সংশয়ঃ ফি সাবিলিল্লাহ’র সকল আয়াত-হাদিস তাবলীগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে
প্রশ্ন — আল্লাহর রাস্তার আম ও খাস কোন অর্থ আছে কি ?আল্লাহ রাস্তা বিষয়ক হাদিসগুলো কি শুধুই জিহাদের জন্য প্রযোজ্য এবং আল্লাহর রাস্তায় বের হলে যে ফজিলতগুলো বর্নিত হয়েছে এগুলো কি শুধুই জিহাদের জন্য প্রযোজ্য??
আর এই ফজিলত কি তাবলিগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয় কি??? জাযাকাল্লাহ খায়ের। (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
.
#উত্তর —
.
জিহাদ সংক্রান্ত কিছু সংশয় নিরসন — মুফতী সাইদ আহমাদ পালনপুরী (হাফিযাহুল্লাহ)
শাইখুল হাদীস ও মুফতী দারুল উলুম দেওবন্দ
জিহাদ কুরআন ও হাদিসের একটি বিশেষ পরিভাষা। তাঁর অর্থ হল দ্বীন ইসলামের প্রতিরক্ষা ও সমুন্নত করার লক্ষ্যে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
শব্দ বিবেচনায় জিহাদ শব্দটির দু ধরনের ব্যবহার পাওয়া যায়,
১) جاهد العدو مجاهدة جهادا
অর্থাৎ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা
২) جاهد في الامر
কোন কাজে পূর্ণ শক্তি ব্যয় করা ও প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালানো।
এই অর্থেই বলা হয়ে থাকে মোজাহাদা।
কুরআন ও হাদীসে জিহাদ শব্দের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার পাওয়া যায়, কোথাও শুধু جهاد و مجاهدة এসেছে। কোথাও তার পরে في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ — অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায়) যুক্ত হয়েছে। কোথাও আবার الله في (ফি আল্লাহ) ও فينا যুক্ত হয়েছে।
এমনকি سبيل الله (সাবিলিল্লাহ) শব্দটিও কখনো একাকী ব্যবহার করা হয়েছে কখনো جهاد এর সাথে মিলে ব্যবহৃত হয়েছে।
.
এক্ষেত্রে জিহাদের অর্থ বিভ্রাট থেকে বাঁচার জন্যে একটি একটি মূলনীতি অনুসরণ করা যেতে পারে। যা মূলত নুসূসের আলোকে গৃহিত ও অধিক নিরাপদ। এতে ভয়াবহ বিভ্রান্তি ও অনর্থক ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ।
.
যেখানে শুধু مجاهدة শব্দ এসেছে কিংবা তারপর الله في (ফি আল্লাহ) বা فينا এসেছে, সে আয়াতগুলো “আম” (ব্যাপক)। অর্থাৎ সেখানে জিহাদ শব্দটির আভিধানিক যে অর্থে ব্যাপকতা আছে তা উদ্দেশ্য হতে পারবে। যেমন আল্লাহর বাণী —
.
وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ
অর্থঃ আর তোমরা আল্লাহর পথে সর্বশক্তি ব্যয় করো। (সূরা হজ্জ, আয়াত ৭৮)
.
অর্থাৎ ‘যারা আল্লাহর দ্বীনের জন্য পূর্ণশক্তি ব্যয় করে’। অনুরূপ আল্লাহর বাণী —
.
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ
অর্থঃ যারা আল্লাহর দ্বীনের জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালায় আমি তাদের বহু পথের সন্ধান দেই। (সূরা আনকাবূত, আয়াত ৬৯)
.
এই আয়াতদ্বয় এবং এ জাতীয় অন্যান্য আয়াত দ্বীনের সকল প্রচেষ্টাকে শামিল করে। যে কেউ যে কোনো পদ্ধতিতে দ্বীনের জন্য কোন প্রচেষ্টা করবে, সে এই আয়াতগুলোর উদ্দেশ্য হতে পারবে।
.
কিন্তু যেখানে জিহাদ শব্দ এসেছে কিংবা مجاهدة মূল ধাতুর সাথে في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) যুক্ত হয়েছে, অথবা কোথাও শুধু في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ ) বলা হয়েছে (যেমনটা যাকাতের হক্বদার ও আল্লাহর রাস্তায় খরচের আলোচন্যা এসেছে) — এ সকল আয়াত দ্বারা جهاد (জিহাদ) এর খাস (বিশেষ) অর্থ (অর্থাৎ যুদ্ধ) উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
এ কারনেই সূরা তাওবাহর যেখানেই جهاد শব্দ এসেছে সেখানেই শাহ আব্দুল কাদের দেহলবী (রহঃ) এবং তার অনুসরণে শাইখুল হিন্দ (রহঃ) যুদ্ধ করা অর্থ লিখেছেন।
.
