কিয়ামতের আলামাত — পর্ব-৬
দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ ও তার পূর্ববর্তী পৃথিবীর অবস্থা
মাওলানা মাসউদ কাওসার
(কিয়ামতের পূর্বে এমন কিছু অবস্থা ও প্রেক্ষাপট তৈরি হবে যার সাথে মুমিনদের জান্নাত ও জাহান্নামের সম্পর্ক। শেষ যমানার ব্যাপারে সবচেয়ে সত্যবাদী সংবাদ প্রদানকারী নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসের সারাংশ হল শেষ যমানায় পুরো পৃথিবী দুইটি তাবুতে বিভক্ত হয়ে যাবে। একটি হবে মুমিনদের তাবু যেখানে নিফাকের অস্তিত্ব থাকবে না। আরেকটি তাবু হবে মুনাফিকদের তাবু যেখানে ইমানের অস্তিত্ব থাকবে না। মাওলানা মাসউদ কাওসার মা: জি: এর এই আলোচনাটি সেই সফলতা ও ব্যর্থতার সাথেই সম্পৃক্ত। এই বয়ানটিতে মুমিনদের চিন্তার খোরাক রয়েছে। মাওলানা সাহেব আলোচনাটি একটি সাধারণ মজলিসে করেছিলেন। যেখানে সম্মানিত ভাই হাফেজ শাহযাদ (মুহিব্বুল্লাহ) শহিদ রহ. উপস্থিত ছিলেন। ভাই হাফেজ শাহযাদ শহিদ রহ. অনেক গুরুত্বসহকারে বয়ানটি রেকর্ড করেন। আর অডিও সেই দরসগুলো ভাই খাইরুদ্দীন লেখার আকৃতিতে নিয়ে আসেন। ইনশাআল্লাহ এই দরসগুলো ধারাবাহিকভাবে আপনাদের সামনে পেশ করা হবে।)
إن الحمد لله نحمده و نستعينه ونستغفره ونؤمن به و نتوكل عليه ونعوذ بالله من شرور أنفسنا و من سيئات أعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضلله فلا هادي له ونشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له ونشهد أن سيدنا ومولانا محمدا عبده ورسوله أما بعدহযতর মাহদি রা. এর আত্মপ্রকাশের ধারাবাহিকতায় আমরা গত পর্বে সহিহ মুসলিমে বর্ণিত মাহদি রা. এর চারটি বড় যুদ্ধের কথা সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। এই চারটি যুদ্ধের পর দুনিয়াতে ইসলামের বিজয় এবং পৃথিবীতে ইসলাম বাস্তবায়িত হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। সংক্ষিপ্ত আকারে আরেকবার মাহদি রা. এর আলোচনা করে আমরা সামনের আলোচনায় যাবো।
হযরত মাহদি রা. এর যুদ্ধগুলোর মাধ্যমে অর্জিত বিজয় পুরো দুনিয়াতে ইসলামেরই বিজয়। কিন্তু এটি পরিপূর্ণ বিজয় নয়। এখানে ইসলাম বিজয়ও হয়েছে এবং ইসলাম বাস্তবায়িতও হয়েছে। কিন্তু কুফরের পরিসমাপ্তি ঘটেনি। এই বিজয়ের অর্থ কুফরের পরিসমাপ্তি নয়। কুফর যদি থেকে থাকে তাহলে তা এই শর্তের সাথে আছে যে, কুফর ইসলামের অধীনে থাকবে এবং পরাজিত থাকবে এবং ইসলাম বিজয়ী থাকবে।
হাদিসগুলোতে ইসলামের মূল বিজয় এবং কুফরের যে পরিসমাপ্তির কথা আছে তা হযরত ইসা আ. এর অবতরণের পর অর্জিত হবে। কিন্তু হযরত মাহদি রা. এর যুগের বিজয় কুফর সমাপ্তকারী বিজয় নয়। এটি শুধু ইসলামই বাকি থাকবে এমন বিজয় নয়। যেন এখানে ইসলাম বাস্তবায়িত এবং দুনিয়াতে ইসলাম বিজয়ী। কিন্তু এখানে কুফরও বাকি আছে। তবে কুফর শর্তের সাথে ইসলামের অধীনস্ত আছে এবং পরাজিত আছে।
হযরত মাহদি রা. এর যুগের বৈশিষ্ট্যাবলী মাথায় রাখেন। মাহদি রা. এর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যাবলী তো ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন ইমাম মাহদি রা. এর আত্মপ্রকাশের সময় তার বয়স হবে চল্লিশ বছর। ইবনে মাজাহ’র হাদিস অনুযায়ী নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে, তিনি আত্মপ্রকাশের পর সাত বছর বা নয় বছর জীবিত থাকবেন। কিন্তু মাহদি রা. এর জীবনের শেষ আড়াই বছর হযরত ইসা আ. এর সঙ্গে অতিবাহিত হবে। এরপর হযরত ইসা আ. এর অবতরণের পর তার কাছে নেতৃত্ব সোপর্দ করবেন। তার অধীনস্ত হয়ে যাবেন। এই দিক থেকে যদি সাত বছরের বর্ণনাটা গ্রহণ করা হয় এবং হযরত ইসা আ. এর সাথে থাকা আড়াই বছরও এখান থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে মাত্র চার বছর বা সাড়ে চার বছরের ভিতরে পুরো দুনিয়াকে বিজয় করে ইসলামকে বিজয়ী করবেন। এটি হযরত মাহদি রা. এর বিরাট বড় এক সফলতা যা আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়। এটি একথারই প্রমাণ যে, আল-মাহদি হওয়া, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিশেষ হেদায়াত নিয়ে আগমনকারীর এই মর্যাদা যে, তিনি চার বছরের সামান্য সময়ের ভিতরে পুরো দুনিয়াতে বিজয়ী হতে পারেন। আর যদি নয় বছরের বর্ণনাটি গ্রহণ করা হয় তাহলে আরও দু’ বছর বাড়িয়ে নিতে হবে। অর্থাৎ মাত্র ছয় বছরের ভিতরে পুরো দুনিয়াকে বিজয় করবেন।
