সিত্তাহ বা হাদিসের বিশুদ্ধ ছয় গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে এবং কিতাবুল ফিতানেও সংকলিত হয়েছে।
    ফিতনার সাথে সংশ্লিষ্ট এক ইলম সাধারণ সভায় বর্ণিত হয়েছে এবং দ্বিতীয় ইলম হল সে সব যা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রহস্য হিসেবে বিশেষভাবে কিছু সাহাবিদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। যাদের মাঝে হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা. ছিলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গোপন তথ্যের খাজাঞ্চী সাহাবি। গোপন তথ্যের খাজাঞ্চী এজন্য বলা হয়ে থাকে যে, তার কাছে এই দ্বিতীয় প্রকারের ইলম ছিল। সব গোপন তথ্য হুজায়ফা রা. এর কাছে ছিল না। অন্যথায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সবচেয়ে বড় গোপন তথ্যের অধিকারী তো হযরত আবু বকর রা. ছিলেন। অন্যান্য নিকটতম সাহাবিগণও ছিলেন যারা হিজরত করেছিলেন। হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা. তো মদিনার জিন্দেগীতে হাজির হয়েছেন এবং ষষ্ঠ হিজরীর পর এসে মুসলমান হওয়া লোকদের একজন ছিলেন। যিনি বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেননি। কিন্তু তিনিই হলেন গোপন তথ্যের খাজাঞ্চী। এই বিশেষ ইলমের ধারক এবং বিশেষ গোপন তথ্যের বাহক হওয়ার কারণেই তাকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গোপন তথ্যের খাজাঞ্চী বলা হয়ে থাকে। হযরত আবু হুরায়রা রা. এর হাদিসগুলো হাদিসের কিতাবগুলোতে বর্ণিত আছে। তিনি নিজেই বলতেন যে,“!আমি রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইলমের দু’টি পাত্র অর্জন করেছি। তার একটি পাত্র তো হল তা যা আমি তোমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু দ্বিতীয় যে সব হাদিস এবং দ্বিতীয় যে পাত্র যদি আমি ইলমের সে পাত্র তোমাদের মাঝে খুলে দেই এবং সে হাদিসগুলো স্পষ্ট করে দেই তাহলে লোকেরা আমাকে এখানেই হত্যা করে দেবে। আমার গর্দান উড়িয়ে দেবে।” কেন উড়িয়ে দেবে? এই সন্দেহের কারণে যে, এগুলো হাদিস নয়। ―আবু হুরায়রা রা. অবস্থা ও ঘটনাবলী দেখে তা হাদিস বানিয়ে লোকদেরকে বলে―এই সন্দেহে আবু হুরায়রা রা.কে হত্যা করে দেবে যে, এসব হাদিস নয়। কারণ, হাদিসগুলো অবস্থা ও ঘটনাবলীর সাথে এতটা সামাঞ্জস্যপূর্ণ এবং এতটাই স্পষ্ট।
    এই ভূমিকার মাধ্যমে ক্লিয়ার হয় যে, কিয়ামত আমাদের আকিদার অন্তর্ভুক্ত। কুরআন ও হাদিসের মৌলিক বিষয়বস্তু। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের আলামত, অবস্থা ও ঘটনাবলীকে এতটা গুরুত্ব ও এতটা ব্যাখ্যার সাথে আলোচনা করেছেন। একজন বিবেক সম্পন্ন মুসলমান, একজন বিবেকবান মুমিনের বুঝা উচিত যে, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ঘটনাগুলোকে এতটা গুরুত্বের সাথে বর্ণনা করেছেন এবং যেগুলো উম্মতের অবস্থার সাথে এবং উম্মতের ভবিষ্যতের সাথে সম্পৃক্ত; বিশেষ করে এই ফিতনার