এমনিভাবে হাদিস গ্রন্থগুলোতে ابواب الحهاد ও فضائل الجهاد নামে যে শিরোনাম গুলো এসেছে সেখানেও এই বিশেষ অর্থ উদ্দেশ্য। আপনি চিন্তা শক্তিকে জাগ্রত রেখে অধ্যায়গুলো পাঠ করুন। দেখবেন في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) এর বর্ননাগুলো যেখানে উল্লেখ আছে, সেখানেই জিহাদ উদ্দেশ্য।
.
এতে বোঝা গেল في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) শব্দটিও ইসলামের একটি বিশেষ পরিভাষা। যার সুনির্দিষ্ট অর্থ হল আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা। কিন্তু শত দুঃখের বিষয় আমাদের তাবলীগী ভায়েরা এই আয়াতগুলোকে “আম” (ব্যাপক) করে দিয়েছেন।
এমনকি শুধু “আম”ই নয় বরং নিজেদের সাথে “খাস” (সীমাবদ্ধ) করে নিয়েছেন। কারন তারা দ্বীনের কাজগুলোর মধ্যে শুধু তাবলীগকেই জিহাদ বলেন। অন্যান্য দ্বীনি কাজ যেমন তা’লীম, তাদরীস, তাফসীর, তা’লিফ ইত্যাদি কিছুকেই জিহাদ বলেন না।
.
বরং তাবলীগের কিছু সাধারণ সাথী ভাই তো এমন আছে, যারা এগুলোকে দ্বীনের কাজই মনে করে না। আর যখন তারা নিজেদের কাজকেই জিহাদ নাম দিয়ে দিয়েছে তখন কুরআন ও হাদিসের জিহাদের যেসব ফজিলত বর্ণিত হয়েছে তা ঢালাওভাবে নিজেদের কাজের জন্য ব্যবহার করা শুরু করেছে।
আজ বাধ্য হয়ে শত আক্ষেপের সাথে বলতে হয় তাবলীগী ভাইদের এই কাজগুলো কোনভাবেই সহীহ হচ্ছে না।
.
জিহাদ ইসলামের একটি বিশেষ পরিভাষা। কুরআন ও হাদীসে যখন এই শব্দ উল্লেখ করা হয় তখন এর দ্বারা قتال في سبيل الله (ক্বিতাল ফি সাবিলিল্লাহ) উদ্দেশ্য হয়।
প্রশ্ন — আল্লাহর রাস্তার আম ও খাস কোন অর্থ আছে কি ?আল্লাহ রাস্তা বিষয়ক হাদিসগুলো কি শুধুই জিহাদের জন্য প্রযোজ্য এবং আল্লাহর রাস্তায় বের হলে যে ফজিলতগুলো বর্নিত হয়েছে এগুলো কি শুধুই জিহাদের জন্য প্রযোজ্য??
আর এই ফজিলত কি তাবলিগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয় কি??? জাযাকাল্লাহ খায়ের। (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
.
#উত্তর —
.
জিহাদ সংক্রান্ত কিছু সংশয় নিরসন — মুফতী সাইদ আহমাদ পালনপুরী (হাফিযাহুল্লাহ)
শাইখুল হাদীস ও মুফতী দারুল উলুম দেওবন্দ
জিহাদ কুরআন ও হাদিসের একটি বিশেষ পরিভাষা। তাঁর অর্থ হল দ্বীন ইসলামের প্রতিরক্ষা ও সমুন্নত করার লক্ষ্যে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
শব্দ বিবেচনায় জিহাদ শব্দটির দু ধরনের ব্যবহার পাওয়া যায়,
১) جاهد العدو مجاهدة جهادا
অর্থাৎ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা
২) جاهد في الامر
কোন কাজে পূর্ণ শক্তি ব্যয় করা ও প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালানো।
এই অর্থেই বলা হয়ে থাকে মোজাহাদা।
কুরআন ও হাদীসে জিহাদ শব্দের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার পাওয়া যায়, কোথাও শুধু جهاد و مجاهدة এসেছে। কোথাও তার পরে في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ — অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায়) যুক্ত হয়েছে। কোথাও আবার الله في (ফি আল্লাহ) ও فينا যুক্ত হয়েছে।
এমনকি سبيل الله (সাবিলিল্লাহ) শব্দটিও কখনো একাকী ব্যবহার করা হয়েছে কখনো جهاد এর সাথে মিলে ব্যবহৃত হয়েছে।
.
এক্ষেত্রে জিহাদের অর্থ বিভ্রাট থেকে বাঁচার জন্যে একটি একটি মূলনীতি অনুসরণ করা যেতে পারে। যা মূলত নুসূসের আলোকে গৃহিত ও অধিক নিরাপদ। এতে ভয়াবহ বিভ্রান্তি ও অনর্থক ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ।
.