মাহদি রা. এর মৌলিক একটি বৈশিষ্ট্য এটিও যে, হযরত ইসা আ. এতার জীবদ্দশায় অবতীর্ণ হবেন। তিনি কোথায় অবতরণ করবেন সেটি আমরা তাকে নিয়ে আলোচনার সময় বর্ণনা করবো। আরও মজার ব্যাপার হল হযরত ইসা আ. অবতরণের পর মাহদি রা. এর ইমামতিতেই নামাজ আদায় করবেন।
হযরত মাহদি রা. এর খেলাফতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:
১―রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে, ইসলাম নিজের পূর্ণ শক্তির সাথে এবং পূর্ণ বিজয়ের সাথে জমিনে স্থান করে নেবে এবং বিজয়ী হবে।
২―হযরত মাহদি রা. পুরো দুনিয়া থেকে দরিদ্রতা, মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্বের পরিসমাপ্তির ঘোষণা দেবেন। সম্ভবত পৃথিবীতে নিজের শাসন প্রতিষ্ঠার পর কোন শাসক এমন ঘোষণা দেইনি। কিন্তু আল্লাহ প্রদত্ত খেলাফতের ফলাফল এটি যে, মাহদি রা. ঘোষণা দেবেন যে, আমি ঘোষণা করছি, আজকের পর থেকে দুনিয়াতে দরিদ্রতা থাকবে না। পৃথিবীতে দরিদ্রতার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। পৃথিবীতে মুদ্রাস্ফীতি শেষ হয়ে গেছে। পৃথিবী থেকে বেকারত্বের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। অন্য কোন শাসক এই ঘোষণা করতে পারেনি। বিশেষ করে ঘোষণার পর কার্যতঃ বাস্তবায়ন করে দেখানো। রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি কোন ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে বলে যে, আমার এই সমস্যা অথবা তার কাছে সম্পদ চায় তাহলে তিনি বলবেন যে, এগুলো আল্লাহর দেওয়া খাজানা, এগুলো খোলা আছে। এর থেকে যতটুকু উঠানোর মত হিম্মত তোমার আছে ততটুকু উঠিয়ে নাও। অন্য এক বর্ণনায় আছে, পূর্ণ হাসি দিয়ে তিনি উদার হস্তে খোলা মনে তাকে দান করবেন।
৩―তৃতীয় সবচেয়ে সফলতা হল সম্পদের প্রাচুর্য, মুদ্রাস্ফীতির সমাপ্তি এবং দরিদ্রতার পরিসমাপ্তির সাথে সাথে পৃথিবীকে কন্ট্রোল করা এবং খারাপ ও ফাসাদকে শেষ করা এবং এই ঘোষণা করা যে, আজকের পর জুলুম শেষ হয়ে গেছে। এখন সর্বত্র ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হবে। এটি হযরত মাহদি রা. এর অনেক বড় এক সফলতা। রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পৃথিবী অন্যায় ও অবিচারে ভরে যাবে। কিন্তু হযরত মাহদি রা. এসে তাকে ন্যায় ও ইনসাফের মাধ্যমে পূর্ণ করে দেবেন এবং দুনিয়া থেকে জুলুম ও বে-ইনসাফি শেষ করে দেওয়ার ঘোষণা দেবেন। আজকের পর থেকে কারও উপর কোন জুলুম ও বে-ইনসাফি হবে না।
সুনানে ইবনে মাজাহ’র বর্ণনা মতে হযরত মাহদি রা. এর সাত বা নয় বছর দুনিয়াতে জীবিত থাকার পর তার জীবদ্দশায় হযরত ইসা আ. এর অবতরণ ঘটবে এবং তার জীবদ্দশায়-ই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। ইমাম মাহদি রা. এর বড় বড় সফলতাগুলোর মাঝে ফিতনার হাদিসের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ আলিমগণ বলেন, সবচেয়ে বড় সফলতা হল কোন ধরণের অস্ত্র ও যুদ্ধ ছাড়াই ইস্তাম্বুল বিজয়। রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন হযরত মাহদি রা. এর চতুর্থ যুদ্ধ হবে ইস্তাম্বুলের যুদ্ধ যা কোন অস্ত্র ও লড়াই ছাড়াই বিজিত হবে। এই বিজয়ের সাথে সাথেই দুনিয়াতে দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। যত দ্রæত ও তীব্রতার সাথে ইসলামের বিজয় এসেছিল ঠিক তত দ্রæততার সাথেই মুসলিমরা ভেঙ্গে পড়বে এবং দুনিয়াতে দাজ্জাল প্রকাশ হয়ে নিজের ফেতনা ছড়ানো শুরু করবে। মুসলিমদের জন্য তখন নির্দেশ করা হবে দাজ্জালের মোকাবেলা করার পরিবর্তে নিজেদের ইমান, নিজেদের পরিবারকে রক্ষা করার জন্য নিরাপদ কোন আশ্রয়স্থল খুঁজে নাও। কারণ, এই দাজ্জালের সামনে যাওয়া এবং তার সাথে মোকাবেলা করার শক্তি ও হিম্মত এবং সক্ষমতা আল্লাহ সবাইকে দেন নাই। রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দাজ্জালের ব্যাপারে শুনবে সে যেন এটি না বলে যে,আমি ইমানদার! আমি তার মোকাবেলায় যাচ্ছি! অনেক ইমানদার ব্যক্তি এই বিশ^াস নিয়ে তার কাছে যাবে। এই ধারণায় যাবে যে, আমরা অনেক বড় ইমানদার! কিন্তু দাজ্জাল নিজের যাদুতে তাকে এতটায় সন্দেহে ফেলে দেবে যে, সে দাজ্জালের হাতে নিজের ইমান বিক্রি করে দিয়ে ফিরে আসবে। সে নিজের ইমান থেকে হাত ধুয়ে বসবে। ইমানদারদের জন্য নির্দেশ হবে যে, তার মোকাবেলা করার পরিবর্তে নিরাপদ আশ্রয়ের জায়গা খুঁজে নাও!