যুগে যে যুগে আপনি এবং আমি জীবন যাপন করছি, এই যুগের অবস্থাগুলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। তাই একজন মুসলিমকে এই বিষয়ে ফিকির করা উচিত যে, তাকে এই হাদিসগুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবে, বুঝতে হবে এবং এগুলো দেখতে হবে এবং আলিমদের থেকে শুনতে হবে। আলিমদের জিম্মাদারি হল তারা এগুলো সাধারণ মানুষের সামনে বয়ান করবেন এবং রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই হাদিসগুলো ব্যাপকভাবে আলোচনা করবেন। যাতে উম্মত নিজেদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে জানতে পারে এবং নববী দূরদর্শিতা এবং এসব ফিতনার পরিস্থিতিতে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যে শিক্ষা ও নির্দেশনা রয়েছে সে ব্যাপারে উম্মতের জ্ঞান থাকে।
    ফিতনা কী? ফিতনাগুলো কী কী? সে সব অবস্থাগুলো কী? সেগুলো কিভাবে চেনা যাবে? কোন অবস্থায় কার কতটুকু কাজ? এবং আমাদের জন্য তাতে কী কী নির্দেশনা রয়েছে? কী কী শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে? আমরা কিভাবে বাঁচতে পারবো? মোকাবেলা করবো কিভাবে? আমাদেরকে কোন গ্রুপে শামিল হতে হবে? এসব শিক্ষা ও নির্দেশনা হাদিসে বিদ্যমান আছে। তাহলে একজন বিচক্ষণ ইমানদার ও একজন মুমিনের এর থেকে দূরত্ব কেন? এই দূরত্বকে শেষ করার জন্য এবং নববী দূরদর্শিতা ও নববি বুঝ এবং আল্লাহ তাআলা নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে ইলম ও বাসিরাত (দূরদর্শিতা) দান করেছেন উম্মতেরও সে সব ইলম থাকা চাই এবং নিজেদের জিন্দেগী সে হিদায়াত ও নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করা চাই। আমাদের এই বিষয়বস্তু ও আলোচ্য বিষযের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল এটি। অবস্থাগুলো বর্ণনা করা হবে। আলামতগুলো আলোচনা করা হবে। কিয়ামতের ঘটনাগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। যুদ্ধ ও মহাযুদ্ধের বর্ণনা করা হবে। কিন্তু প্রয়োজন হল, এই বিষয়গুলো স্মরণ করে, বুঝে, তার উপলব্ধি অর্জন করে সে অনুযায়ী জীবন সাজানো। যদি ব্যক্তি হয় তাহলে ব্যক্তির এই দায়িত্ব, জাতি হলে জাতির এই দায়িত্ব এবং রাষ্ট্র হলে রাষ্ট্রের এই দায়িত্ব যে, নিজেদের পলিসিগুলো রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষা এবং রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশনা অনুযায়ী সাজাবে।
    হযরত ওমর রা. এর মতো মুমিন এবং তার মতো ব্যক্তিত্ব নিজের খেলাফতের স্বরাষ্ট্র পলিসি এবং পররাষ্ট্র পলিসি রেখেছিলেন সাহাবায়ে কেরামের এমন এক আলেম জামাআতের ্উপর যারা কুরআন, তাফসির, ফিকহ, হাদিস, ইতিহাস ও আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সিরাত ও ফিতনার ইলমে দক্ষ ছিলেন। ওমর রা. এর মতো ব্যক্তি যিনি আমিরুল মুমিনিন ছিলেন তিনি জানাযার আগে দেখতেন যে, জানাযার কাতারে ফিতনার ইলমের অধিকারী হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা. বিদ্যমান আছে নাকি নেই। যদি তিনি মদিনায় থাকতেন এবং জানাযায় আসতেন তাহলে ওমর রা. জানাযা পড়াতেন। আর যদি তিনি জানাযায় না আসতেন তাহলে এটি এব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করত যে, মৃত লোকটি নিফাকের উপর মৃত্যু বরণ করেছে। ওমর রা. অন্য কাউকে দিয়ে জানাযা পড়াতেন এবং নিজে জানাযা পড়াতেন না। মুসলিমরা যদি নতুন কোন অঞ্চল বিজয় করত তাহলে সেখানে সাহাবিদের একটি জামাআত থাকত। জর্ডান বিজয় হল এবং আজরবাইজান এলাকার সীমান্তে সাহাবায়ে কেরাম পৌঁছলে হযরত ওমর রা. হুজায়ফা রা.কে পাঠিয়ে দিলেন যে, এই যুদ্ধে আপনি শরিক হোন। এ দেশের অবস্থা ও ঘটনাগুলো বর্ণনা করুন। কারণ, আপনার কাছে রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেই ইলম আছে এবং ঐসব হাদিস আছে যা ঘটনাগুলোও বর্ণনা করে এবং দেশগুলোর খবরও বর্ণনা করে যে, অমুক রাষ্ট্রের ভবিষ্যত এই। আপনি সে বাহিনীতে যান এবং তাদেরকে বলুন যে, তাদের ব্যাপারে রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী কী? সে অনুযায়ী আপনি আমিরকে বলুন। সেনাপ্রধানকে আপনি নিজের আদেশ অনুযায়ী পরিচালনা করুন।
    ওমর রা. এর এই স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র পলিসি এসব সাহাবিদের উপর ভিত্তি করে ছিল এবং ঐসব হাদিসের উপর ছিল যা তাফসির, হাদিস এবং আহকাম ও মিরাসের ইলমের সাথে সাথে ফিতনার ইলমের ব্যাপারেও পরিপূর্ণ গভীরতা রাখে। যাদের অবস্থা ও ঘটনাবলী পরিপূর্ণ ইয়াদ আছে এবং রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেই দীর্ঘ আলোচনা যা ফিতনার ব্যাপারে ছিল তাও তাদের স্মরণে ছিল। কারণ, তারা সেই আলোচনার হাফেজ ছিলেন।
    আর আমরা যে যমানায় বসবাস করছি! আমরা সে যমানা থেকে পনেরো শত বছরের সফর অতিক্রম করে যে যমানায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং যে যমানায় শ^াস গ্রহণ করছি; কপপক্ষে এ যমানা থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত যে সব অবস্থা এবং ঘটনা বর্ণিত হয়েছে তার ইলম তো অর্জন করা দরকার। আমরা কোন যমানায় বাস করছি? আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? আমাদের পরবর্তী যমানা কী? সে যমানার ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসের আলোকে এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দূরদর্শিতা অনুযায়ী আমাদের কী শিক্ষা ও নির্দেশনা রয়েছে?
    প্রাথমিক এই আলোচনায় আমাদের অনেক সময় চলে গেছে। কিন্তু এটি অনেক জরুরী আলোচনা ছিল। কারণ, এটি ছাড়া আমরা এই আলোচনার গুরুত্ব এবং পরিচয় বুঝতে পারতাম না। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতেক উম্মতের সময়কাল সম্পর্কে বলে গেছেন।
    এখন আমরা আমাদের মূল আলোচনা শুরু করছি। আমরা এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বলে গেছেন। আবু দাউদ শরিফের হাদিসঃ“এই দ্বীন আমার নবুওয়াত ও রহমতের মাধ্যমে শুরু হয়েছে।”
