আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’
(সূরা আসরের আলোকে)
।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ৪র্থ পর্ব
“ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’
(সূরা আসরের আলোকে)
।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ৪র্থ পর্ব
ইলাহের সংজ্ঞা
এখানে কালিমায়ে তায়্যিবার অর্থ সংক্ষেপে আলোচনা করা সমীচীন মনে করছি। ইমাম রাগেব ইস্পাহানী বলেন-
وإله جعلوه اسما لكل معبود لهم، وكذا اللات، وسمّوا الشمس إِلَاهَة لاتخاذهم إياها معبودا.
‘তারা (কাফেররা) তাদের সব প্রভুকে ইলাহ (উপাস্য) নামকরণ করেছে। আর এমনিভাবে লাতকে। সূর্যকেও তারা ইলাহ নামকরণ করেছিল। কারণ, তারা সেটাকেও উপাস্য বানিয়ে নিয়েছিল। সুতরাং ইলাহ অর্থ এখানে উপাস্য।’
আল্লামা ইবনে জারীর তবারী রহ. [مَا تَعْبُدُونَ مِنْ بَعْدِي] আয়াতের তাফসীরে বলেন-
أي شيء تعبدون "من بعدي"؟ أي من بعد وفاتي؟ قالوا:"نعبد إلهك"، يعني به: قال بنوه له: نعبد معبودك الذي تعبده، ومعبود آبائك إبراهيم وإسماعيل وإسحاق،"إلها واحدا"
‘হযরত ইয়াকুব আ. যখন স্বীয় সন্তানদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা আমার মৃত্যুর পর কার ইবাদত করবে? তখন তাঁরা উত্তর দিল, আমরা আপনার উপাস্য, আপনার পিতা-পিতামহ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাক আ. এর উপাস্যের ইবাদত করব। যিনি একমাত্র ইলাহ।’
আল্লামা ইবনে জারীর তবারী রহ.ও এখানে ইলাহের অর্থ উপাস্য করেছেন।
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
أما كفار قريش كانوا يطلقونه في حق الأصنام
‘কুরাইশের কাফেররা ইলাহ শব্দটি উপাস্য অর্থে ব্যবহার করত।’
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন-
الإله هو المعبود المطاع فهو إله بمعنى مالوه
‘ইলাহ সেই উপাস্য, যার অনুসরণ করা হয়। সুতরাং ইলাহ উপাস্য অর্থেই ব্যবহৃত হয়।’
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন-
الإله هو الذي تأله القلوب محبة وإجلالا وإنابة وإكراما وتعظيما وخوفا ورجاء وتوكلا
‘ইলাহ সেই সত্তা; যার সাথে হৃদয়ের সম্পর্ক থাকে, ভালোবাসা-বড়ত্বের ক্ষেত্রে, আশ্রয় প্রার্থনা ও সম্মানদানের ক্ষেত্রে, ভয় ও আশা-ভরসার ক্ষেত্রে।’
আব্দুল কাদের জিলানী রহ. ইলাহের সংজ্ঞা দেন এভাবে- ‘আজ তুমি ভরসা করছ নিজের উপর, নিজের টাকা-পয়সা, দিনার-দেরহামের উপর, নিজের কেনাকাটা ও স্বীয় শহরের প্রশাসকের উপর। যে বস্তুর উপরই তুমি ভরসা করবে, সেটিই তোমার উপাস্য। যে ব্যক্তিকে তুমি ভয় কর; কিংবা যার কাছে কোনো কিছু আশা কর, সেই তোমার উপাস্য। যে ব্যক্তিকে তুমি লাভ-ক্ষতির মালিক মনে কর, সেই তোমার উপাস্য। সুতরাং অনুধাবন কর, আল্লাহ তা‘আলাই স্বীয় কুদরতে এসব নিয়ন্ত্রণ করেন। ফলে তিনিই তোমার উপাস্য।’
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’র চুক্তিই তো এ জন্য যে, আল্লাহ ছাড়া কাউকেই উপাস্যের স্থানে বসানো যাবে না। আর তখনই গিয়ে ঈমান গ্রহণযোগ্য হবে।
উপাসনা কার জন্য?
উল্লিখিত আলোচনায় এ কথা প্রতিভাত হয় যে, ইলাহ অর্থ উপাস্য। অর্থাৎ যার উপাসনা করা হয়। এরপরে সমীচীন মনে হচ্ছে যে, উপাসনার সংজ্ঞা সম্পর্কে আলোচনা করা। কারণ, আমাদের সমাজে উপাসনা বলতে বুঝায়, কেউ কাউকে সিজদা করা বা পূজা করা। অথচ শরীয়াহর ভাষায় তা আরও ব্যাপক।
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَٰهًا وَاحِدًا لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ ﴿التوبة: ٣١﴾
“তারা তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদিগকে তাদের পালনকর্তারূপে গ্রহণ করেছে আল্লাহ ব্যতীত এবং মরিয়মের পুত্রকেও। অথচ তারা আদিষ্ট ছিল একমাত্র মাবুদের এবাদতের জন্য। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তারা তাঁর শরীক সাব্যস্ত করে, তার থেকে তিনি পবিত্র।” (সূরা তাওবা : ৩১)
এ আয়াত সেসব খৃষ্টানদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা আইন রচনা (হারাম, হালাল, বৈধতা-অবৈধতা) এর অধিকার নিজেদের পাদ্রীদেরকে সোপর্দ করেছে। যেটাকে তারা হালাল করে দিতেন, তাদের অনুসারীরাও তাকে হালাল বানিয়ে ফেলত; অথচ আল্লাহ তা‘আলা তা হারাম করেছিলেন। তেমনি (তাদের) সেই সম্মানিত ও অভিজাতশ্রেণী যা হারাম ঘোষণা করত, মানুষও সেটাকে হারাম বানিয়ে ফেলত; অথচ আল্লাহ তা হালাল করেছিলেন।
এ আয়াতের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে অধিকাংশ মুফাসসির এ ঘটনা বর্ণনা করেন যে, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়, তখন আদী ইবনে হাতিম রাযি. যিনি ইতঃপূর্বে খৃষ্টান ছিলেন, রাসূল ﷺ কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো তাদেরকে উপাস্য বানাতাম না। রাসূল ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা যা হালাল করেছেন, তারা তা হারাম করত আর তোমরাও তা হারাম মানতে এবং আল্লাহ তা‘আলা যা হারাম করেছেন, তারা তা হালাল করত আর তোমরাও তাকে হালাল ভাবতে। তখন আদী ইবনে হাতিম রাযি. বললেন, হ্যাঁ এমনটিই। তিনি বললেন, এটিই তাদের ইবাদত।
রাসূল ﷺ এ তাফসীরের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, কাউকে আইন রচনার ক্ষমতা দেওয়ার অর্থ হলো, তার উপাসনা করা।
Comment