আল্লাহ তাআলা দাজ্জালকে হত্যা করার জন্য এবং তার মোকাবেলা করার জন্য হযরত ইসা আ. কে নির্বাচন করেছেন। অন্য কেউ তার সামনে যাবে না। এই সময় দাজ্জালের ফেতনা পুরো দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে এবং ইমান বাঁচানো মুশকিল হবে এবং দাজ্জাল মুমিনদের জন্য দুনিয়াকে সংকীর্ণ করে দেবে। যেখানে যেখানে বিজয় অর্জিত হয়েছে মুসলিমরা নিজেদের ইমান বাঁচাতে সেগুলো ছেড়ে দেবে। রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: সে সময় ইমানদাররা হিজরত করে মক্কা-মদিনায় চলে আসবে। অথবা হিজরত করে শামের দিকে চলে যাবে। যারা মক্কা ও মদিনায় থাকবে তারা দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে এবং যারা শামে থাকবে তারা দাজ্জালের অনিষ্টতা থেকে বেঁচে যাবে। কারণ, শাম হল মুসলিমদের শক্তির হেডকোয়ার্টার। মাহদি রা. তখন শামের “আল-গুতা” এলাকায় অবস্থান করবেন। আবু দাউদ শরীফে নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ইমাম মাহদি রা. এই বসতি বা এর কাছাকাছি এলাকায় মুসলমানদেরকে নিয়ে একটি সংরক্ষিত আশ্রয়কেন্দ্র বানিয়ে মুসলিমদেরকে সেখানে নিয়ে এক জায়গায় জড়ো করবেন। এটি ইমাম মাহদি রা. এর অনেক বড় একটি সফলতা যে মুমিনদের ইমান বাঁচানোর জন্য তাদেরকে একটি জায়গায় এনে প্রস্তুত করবেন এবং তাদেরকে উৎসাহ ও শান্ত¡না প্রদানের জন্য নিজেই সেখানে উপস্থিত থাকবেন। হযরত মাহদি রা. কে এই আদেশ করা হবে না যে, আপনি সামনে গিয়ে দাজ্জালের মুখোমুখী হন বা তার মোকাবেলা করেন। বরং তার জন্য নির্দেশ থাকবে আপনি ইমানদেরকে এক জায়গায় জড়ো করুন এবং তাদের ইমানের ফিকির করুন এবং তাদেরকে একটি জায়গায় সংরক্ষিত রাখুন। যতক্ষণ না আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আদেশ আসে এবং হযরত ইসা আ. অবতরণ করেন।
দাজ্জাল দুর্ভিক্ষ নিয়ে আগমন করবে। ইমানদারদের উপর দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দেবে। তাদের খাওয়ার জন্য কিছুই মিলবে না। যে তার উপর ইমান আনবে তার জন্য সব কিছু সহজ হয়ে যাবে। আর যে দাজ্জালকে অস্বীকার করবে তার জন্য বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে। দুর্ভিক্ষ সে যমানায় সাইয়্যেদুনা ইউসুফ আ. এর যমানার মতো আসবে। ইউসুফ আ. এর মতো হযরত মাহদি রা. দুর্ভিক্ষের পূর্ব প্রস্তুতি নেবেন। কারণ, দুর্ভিক্ষের দিন তো সামনে আসছে। দাজ্জাল আসার আগেই খাদ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে দাজ্জালের পৃথিবীতে অবস্থানের সময়কালে শামের ভূমিতে হিজরত করে আসা ইমানদারদের খাদ্যের ব্যবস্থা থাকে। মাহদি রা. এসব মুমিনের দেখাশোনা করবেন। হযরত ইউসুফ আ. দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে পূর্ব থেকে প্রস্তুতি নিয়ে নিজের প্রজাদের প্রতি দেখাশোনা করেছেন। তেমনিভাবে মাহদি রা. মুসলিমদেরকে এক জায়গায় সংরক্ষিত করে তাদেরকে শান্ত¡না দেবেন এবং তাদের ঐক্য ধরে রাখবেন, তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করবেন, তাদের ইমানের ফিকির করবেন এবং তাদেরকে হেফাজত করবেন এবং সর্বশেষ হযরত ইসা আ. পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেবেন। এটি হযরত মাহদি রা. এর সফলতাগুলোর মাঝে অনেক বড় এক সফলতা
তার ইমামতিতে হযরত ইসা আ. নামাজ আদায় করবেন। তখন মাহদি রা. তার ডেপুটি হবেন। বাকি সমস্ত নামাজে হযতর ইসা আ. ইমামতি করবেন। মাহদি রা. হবেন তার ডেপুটি। আড়াই বছর এক সাথে থাকার পর হযতর মাহদি রা. এর ইনতিকাল হবে। আবু দাউদ শরিফের হাদিস, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: মুসলিমরা তার জানাযার নামাজ পড়বে। হযরত ইসা আ. তার জানাযার নামাজ পড়বেন এবং বাইতুল মাকদিসের কাছাকাছি জায়গায় তাকে দাফন করা হবে। এই হলেন ইসলামের মহান ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত মাহদি ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-মাহদি আল-হাশেমি, আল-মাদানি রা. এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
এরপরই হল দাজ্জালের আবির্ভাব। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই দিক দিয়ে অনেক বড় আলোচ্য বিষয় যে, এটি পৃথিবীর ফেতনাগুলোর মাঝে বড় একটি ফেতনা। তবে এব্যাপারে অনির্ভরযোগ্য অনেক বিষয় প্রসিদ্ধ আছে। রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসের আলোকে নির্ভরযোগ্য বিষয়গুলো যেহেতু সাধারণ মানুষের জানা নেই তাই আমরা সামান্য সেদিকে ফোকাস করবো ইনশআল্লাহ এবং সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করবো।
دجال (দাজ্জাল) শব্দটি دجل থেকে নির্গত; যার অর্থ হল ধোকা, প্রতারণা এবং জালিয়াতি, মিথ্যাকে সত্য হিসেবে পেশ করা এবং সত্যকে মিথ্যা হিসেবে পেশ করা। দাজ্জাল দুনিয়াতে কবে এসেছে এবং তার ফেতনা কী? সে এখন কোথায় আছে এবং কবে দুনিয়াতে আত্মপ্রকাশ করবে? তার ফেতনার ধরণ কেমন হবে? সে নিহত হবে কিভাবে? দাজ্জালের পূর্বে কি দুনিয়াতে দাজ্জালিয়াত আসবে? এই দাজ্জালিয়াত কোন কোন সুরতে আমাদের সামনে আসছে এবং আমরা এর ফেতনা থেকে কিভাবে বাঁচতে পারব? এগুলো দাজ্জাল বিষয়ক আলোচনায় অনেক বড় বড় প্রশ্ন।
প্রথম কথা হল দাজ্জাল কোন যুগে দুনিয়াতে এসেছে?