    নবুওয়াত ও রিসালাতের সূচনা থেকে উম্মতের প্রথম সে যুগটি অতিক্রম করেছে তখন উম্মতের মাঝে তাদের নবি বিদ্যমান ছিলেন। নবুওয়াত ও রিসালাতের ধারক নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জিন্দেগী, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সফর, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাওয়াত, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পদক্ষেপ, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জিহাদী জিন্দেগী এবং দ্বীনের পূর্ণতা পাচ্ছিল। ওহী অবতীর্ণ হচ্ছিল। বিধি-বিধান প্রদান করা হচ্ছিল। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তেইশ বছরের নবুওয়াতি জিন্দেগী। এটি উম্মতের প্রথম যুগ। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- ইরশাদ করেনঃ“নবুওয়াত তোমাদের মাঝে থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ তাআলা চাইবেন এবং তারপর তিনি তোমাদের থেকে নবুওয়াত উঠিয়ে নেবেন।” ثم تكون خلافة على منهاج النبوة
    উম্মত দ্বিতীয় যুগে প্রবেশ করবে এবং নবুওয়াত উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং তার স্থানে খেলাফত চলে আসবে এবং খিলাফত আলা মিনহাজিন নবুওয়াহ নবুওয়াতের কর্মপদ্ধতির উপর হবে। হযরত আবু বকর রা. ওমর রা. এবং উসমান রা. ও আলি রা. এর আকৃতিতে এই খেলাফত আলা মিনহাজিন নবুওয়াহ এসেছিল। যাকে খেলাফতে রাশেদা বলা হয়। এটি ছিল উম্মতের দ্বিতীয় যুগ।
    নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে, তারপর উম্মতের মাঝে তৃতীয় যুগটি শুরু হবে। বাদশাহি চলে আসবে এবং এটি হবে দংশনকারী বাদশাহী। একজন অপরজনকে দমনকারী, একে অপরের হক বক্ষণকারী বাদশাহি। বাবা তার ছেলে থেকে রাজত্ব ছিনিয়ে নিয়েছে এবং ছেলে বাবা থেকে রাজত্ব ছিনিয়ে নিয়েছে। একে অপরকে হত্যা করে দিয়েছে এবং এক ভাই অপর ভাইয়ের গলা কেটেছে। যার লাঠি তারই মহিষ। যার শক্তি ছিল সেই ঐ এলাকার নেতৃত্ব অর্জন করেছিল এবং এটি ছিল বাদশাহির এক দীর্ঘ সিলসিলাহ।
    উম্মতের তৃতীয় যুগটি ছিল দংশনকারী বাদশাহির যুগ। উম্মত এই যুগটিও দেখেছে। এই উম্মতের উপর বাদশাহিও চেপে বসেছিল এবং দীর্ঘ একটি সময় পর্যন্ত উম্মত এই বাদশাহি ভোগ করেছে যা নবুওয়াতের কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী ছিল না। যা শুধু বাদশাহি ব্যবস্থাপনা ছিল। আর এই বাদশাহি হয়ত উত্তরাধিকারের মাঝে স্থানান্তর হয়েছে বা অন্য কোন জালেম ও শক্তিশালী কারও মাঝে স্থানান্তর হয়েছে।
    এরপর উম্মতের মাঝে চতুর্থ যুগটি এসেছে। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন উম্মত চতুর্থ যুগেও প্রবেশ করবে। একনায়কত্ব, অপ্রতিরোধ্য এবং ত্রাসের যুগ আসবে। তখন যে শক্তিশালী হবে, কর্তৃত্বের অধিকারী হবে এবং যত বেশি ত্রাসের অধিকারী হবে সেই নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবে।