যেখানে শুধু مجاهدة শব্দ এসেছে কিংবা তারপর الله في (ফি আল্লাহ) বা فينا এসেছে, সে আয়াতগুলো “আম” (ব্যাপক)। অর্থাৎ সেখানে জিহাদ শব্দটির আভিধানিক যে অর্থে ব্যাপকতা আছে তা উদ্দেশ্য হতে পারবে। যেমন আল্লাহর বাণী —
.
وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ
অর্থঃ আর তোমরা আল্লাহর পথে সর্বশক্তি ব্যয় করো। (সূরা হজ্জ, আয়াত ৭৮)
.
অর্থাৎ ‘যারা আল্লাহর দ্বীনের জন্য পূর্ণশক্তি ব্যয় করে’। অনুরূপ আল্লাহর বাণী —
.
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ
অর্থঃ যারা আল্লাহর দ্বীনের জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালায় আমি তাদের বহু পথের সন্ধান দেই। (সূরা আনকাবূত, আয়াত ৬৯)
.
এই আয়াতদ্বয় এবং এ জাতীয় অন্যান্য আয়াত দ্বীনের সকল প্রচেষ্টাকে শামিল করে। যে কেউ যে কোনো পদ্ধতিতে দ্বীনের জন্য কোন প্রচেষ্টা করবে, সে এই আয়াতগুলোর উদ্দেশ্য হতে পারবে।
.
কিন্তু যেখানে জিহাদ শব্দ এসেছে কিংবা مجاهدة মূল ধাতুর সাথে في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) যুক্ত হয়েছে, অথবা কোথাও শুধু في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ ) বলা হয়েছে (যেমনটা যাকাতের হক্বদার ও আল্লাহর রাস্তায় খরচের আলোচন্যা এসেছে) — এ সকল আয়াত দ্বারা جهاد (জিহাদ) এর খাস (বিশেষ) অর্থ (অর্থাৎ যুদ্ধ) উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
এ কারনেই সূরা তাওবাহর যেখানেই جهاد শব্দ এসেছে সেখানেই শাহ আব্দুল কাদের দেহলবী (রহঃ) এবং তার অনুসরণে শাইখুল হিন্দ (রহঃ) যুদ্ধ করা অর্থ লিখেছেন।
.
এমনিভাবে হাদিস গ্রন্থগুলোতে ابواب الحهاد ও فضائل الجهاد নামে যে শিরোনাম গুলো এসেছে সেখানেও এই বিশেষ অর্থ উদ্দেশ্য। আপনি চিন্তা শক্তিকে জাগ্রত রেখে অধ্যায়গুলো পাঠ করুন। দেখবেন في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) এর বর্ননাগুলো যেখানে উল্লেখ আছে, সেখানেই জিহাদ উদ্দেশ্য।
.
এতে বোঝা গেল في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) শব্দটিও ইসলামের একটি বিশেষ পরিভাষা। যার সুনির্দিষ্ট অর্থ হল আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা। কিন্তু শত দুঃখের বিষয় আমাদের তাবলীগী ভায়েরা এই আয়াতগুলোকে “আম” (ব্যাপক) করে দিয়েছেন।
এমনকি শুধু “আম”ই নয় বরং নিজেদের সাথে “খাস” (সীমাবদ্ধ) করে নিয়েছেন। কারন তারা দ্বীনের কাজগুলোর মধ্যে শুধু তাবলীগকেই জিহাদ বলেন। অন্যান্য দ্বীনি কাজ যেমন তা’লীম, তাদরীস, তাফসীর, তা’লিফ ইত্যাদি কিছুকেই জিহাদ বলেন না।
.
বরং তাবলীগের কিছু সাধারণ সাথী ভাই তো এমন আছে, যারা এগুলোকে দ্বীনের কাজই মনে করে না। আর যখন তারা নিজেদের কাজকেই জিহাদ নাম দিয়ে দিয়েছে তখন কুরআন ও হাদিসের জিহাদের যেসব ফজিলত বর্ণিত হয়েছে তা ঢালাওভাবে নিজেদের কাজের জন্য ব্যবহার করা শুরু করেছে।
আজ বাধ্য হয়ে শত আক্ষেপের সাথে বলতে হয় তাবলীগী ভাইদের এই কাজগুলো কোনভাবেই সহীহ হচ্ছে না।
.
জিহাদ ইসলামের একটি বিশেষ পরিভাষা। কুরআন ও হাদীসে যখন এই শব্দ উল্লেখ করা হয় তখন এর দ্বারা قتال في سبيل الله (ক্বিতাল ফি সাবিলিল্লাহ) উদ্দেশ্য হয়।
Comment