প্রিয় ভাইয়েরা আমার! দাজ্জাল দুনিয়াতে আজও বিদ্যমান আছে এবং এই বিদ্যমানতা আজকের যুগেই নয়। বরং নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগ থেকে সে বিদ্যমান আছে এবং তারও পূর্বে সে বিদ্যমান ছিল। ইসলামি ইতিহাসে এব্যাপারে দু’টি বর্ণনা পাওয়া যায়। একটি বর্ণনা হাদিসে এসেছে। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: “দাজ্জাল দুনিয়াতে এসেছে এই আলোচনা সর্বপ্রথম হযরত নুহ আ. নিজের সম্প্রদায়কে বলেছিলেন।” এথেকে এটি প্রমাণিত হয় যে, তার জন্ম হযরত নুহ আ. এর যমানায় কোথাও হয়েছিল এবং রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিস হল তার বাবা-মা কাফের ছিল। ত্রিশ বছর যাবত তাদের কোন সন্তান হয়নি। ত্রিশ বছর পর সে জন্মগ্রহণ করেছে। তার শারীরিক গঠনের বিস্তারিত আলোচনা সামনে করবো ইনশাআল্লাহ
সুতরাং এক বর্ণনা মতে সে নুহ আ. এর যুগের কাছাকাছি সময়ে দুনিয়াতে এসেছে। দ্বিতীয় বর্ণনামতে, সে হযরত সুলাইমান আ. এর যুগে এবং দাউদ আ. এর নবুওয়াত ও বাদশাহির শেষ সময়ে কোথাও জন্মগ্রহণ করেছিল। এই বর্ণনার সনদ শক্তিশালী এবং এর সমর্থনে আরও অনেক বর্ণনা আছে। ফেতনার হাদিসের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ আলিমগণের কাছে এই দ্বিতীয় বর্ণনাটি প্রথম বর্ণনার চেয়ে অধিক শক্তিশালী। এর দলীল অনেক আছে। যাই হোক, আর কিছু বুঝে আসুক বা না আসুক, এটি বুঝে নেওয়া জরুরী যে, দাজ্জাল সুলাইমান আ. এর যমানায় নিশ্চিত বিদ্যমান ছিল এবং সুলাইমান আ. যেভাবে অন্যান্য জি¦নদেরকে বন্দী করেছেন, তেমনিভাবে দাজ্জালকেও বন্দী করে রেখেছেন। দাজ্জাল ঘুরে ফিরে নষ্টামি করত এবং লোকদেরকে ভয় দেখাত। ফলে সুলাইমান আ. তাকে উপাধি দিয়েছেন আল-মাসিহ।
তার লিঙ্গ কী? সে মানুষ নাকি জিন্নাতের অন্তর্ভ্ক্তু? কাদের অন্তর্ভ্ক্তু? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিসে তো এব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, সে মানুষের অন্তর্ভুক্ত। তার বাবা-মা থাকবে এবং সে তার মায়ের পেট থেকে জন্মগ্রহণ করেছে। সুতরাং সে মানুষ এবং বাশার। জি¦ন নয়। কিন্তু তার যে অভ্যাস, তার যে শক্তি এবং তার যে কাজ-কর্ম আল্লাহ দিয়েছেন তা জি¦নদের থেকেও শক্তিশালী।
পরের কথা হল দাজ্জালের শারীরিক বৈশিষ্ট্য কী হবে? রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসের তার শারীরিক গঠনের পূর্ণ বিবরণ এসেছে। তার এসব বৈশিষ্ট্য আমরা রহস্যের অধীনে একটু সামনেই আলোচনা করবো। এখন তার শারীরিক বৈশিষ্ট্য বাদ দিয়ে আমরা প্রথমে তার উপাধি নিয়ে আলোচনা করছি। তার অপাধী হল মাসিহ । আশ্চর্যের ব্যাপার হল দাজ্জালের উপাধিও মাসিহ এবং ইসা আ. এর উপাধিও মাসিহ। এটি মূলত আল্লাহ তাআলার পূর্ণ প্রজ্ঞার বিষয় যে, আল্লাহ তাআলা উভয়ের উপাধি মাসিহ রেখেছেন। অথচ উভয়ের ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ ভিন্ন। উভয়ের প্রোগ্রাম পৃথক। উভয়ের উপাধির ক্ষেত্রে এর অর্থ পৃথক পৃথক। কিন্তু এতে দুনিয়ার সবচেয়ে হুঁশিয়ার জাতিও ধোকা খেয়ে যাবে। ইসা আ. এর উপাধিও “মাসিহ” এবং দাজ্জালের উপাধিও “মাসিহ”। মাসিহ শব্দটি “মাসহ” শব্দ থেকে গৃহীত। আমরা যেমন মাথা মাসেহ করি, এই অর্থে মাসহ এর অর্থ হল হাত ফেরানো।
সাইয়্যেদুনা ইসা আ. কে এজন্য মাসিহ বলা হয় যে, তার কাছে কোন অসুস্থ রোগী আসলে তিনি যদি তার শরীরে হাত দিয়ে মাসহ করতেন তাহলে সে সুস্থ হয়ে যেত। তার অসুস্থতা দূর হয়ে যেত। তার কাছে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগী আসলে তিনি চোখে হাত বুলিয়ে দিলে দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসত! এমনকি একজন মৃত ব্যক্তির শরীরে তিনি হাত বুলিয়ে বলতেন, আল্লাহর আদেশে দাঁড়িয়ে যাও! তখন সে জীবিত হয়ে দাঁড়িয়ে যেত। তার এসব মু’জিযার কারণেই তাকে “মাসিহ” উপাধি দেওয়া হয়। অর্থাৎ তিনি হলেন আমাদের সাইয়্যেদ ইসা আল-মাসিহ আ.।
দাজ্জালের উপাধিও হবে “মাসিহ”। কিন্তু এই উপাধি মাসহ থেকে নয়। দাজ্জালের মাসিহ শব্দের মাঝে মিম অক্ষরটি মূল উপাদানের অন্তর্ভ্ক্তু নয়। ইসা আ. এর মাসিহ শব্দের মাঝে মূল অক্ষর তিনটি মিম, সিন এবং হা। যার অর্থ হল হাত বুলিয়ে সুস্থতা দানকারী। কিন্তু দাজ্জালের মাসিহ’র ভিতরে মূল অক্ষরের মাঝে মিম অন্তর্ভুক্ত নয়। এখানে মূল অক্ষর হল সিন, ইয়া এবং হা। যা সিয়াহাত থেকে নির্গত এবং যার অর্থ হল ঘুরে ফিরে খুব তীব্রতার সাথে ফেতনা বিস্তারকারী। সিয়াহাত থেকে অর্থ হয় পুরো দুনিয়া ভ্রমণকারী এবং পুরো দুনিয়ায় ফেতনা বিস্তারকারী। এটি হল তার উপাধির অর্থ।