    আবু দাউদ শরীফের হাদিসে আছে। উম্মত চতুর্থ যুগে প্রবেশ করবে। অত্যন্ত জুলুম, জবরদস্তি, সীমাহীন বে-ইনসাফির যুগ হবে এবং যে যত কর্তৃত্বের অধিকারী হবে, যত বড় জালিম হবে এবং যত বড় ক্ষমতাধর হবে সে সে পরিমাণ বাদশাহি করবে। এই পর্যন্ত মোট চারটি যুগ। এরপর নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে, তারপর উম্মত পঞ্চম এবং সর্বশেষ পর্বেও প্রবেশ করবে। এরপর হঠাৎ কী হবে? ثُمَّ تَكُونُ خِلَافَةً عَلَى مِنْهَاجِ نُبُوَّةٍ এরপর খেলাফত কায়েম হবে। রাজত্বের কথা বলা হয়নি, বাদশাহি বলা হয়নি, একনায়কত্ব বলা হয়নি, জবরদস্তির কথা বলা হয়নি, জুলুমের কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে ثُمَّ تَكُونُ خِلَافَةً عَلَى مِنْهَاجِ نُبُوَّةٍ পুনরায় খেলাফত কায়েম হবে এবং তা নবুওয়াতের পদ্ধতিতে চলবে। যাকে খেলাফতে রাশেদা বলা যেতে পারে; মাঝখানে কয়েক শতাব্দী যাবত যার শৃঙ্খল ভেঙ্গে গিয়েছিল। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগ এবং খেলাফতে রাশেদার যুগের পর পৃথিবী সে যুগ আবার দেখবে। খেলাফত আবার ফিরে আসবে। সে যুগটি আবার ফিরে আসবে এবং শুধু নামে খেলাফত থাকবে না। বরং নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত প্রতিষ্ঠা হবে। যেখানে শত পার্সেন্ট আল্লাহর আইন ও বিধান বাস্তবায়ন হবে। মুহাদ্দিসীনে কেরাম এই হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লেখেন যে, এই পঞ্চম যে যমানা: المراد به زمن المهدي وعيسى عليه الصلوة والسلام এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল হযরত আল-মাহদি ও ইসা আ. এর যামানা। আমরা যদি নিজেদের দিকে তাহলে দেখতে পাব যে, আমরা চতুর্থ যুগের শেষে পঞ্চম যুগের অপেক্ষায় রয়েছি। আমাদের চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম এবং মুসলমানদের এই অপক্ষো এবং হতাশার এই অবস্থা এবং হক ও বাতিলের এই দ্বন্দ্ব এটিই বলছে যে, খুব শীঘ্রই চতুর্থ যুগের সমাপ্তি ঘটবে এবং আমরা খুব শীঘ্রই পঞ্চম যুগে প্রবেশ করবো।
    এই যে চতুর্থ যুগ এবং চতুর্থ যুগের সমাপ্তি এবং পঞ্চম যুগের সূচনা তা যে সব অবস্থা ও ঘটনাগুলোর উপর দিয়ে যাচ্ছে তা মূলত বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, এটি হল বিভিন্ন অবস্থা ও ঘটনা এবং ফেতনার উর্ধ্বগতির যুগ। যে যুগে নিজের ইমান বাঁচানো এবং নিজের বংশধরদের বাঁচানো এবং নিজের পরিবারকে বাঁচানো মুসলিমদের জিম্মাদারি। এই চতুর্থ যুগের সূচনা হল ফেতনার তীব্রতার সূচনা। যা ইমানদারদের ইমান টেনে নিয়ে যাবে এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য মিটিয়ে দেবে এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য দূর করে দেবে। যা ক্ষণস্থায়ী এবং স্থায়ী জিনিসের পার্থক্য মিটিয়ে দেবে। যেখানে এটি চেনা মুশকিল হয়ে যাবে যে, কে কোন পদ্ধেিত জীবন যাপন করছে এবং কার সঙ্গ দেওয়া উচিত। হক কী এবং বাতিল কী?