এটি আল্লাহ তাআলার প্রজ্ঞার বিষয় যে, উভয়ের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন। ইসা আ. হাত বুলানোর কারণে মাসিহ হয়েছেন এবং দাজ্জাল ঘুরাঘুরির কারণে মাসিহ হয়েছে। যেহেতু উভয়ের উপাধি এক, দুনিয়ার সবচেয়ে সচেতন জাতি এবং নিজেদেরকে হুঁশিয়ার মনে করা জাতি ইসা আ.কে মাসিহে দাজ্জাল মনে করবে এবং দাজ্জালকে ইসা মাসিহ মনে করবে। রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দয়া ও অনুগ্রহ যে, তিনি নিজ উম্মতকে বলে দিয়েছেন এই দুই মাসিহ ভিন্ন ভিন্ন। ইসা আ. কে মাসিহুল হুদা বলা হয় এবং দাজ্জালকে মাসিহুদ দলালাহ বলা হয়। যে মাসিহ হেদায়াতের বার্তা নিয়ে আগমন করবেন তিনি হলেন ইসা আ.। আর যে মাসিহ ভ্রষ্টতা ও গোমরাহি নিয়ে আগমন করবে তার উপাধি হল দাজ্জাল। এই হল মাসিহুল হুদা এবং মাসিহুদ দলালাহ’র অর্থ।
দাজ্জাল কখন কবে দুনিয়াতে আসবে? যদি সে দুনিয়াতে থাকে তাহলে কোথায় আছে? যদি নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্ব থেকেই সে থেকে থাকে তাহলে কেন কারও অনুসন্ধানে আসেনি এবং কারও নাগালের ভিতরে কেন নেই? কারও সাথে কেন তার সাক্ষাত হয়নি? সে দুনিয়াতে সামনে এবং প্রকাশ্যে কেন আসছে না? এব্যাপারে কথা হল আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে কিছু জিনিস লুকিয়ে রেখেছেন। দুনিয়ার নজর, দুনিয়ার অভিজ্ঞতা এবং সাইন্স সে পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। যেমন ইয়াজুজ-মাজুজ। মানুষের চেয়েও যারা সংখ্যায় বেশি তারা কোথায়? আল্লাহ তাআলা বলেন: তোমরা তাদের পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। বাকি থাকে একথা যে, দাজ্জাল দুনিয়ার কোথায় হতে পারে এবং দুনিয়ার কারও সাথে তার সাক্ষাত হয়েছে কি হয়নি? আর সে দুনিয়াতে কখন আত্মপ্রকাশ করবে? তার আত্মপ্রকাশের আলামতগুলো কী কী? এব্যাপারে অনেক বড় একটি হাদিস সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যেখানে বিস্তারিত আলোচনা বিদ্যমান রয়েছে। এটি সহিহ মুসলিমের কিতাবুল ফিতানে বর্ণিত হয়েছে। হাদিসটি খুবই আকর্ষণীয়।
হাদিসটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই: ইয়েমেনে বসবাসকারী এক লোক যে খৃষ্টান ছিল; তার সম্পর্ক ছিল জুযাম গোত্রের সাথে। যেমনিভাবে লোকেরা ব্যবসার উদ্দেশ্যে সমুদ্র ভ্রমণ করে তেমনিভাবে সেও ব্যবসার উদ্দেশ্যে সমুদ্র ভ্রমণে বের হয়েছিল। সমুদ্রে হঠাৎ তোফান শুরু হলে তারা পথ হারিয়ে ফেলে। হাদিসটি স্বয়ং তার থেকেই বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন: পুরো এক মাস আমরা কোথায় কোথায় ঘুরেছিলাম তা আমাদের জানা নেই।এরপর আমরা একটি উপদ্বীপে গিয়ে পৌঁছলাম। সেটি দুনিয়ার কোন জায়গা তা আমাদের জানা নেই। আমরা সেখানে অবতরণ করলে দেখলাম যে, নিকটই একটি খোলা প্রান্তর এবং এখানে কোন মানুষের বসবাস নেই। একদিকে কিছু বৃক্ষ নজরে আসলে আমরা সেদিকে গেলাম যে, সম্ভবত সেখানে কোন মানুষের সাক্ষাত পাবো; যার কাছে আমরা রাস্তার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে পারবো এবং নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারব। বর্ণনাকারী এই লোকটির নাম হল আবু তামিম দারি, খৃষ্টান এবং ইয়েমেনী ছিল। তিনি বলেন: আমরা একটি জন্তুকে দেখতে পেলাম; যার দেহে বড় বড় পশম ছিল। সে আমাদেরকে দেখে থেমে গেল এবং মানুষের মতো আমাদের সাথে কথা বলতে লাগল যে, তোমরা কারা? কোত্থেকে এসেছ? আমরা প্রথমে ভয় গেলাম যে, এটি কি কোন জি¦ন? সে তো জন্তু, কিন্তু মানুষের মতো কথা বলছে, কথা বলতে পারছে! আমরা ভয় পেয়ে গেলাম। সে বলল: ভয় পেয়ো না! এখানে কাছেই একটি জায়গা আছে এবং একটি ঘাঁটি আছে। তোমরা সেখানে যাও। সেখানে এক লোক আছে যে তোমাদেরকে তোমাদের পথের সন্ধান দেবে। তোমরা তার সাথে সাক্ষাত করো। সে পৃথিবীর কোন মানুষের সাক্ষাতের গভীর আগ্রহে আছে। বর্ণনাকারী বলেন: আমরা গিয়ে তাকে দেখলাম যাকে শিকল দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে। আমরা তার দেহের বিস্ময়কর ও বিরল গঠন দেখে ভয় পেয়ে গেছি। তার সাথে কথা বলা শুরু করলে সে আমাদের ভাষা বুঝতে পারল। সে আমাদের সাথে সব বিষয়ে কথা বলেছে। তাদের এই কথোপকথনের সারাংশ আমি এখানে তুলে ধরছি। তবে তার আগে এটি বুঝা জরুরী যে, শিকলে আবদ্ধ যে লোকটি কথা বলছিল এবং শিকলে আবদ্ধ ছিল সে ছিল দাজ্জাল। আর যে লোকটি কথা বলছিল সে ছিল একজন খৃষ্টান এবং তার নাম ছিল আবু তামিম দারি।
দাজ্জালের সাথে সাক্ষাতের পর সে আর নিজের দেশে ফিরে যায়নি। বরং দাজ্জালের এই আলোচনার পর যখন বিষয়টি বুঝে আসছে তখন সাথে সাথে মদিনায় চলে গেছে এবং রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে শুনিয়েছে। তারপর সে মুসলমান হয়ে গেছে এবং সাহাবিয়াতের দরজা অর্জন করেছে। হযরত আবু তামিম দারি রা.।
এখন তাদের মাঝে কথোপকথন হয়েছে আমি তা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। দাজ্জাল বলল আমি যে বিষয়গুলো জিজ্ঞাসা করছি সেগুলোর ব্যাপারে আমাকে অবহিত করো। এরপর আমি তোমাদেরকে আমার ব্যাপারে বলবো। দাজ্জাল মূলত তিনটি প্রশ্ন করবে। আর এই তিনটি প্রশ্নই মূলত দাজ্জালের দুনিয়াতে আসার তিনটি আলামত যে, সে দুনিয়াতে কবে আসবে। একটি আলামত প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত মাহদি রা. এর হাতে ইস্তাম্বুল বিজয় হবে। এটি দাজ্জালেরর আত্মপ্রকাশের কাছাকাছি সময়ে হবে এবং এর পরপরই দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে।
দাজ্জাল তাদেরকে প্রশ্ন করল, বলো: দুনিয়ার অবস্থা কেমন? তারা উত্তরে বলল: একদম ঠিক। সে জিজ্ঞাসা করল: সেখানকার বাইসানের অবস্থা কেমন? এটি ফিলিস্তিনের নিকটবর্তী পৃথিবীর একটি বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ খেজুরের বাগান। সারা পৃথিবীর মানুষই জানে যে, দুনিয়ার সর্বোত্তম খেজুর বাইসানের খেজুর বাগানের। ফলনশীল অনেক বড় ও ঘন একটি খেজুর বাগান। উত্তরে তারা বলল: সেটি এখনও ফল দেয়। দাজ্জাল বলল: খুব দ্রæতই এই বাগানটি খেজুর দেওয়া বন্ধ করে দেবে। এরপর সে জিজ্ঞাসা করল: যুগারের ঝর্ণার ব্যাপারে তোমরা আমাকে বলো? যুগারের ঝর্ণাটি মৃত সাগরের নিকটে অবস্থিত; যেখানে লুত আ. এর সম্প্রদায় বসবাস করত। সেখানে অনেক বড় একটি ঝর্ণা ছিল। এই ঝর্ণা থেকে এত পানি বের হত যে, লোকেরা সেখান থেকে নিজেদের ক্ষেতে পানি সেচ করত। যুগারের কাছাকাছি হযরত লুত আ. এর এক মেয়ের কবর আছে। আর তার নামেই এই ঝর্ণাটির নাম যুগারের ঝর্ণা বলা হয়ে থাকে। দাজ্জালের প্রশ্নের উত্তরে তারা জানাল: হ্যাঁ সেখানে পানি আছে এবং সেখানকার মানুষ তা দিয়ে নিজেদের ক্ষেতে সেচ করে। সে বলল: খুব শীঘ্রই যুগার ঝর্ণার পানি আসা বন্ধ হয়ে যাবে এবং মানুষ তা দিয়ে নিজেদের ক্ষেত খামার করতে পারবে না এবং এই ঝর্ণা শুকিয়ে যাবে। এরপর সে তৃতীয় প্রশ্ন করল যে, তিবরিয়া সমুদ্রের ব্যাপারে আমাকে বলো। সেটি কি অবস্থায় আছে? তাতে কি পানি আছে? তারা উত্তর দিল: অনেক পানি আছে। সে বলল: খুব শীঘ্রই এর পানি শুকিয়ে যাবে। যখন এই তিনটি জিনিস পূর্ণ হয়ে যাবে তখন আমি দুনিয়াতে আসবো।
আমি তোমাদেরকে আমার নিজের পরিচয় দিচ্ছি। আমি হলাম মাসিহ আদ-দাজ্জাল। পৃথিবীতে যখন বাইসানের খেজুর বাগান শেষ হয়ে যাবে এবং যখন যুগারের ঝর্ণা শুকিয়ে যাবে, যখন তিবরিয়া সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যাবে তখন আমি দুনিয়াতে আত্মপ্রকাশ করবো। বর্তমানে বাইসানের খেজুর বাগান ফিলিস্তিনের অধীনে নেই। ১৯৪৭ সালে যখন ইসরাইল ফিলিস্তিনে আক্রমণ করে তখন তারা বাইসান জেলাকেও নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। এটি ইসরাইল ও জর্ডানের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। বাইসান জেলাটা অনেক বড় আবাদি এলাকা। এখানকার খেজুর বাগানগুলো ইসরাইলের দখলে চলে গেছে এবং এই দখলের পর থেকে ধীরে ধীরে বাগানটি উজাড় হতে শুরু করে। ছয় থেকে আট বছর আগে বাইসানের খেজুর বাগানের যে পিকচার ছিল তাতে কিছু বৃক্ষ বাকি ছিল, কিন্তু বাকি সব বৃক্ষ উজাড় হয়ে গেছে। অপর একটি পিকচারে তারিখও দেওয়া ছিল ০৭/১২/২০১১ ইং। এটি ক্যামেরার তারিখ যা পিকচারের উপর দিয়ে ছিল। সেখানে যে সাথীরা গিয়েছিল তারা এই নতুন পিকচারটা তুলেছিল। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, এই বাগানটি পুরোপুরি উজাড় হয়ে গেছে এবং সেখানকার ভূমি একদম খালি। সহিহ মুসলিমে এই বর্ণনাটি আরও বিস্তারিতভাবে আছে।
দাজ্জাল যুগার ঝর্ণার ব্যাপারে দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি করেছিল সে ঝর্ণা কয়েক যুগ হয়ে গেছে যে, তার নাম ও নিশানও মিটে গেছে। বর্তমান পৃথিবীর মানুষ এটাও জানে না যে, কোথায় যুগার ঝর্ণাটি ছিল। এটি বর্তমানে নির্দিষ্ট নয়। বর্তমানে এটি কোথায় আছে এব্যাপারে কোন তথ্য নেই।