    সত্য ও মিথ্যার মাঝে এতটাই মিশ্রণ ঘটবে যে, কোন ইমানদারের জন্য এখানে সত্যকে চেনা মুশকিল হয়ে যাবে। তবে যদি ঐ ইমানদার ইমানের সাথে সাথে রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসের ব্যাপারে জ্ঞাত থাকে এবং তা নিয়ে ফিকির করে তাহলে তার কথা ভিন্ন। যদি সে হাদিসে থাকা নববী দূরদর্শিতা এবং হাদিসে আসা নির্দেশিকা এবং শিক্ষার উপর চলে তাহলে তার ফেতনার পরিচয় হয়ে যাবে। তবে তাকে ফেতনার সময় ঘরে যেতে হবে। এটি হল ফেতনার উর্ধ্বগতির সময়; যার ব্যাপারে নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ“এই যুগে যে আমার একটি সুন্নতের উপর আমল করবে এবং সেটিকে নিজের জীবনের অংশ বানিয়ে নেবে তাকে শত শহীদের বরাবর প্রতিদান দেওয়া হবে।”
    ঐ শহীদের মর্যাদা কেমন যে নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে দেয়, নিজের কায়কারবার পরিত্যাগ করে এবং নিজের জন্মভূমি ও এলাকাকে ছেড়ে দেয়, নিজের স্ত্রী ও বাচ্চাদেরকে পরিত্যাগ করে, নিজের জান ও নিজের রক্তও আল্লাহর পথে লাগিয়ে দেয়। তার ফজিলত ও মর্যাদা কী? শহীদের মর্যাদা এবং ফজিলতগুলো কত এবং তারপর একজন নয়, পাঁচজন নয় এবং দশজন নয়। বরং শত শহীদের বরাবর প্রতিদান দেওয়া হবে।
    এত বড় ফজিলত তাও একটি সুন্নতের কারণে। কিন্তু এই একটি সুন্নতের উপর আমল করা এবং তার উপর স্থির থাকা ফেতনার এই যুগে অনেক কঠিন হবে। আমরা চতুর্থ যুগের শেষে দাঁড়িয়ে আছি এবং পঞ্চম যুগের অপেক্ষায় আছি। এই উম্মতের পঞ্চম যুগের সূচনা হবে মাহদি আ. এর আগমনের মাধ্যমে। এখন থেকে আমরা সামনে যে আলোচনা করবো তা চারটি অংশে আলোচিত হবে: প্রথম অংশ: মাহদি আ. এর আত্মপ্রকাশ ও তার সম্পর্কিত আলোচনা। দ্বিতীয় অংশ: দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ। তৃতীয় অংশ: ইসা আ. এর অবতরণ। চতুর্থ অংশ: ইসা আ. এর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত অবস্থা।
    .....চলবে ইনশাআল্লাহ!
    নওয়ায়ে আফগান জিহাদ, ফেব্রুয়ারী-২০২০ইং সংখ্যা থেকে অনূদিত।

    কিয়ামতের আলামত ১ম পর্বের লিংকঃ



    একজন গেরিলা যুদ্ধা একজন কমান্ডোর মত, সে যে কোন পরিস্থিতির মোকাবেলায় সক্ষম

  • #2
    (এই চতুর্থ যুগের সূচনা হল ফেতনার তীব্রতার সূচনা। যা ইমানদারদের ইমান টেনে নিয়ে যাবে এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য মিটিয়ে দেবে এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য দূর করে দেবে। যা ক্ষণস্থায়ী এবং স্থায়ী জিনিসের পার্থক্য মিটিয়ে দেবে। যেখানে এটি চেনা মুশকিল হয়ে যাবে যে, কে কোন পদ্ধেিত জীবন যাপন করছে এবং কার সঙ্গ দেওয়া উচিত। হক কী এবং বাতিল কী?