বাকি রইল তিবরিয়া সমুদ্রের কথা। এটি হল তৃতীয় আলামত। এটিতে এখনও কিছু পানি বিদ্যমান আছে। মূলত এই তিবরিয়া সমুদ্র কোন সমুদ্র নয়। বরং একটি সমুদ্রের লিংক এটি। সমুদ্র থেকে পানি এসে এখানে জমা হয়। সমুদ্রের মতো বিশাল আকারের একটি হ্রদ। এটি পাহাড়ের ভিতরে অবস্থিত। যাতে অনেক পানি জমা হয়। ইসরাইলের দখলের আগে এক সময় এটিতে অনেক পানি ছিল। তার পাশে যে ছোট ছোট পাহাড় আছে সেগুলোর কিনারেও পানি চলে আসত। বর্তমানে তথা আজ থেকে দেড়/দুই বছর আগে যে সাথীরা সেখানে গিয়েছিল তারা বলেছেন যে, তাতে পানি দুই বা আড়াই ফুটের অধিক হবে না। একটা সময় ঐ পাহাড়গুলো পর্যন্ত তার পানি ছিল। এটি পরিপূর্ণ ভরা তিবরিয়া সমুদ্র ছিল। বর্তমান নতুন পিকচার বলছে তার পানি শুকাতে শুকাতে দুই/আড়াই ফুট নিচে চলে এসেছে। বেশি পানি তাতে নেই। অথচ চিত্র বলছে যে, এতে এক সময় কমপক্ষে দশ/বারো ফুট পানি ছিল। কিন্তু এখন আড়াই ফুটের চেয়ে বেশি পানি নেই। তার পানি একদম শুকিয়ে যাওয়া এবং নিঃশেষ হয়ে যাওয়া দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের মূল একটি আলামত। এটি দাজ্জাল নিজেই তামিম দারি রা. এর সাক্ষাতে বলে দিয়েছে এবং জিজ্ঞাসা করেছে যে, এসব এলাকার অবস্থা কেমন? সর্বশেষ সে বলেছে আমি মাসিহে দাজ্জাল। তোমাদের আরবদের কী অবস্থা? তারা বলল: আমরা শুনেছি যে, আরবে এক লোক আগমন করেছে। সে বলছে যে, আমি আল্লাহর রাসুল! সে জিজ্ঞাসা করল: তোমরা কি তার প্রতি ইমান এনেছ? তারা বলল: আমরা তো ইমান আনিনি। আমরা তো ইয়েমেনের বাসিন্দা। দাজ্জাল বলল: আমি যখন আসবো তখন ফেতনা ছড়িয়ে পড়বে। আমার উপদেশ শুনে নাও! যদি তোমরা হেদায়াত পেতে চাও তাহলে সে নবীর আনুগত্য করো এবং তার অনুসরণ করো। মানুষকে গিয়ে আমার বার্তা দিয়ে দাও যে, আমার আগমনের পূর্বে তোমাদের কাছে সময় আছে। তোমাদের ভালো এতেই যে, তোমরা এই নবির আনুগত্য করবে। অন্যথায় যখন আমি দুনিয়াতে আসব তখন সর্বদিকে ইসলামকে শেষ করে দেবো এবং এটি এত বড় ফেতনা হবে যে, লোকেরা তার মোকাবেলা করতে পারবে না।
এই হল দাজ্জালের সাথে সাক্ষাতের বর্ণনা। এই সাহাবি সেখান থেকে ফিরে সোজা মদিনা তাইয়্যেবায় চলে আসে এবং আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিস্তারিত অবস্থা বর্ণনা করে। আর দাজ্জাল এটিও বলে দিয়েছে যে, আমি পুরো পৃথিবীতে প্রবেশ করবো, শুধু মক্কা ও মদিনা এবং শামের ঐ এলাকা ব্যতীত যেখানে মাহদি রা. মুসলিমদের সাথে থাকবেন। সম্ভাবনা রয়েছে যে, সে শামেও যাবে, তবে সেখানে প্রবেশের আগেই হযরত ইসা আ. অবতরণ করবেন। নির্দিষ্টভাবে যে দুইটি এলাকায় সে প্রবেশ করতে পারবে না, সে এলাকাগুলোতে আসলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে সে দু’টি এলাকা হল মক্কা ও মদিনা। হযরত তামিম দারি রা. যখন ফিরে আসলেন এবং রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল এবং সে ইসলাম গ্রহণ করল এবং ইসলাম গ্রহণের কারণও এই ঘটনা হল তখন রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে ডাকলেন এবং সাধারণ মজলিসের ডাক দিলেন এবং সমস্ত ঘটনা সেখানে খুলে বললেন যে, এই এই হয়েছে, এই এই হয়েছে। লোকেরা! তোমাদের জন্য এটিই সুযোগ যে, তোমরা আমার আনুগত্য করবে। রাসুল আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত খুশির সাথে নিজের ছড়ি মিম্বরে মারলেন এবং বললেন: এটি আমার পবিত্র শহর! এটি আমার পবিত্র শহর! এটি আমার পবিত্র শহর!! তিনবার একথা বললেন। যেখানে দাজ্জাল ফেতনা নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।
দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের আলামত:
১―ইস্তাম্বুল বিজয়
২―বাইসানের খেজুর বাগান
৩―যুগারের ঝর্ণা
৪―তিবরিয়া সমুদ্র শুকিয়ে যাওয়া।
দাজ্জালের আগমনের আগে পৃথিবীর অবস্থা কেমন হবে? এবং দাজ্জাল কোন পরিস্থিতিতে আসবে? রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: দাজ্জাল আসার তিন বছর পূর্ব থেকে মুসলিমদের উপর দুর্ভিক্ষ শুরু হবে। অর্থাৎ প্রথম বছর এমন হবে যে, আসমান থেকে তিন ভাগের একভাগ পানি আসা বন্ধ হয়ে যাবে এবং জমিন থেকে এক তৃতীয়াংশ ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। দ্বিতীয় বছর অর্ধেক বৃষ্টি এবং অর্ধেক ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। আর তৃতীয় বছর আসমান থেকে এক ফোঁটা পানিও আসবে না এবং জমিন থেকেও কোন ফসল উৎপন্ন হবে না। লোকেরা দুর্ভিক্ষের ফলে ক্ষুধার্ত হয়ে মরবে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে দুনিয়াতে দাজ্জাল আগমন করবে। আমরা দাজ্জালের ফেতনাগুলো এতটা গুরুত্ব, এতটা ভয় ও আতঙ্কের সাথে কেন বর্ণনা করছি? দাজ্জাল কি এমন সত্তা যাকে ভয় করা উচিত? দাজ্জালের কাছে এমন কি আছে যা ভয়ের কারণ? এমন কি জিনিস যা তার সত্তাকে ভয়ংকর করে তুলছে?
তাহলে শুনোন! নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা স্বরূপ আসবে। তার কাছে যেহেতু অনেক ধরণের ক্ষমতা থাকবে যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পরীক্ষা স্বরূপ তাকে দেওয়া হবে। একারণে তার হাতে মৃত ব্যক্তিও জিন্দা হয়ে যাবে। সে জমিনকে অনুর্বর করে দেবে। যে তাকে খোদা মানবে তাকে সে অনুর্বর জমিনকে উর্বর করে দেবে। কিন্তু এটি মূলত একটি পরীক্ষা। রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে, আদম আ. এর সৃষ্টি থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত দাজ্জালের ফেতনার চেয়ে বড় কোন ফেতনা নেই। এটি সহিহ বুখারি ও মুসলিমের হাদিস।
এরপর বিষয় হল তার ফেতনার বিস্তার অনেক। পুরো দুনিয়ার দুই/তিনটি এলাকা ব্যতীত, দুই/তিনটি শহর ব্যতীত কোন জায়গা এমন থাকবে না যেখানে সে প্রবেশ করবে না এবং লোকদেরকে গোমরাহ করবে না। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নামাজের পর নিয়মিত দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় চাইতেন। সাইয়্যেদা আয়েশা রা. বর্ণনা করেন যে, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জিন্দেগীর এমন কোন নামাজ ছিল না যা তিনি আদায় করেছেন, কিন্তু দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় কামনা করেননি।
اللهم إني أعوذ بك من عذاب القبر وأعوذ بك من عذاب جهنم وأعوذ بك من فتنة المسيح الدجال وأعوذ بك من فتنة المحيا والممات
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাচ্ছি এবং জাহান্নামের আজাব থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি এবং মাসিহে দাজ্জালের ফেতনা আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি এবং আপনার কাছে জীবন ও মরণের ফেতনা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।”
এই দুআ নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নামাজের পর করতেন। দুনিয়াতে এমন কোন নবি আসেননি যিনি নিজ উম্মতকে দাজ্জালের ফেতনার ভয় দেখাননি এবং বলেননি যে, সে অবশ্যই দুনিয়াতে আসবে। কিন্তু নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিস্তারিতভাবে দাজ্জালের ফেতনা বয়ান করেছেন। দাজ্জালের কার্যক্রম এবং আল্লাহ তাআলা পরীক্ষা স্বরূপ তাকে যে সক্ষমতাসমূহ দিয়েছেন সেগুলোকেই তাকে ভয়ংকর বানিয়ে দেয়। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী; জীবিত করা, মৃত্যু দেওয়া, ফসল উৎপাদন করা, বৃষ্টিকে আদেশ করা, জি¦ন ও শয়তান তার অনুগত হওয়া। রাসুলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: সে তোমাদের ইমানের উপর আক্রমণ করবে এবং খোদায়ী দাবি করবে যে, আমিই তোমাদের খোদা! আমাকে মেনে নাও!
এখানে দু’টি কথা স্মরণ রাখুন; এক হল দাজ্জালের শারীরিক বৈশিষ্ট্য, যে ব্যাপারে নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে, সে এক চোখা হবে এবং তার আরেক চোখে সমস্যা থাকবে।
এখন বলুন তো এক চোখের অধিকারী হওয়া দোষের বিষয় নাকি ভাল বিষয়? যেহেতু এক চোখের অধিকারী হওয়া দোষের বিষয় তাই দাজ্জালের এক চোখা হওয়ার সমস্যা দূর করার জন্য কুফরি জগৎ বিশাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে এক চোখকে সারা পৃথিবীতে এমনভাবে প্রসার করা হচ্ছে যে কেউ টের পাচ্ছে না। যেন দাজ্জালের দোষ আর কোন দোষ না থাকে। বিশেষ করে যেগুলো জাগতিক উপকরণ, ব্যবহৃত জিনিস, শ্যাম্পু, টি-শার্ট, টিভি প্রোগ্রাম, নেট প্রোগ্রাম ইত্যাদিতে আপনি যত বেশি ফিকির করবেন আপনি হয়রান হয়ে যাবেন। বিস্তারিত আলোচনার সময় এখানে নেই। অনেক জিনিস এই সিম্বল সম্বলিত রয়েছে। আমরা একশতের অধিক জিনিস একত্রিত করেছি যেগুলোতে এক চোখের নিশান দেওয়া আছে। এই দোষকে শেষ করে দেওয়ার জন্য মাথার ক্যাপ এবং টি-শার্টে এক চোখের আকৃতিতে অনেক জিনিস আছে। আমাদের ফয়সালাবাদে অনেক জিনিস পড়ে আছে এই সিম্বল নিয়ে। একটি গাড়ি সকালবেলা ফ্রিতে মাথার ক্যাপ বিতরণ করছিল। আমরা জানতে পারলাম যে, এই ক্যাপের উপর এক চোখের সিম্বল খুব সুন্দর করে মেশিনে ছাপানো ছিল।
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যেহেতু সে শয়তানের রাজত্ব কামনা করছে এবং নিজেকে নিজে খোদা দাবি করছে, তাই সে একটি নিশান নিয়ে আসবে যা মূলত শয়তানের দুই শিংয়ের নিশান হবে। তার একটি নিশান শয়তানিয়াতের প্রতি যে, আমরা শয়তানের অনুসারী এবং শয়তানের পূজারী এবং শয়তানের দুই শিংয়ের দিকে ইশারা করা হচ্ছে। বর্তমান পৃথিবীতে মহব্বত ও শান্তির নিদর্শন হিসেবে এই সিম্বল প্রদর্শন করা হচ্ছে। বড় বড় ব্যক্তিরা, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও সেলিব্রেটিরা সাধারণ মানুষের সামনে এসে সালামের পরিবর্তে হাত দিয়ে এই ইশারা করে । এর বিস্তারিত আলোচনার সময় এখন নেই। তারা এই চোখের সিম্বল ও শিংয়ের সিম্বল ইবাদাত হিসেবে করে যে, এটি শয়তানের পূজার একটি পদ্ধতি। ইবলিসকে স্মরণ করার একটি সিস্টেম।
চলবে ইনশআল্লাহ......
সূত্র:নওয়ায়ে গাযওয়ায়ে হিন্দ- জুন-২০২০ইং সংখ্যা থেকে অনূদিত১ম পর্বের লিংক:
https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B0
২য় পর্বের লিংক:
https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B0
৩য় পর্বের লিংক:
https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B0
৪র্থ পর্বের লিংক:
https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B0
৫ম পর্বের লিংক:
Comment