    সত্য ও মিথ্যার মাঝে এতটাই মিশ্রণ ঘটবে যে, কোন ইমানদারের জন্য এখানে সত্যকে চেনা মুশকিল হয়ে যাবে) একদম পুরো ঠিক কথা। মনে হচ্ছে সিরিজটা অনেক ইন্টারেস্টিং হবে। এবং এখানে - من تمسَّك بسنَّتي عندَ فسادِ أمَّتي ؛ فله أجرُ مئةُ شهيدٍ যেই সুন্নত বলা হয়েছে তার দ্বারা উদ্দেশ্য হল পূর্নাঙ্গ শরীয়ত । শুধু মাত্র একটা সুন্নত নয়। মানে যে আমার আনিত দ্বীনকে আঁকড়ে ধরবে উম্মাহর বিশৃঙ্খলার সময় তার জন্য একশ শহীদের সাওয়াব। ( বিশেষত যে সুন্নতের ব্যপারে বিশৃঙ্খলায় লিপ্ত সে ব্যপারে)
    এবং অপর হাদিসে আছে عن أبي نجيح العرباض بن سارية رضي الله عنه قال‏:‏ ‏"‏وعظنا رسول الله صلى الله عليه وسلم موعظة بليغة وجلت منها القلوب وذرفت منها العيون، فقلنا‏:‏ يا رسول الله كأنها موعظة مودع فأوصنا‏.‏ قال‏:‏ ‏"‏أوصيكم بتقوى الله ، والسمع والطاعة وإن تأمر عليكم عبد حبشي، وإنه من يعش منكم فسيرى اختلافاً كثيراً‏.‏ فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين، عضوا عليها بالنواجذ، وإياكم ومحدثات الأمور فإن كل بدعة ضلالة‏"‏ ‏(‏‏‏رواه أبو داود، والترمذي وقال ‏:‏ حديث حسن صحيح‏‏‏)‏‏.‏
    আবূ নাজীহ আল-ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু ’আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, ’হে আল্লাহর রাসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ’’আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদ’আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদ’আতই ভ্রষ্টতা।’’[1]
    সুতরাং এখানে যেমনি ভাবে শুধু মাত্র একটি সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরে থাকতে বলা হয় নি । বরং পুরো আদর্শকে আঁকড়ে ধরে থাকার কথা বলা হয়েছে। তেমনি ভাবে পূর্বের হাদিসেও একটি সুন্নাত কে আঁকড়ে ধরে থাকতে বলা হয়নি। বরং পুরো আদর্শকে আঁকড়ে ধরে থাকতে বলা হয়েছে।

    পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

    Comment


    • #3
      ❝এখানে - من تمسَّك بسنَّتي عندَ فسادِ أمَّتي ؛ فله أجرُ مئةُ شهيدٍ যেই সুন্নত বলা হয়েছে তার দ্বারা উদ্দেশ্য হল পূর্নাঙ্গ শরীয়ত । শুধু মাত্র একটা সুন্নত নয়। মানে যে আমার আনিত দ্বীনকে আঁকড়ে ধরবে উম্মাহর বিশৃঙ্খলার সময় তার জন্য একশ শহীদের সাওয়াব। ( বিশেষত যে সুন্নতের ব্যপারে বিশৃঙ্খলায় লিপ্ত সে ব্যপারে)
      এবং অপর হাদিসে আছে عن أبي نجيح العرباض بن سارية رضي الله عنه قال‏:‏ ‏"‏وعظنا رسول الله صلى الله عليه وسلم موعظة بليغة وجلت منها القلوب وذرفت منها العيون، فقلنا‏:‏ يا رسول الله كأنها موعظة مودع فأوصنا‏.‏ قال‏:‏ ‏"‏أوصيكم بتقوى الله ، والسمع والطاعة وإن تأمر عليكم عبد حبشي، وإنه من يعش منكم فسيرى اختلافاً كثيراً‏.‏ فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين، عضوا عليها بالنواجذ، وإياكم ومحدثات الأمور فإن كل بدعة ضلالة‏"‏ ‏(‏‏‏رواه أبو داود، والترمذي وقال ‏:‏ حديث
      জাযাকাল্লাহ, অনেক সুন্দর পয়েন্ট তুলে ধরেছেন ভাই। বিষয়টি আমিও এরকমটাই জানি। তবে যেহেতু আমি শুধু অনুবাদ করেছি,তাই নিজের পক্ষ থেকে কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করিনি। ম্যাগাজিনে যেমন ছিল তেমনি অনুবাদ করে দিয়েছি।
      একজন গেরিলা যুদ্ধা একজন কমান্ডোর মত, সে যে কোন পরিস্থিতির মোকাবেলায় সক্ষম

      Comment


      • #4
        জাযাকাল্লাহ খাইরান ভাই, পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি...

        Comment

        Working...
        X