Announcement

Collapse
No announcement yet.

‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-১০ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-১০ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত:
    পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি


    রাজনৈতিক বিপর্যয় এবং মুসলমানদের ইতিহাসে এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ ও ভাবনা

    (প্রথম খণ্ড)

    -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    মূল প্রকাশনায়:

    আস-সাহাব মিডিয়া (উপমহাদেশ)

    সফর ১৪৪৩ হিজরী মোতাবেক সেপ্টেম্বর ২০২১ ঈসায়ী


    চ - জনসাধারণের প্রতি আহ্বান



    জেসুইট ও আমেরিকান প্রোটেস্ট্যান্টসহ অন্যান্য ধর্মপ্রচারকদের একটা অপচেষ্টা ছিল আরব সাহিত্যকে পুনরুজ্জীবিত করার এবং আরব ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আরব জাতীয়তাবাদের পালে হাওয়া দেওয়া। এ কাজ করতে গিয়ে তারা অনেক সময় প্রকাশনা ক্ষেত্রে জ্ঞানের সঙ্গে বিশ্বস্ততা ভঙ্গ করেছে, যা আমরা সামনে আলোচনা করব, ইনশা আল্লাহ!
    এগুলো ছাড়াও খিলাফতের পতন এবং আরব বিশ্ব থেকে তুরস্কের বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে তার একটা নূতন বিষয়ের অবতারণা ঘটায়। সে বিষয়টা হলো, আরবকে বহুধা বিভক্ত করে দেয়া এবং সেইসঙ্গে আরব জাতীয়তাসূচক বিশেষণ পরিত্যাগ করা। আরবী অক্ষরের পরিবর্তে লিখিতভাবে ল্যাটিন অক্ষর ব্যবহার করতে তারা আরবদেরকে আহ্বান জানায়। এ থেকে বোঝা যায়, আরবদেরকে বিভক্ত ও দুর্বল করার এটা একটা পরিকল্পনা। তারা এক পা এক পা করে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগোতে চায়। আর এটা সে সমস্ত লোকের হাতে করাতে চায়, যারা আরবী ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে ছিল উৎসাহিত। তারা এই বিষয়ে যা লিখেছেন এবং জেসুইট প্রেসে যা ছাপা হয়েছে তার উদাহরণ লক্ষ্য করুন: -
    • জেসুইট ফাদার রাফেল নাখলে প্রণীত লেবানিজ-সিরিয়ান উপভাষার ব্যাকরণ। এ গ্রন্থ ফরাসি ভাষায়। এর আরবী মূলপাঠ ল্যাটিন লিপিতে প্রতিলিপি করা হয়।
    • শুকরি আলখুরি প্রণীত التحفة العامية في قضية فنيانوس . (ফেনিয়ানোসের ব্যাপারে আঞ্চলিক কথকতার উপহার).[1]
    • শুকরি আলখুরি প্রণীত مرور في أرض الهناء ونبأ من عالم البقاء-(সুখের রাজ্যে পরিক্রমা, স্থায়ী জগত সম্পর্কে সংবাদ)[2]
    জেসুইট ম্যাগাজিন (আল-মাশরিক) এই বিষয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেছে। ম্যাগাজিনে (খণ্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৭৯১), জার্মান ডক্টর হার্টম্যানের একটি নিবন্ধে প্রাচীন লোকদের ধ্রুপদী ভাষা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এগুলো কৃত্রিম ভাষা; জনসাধারণের বোধগম্য নয় এ সমস্ত ভাষা। একই সংখ্যায় সকল উপভাষা সংকলন ও বিন্যাসের জন্য তারা সমিতি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।
    ম্যাগাজিনে আরও রয়েছে (খণ্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৯৭৪) আঞ্চলিকতা সহকারে লেখা হলে তার সামনে আন্দোলনগুলো থেমে পড়ে। কারণ আঞ্চলিকতার ভেতর প্রতিটি আন্দোলনের কতগুলো শ্রেণী থাকে। আবার প্রতিটি শ্রেণীর অসংখ্য পর্যায়/স্তর থাকে।
    আরেকটা নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছিল (খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ২৬১) লেখক বলেছেন: বেশিরভাগ লেখক তাদের চিন্তাধারা ছড়িয়ে দিতে এবং তাদের উদ্দেশ্য প্রচার করতে আরবী আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার অপছন্দ করেন। যদিও সাধারণ মানুষের আঞ্চলিকতা কখনও কখনও উদ্দেশ্য হাসিলের ক্ষেত্রে অধিক সহায়ক হয় এবং মনের ভেতর শক্তিশালী প্রভাব সৃষ্টি করে। কারণ লেখকেরা এতে আত্মার বিনির্মাণ খুঁজে পান। কিন্তু জনসাধারণ তার দৈনন্দিন জীবনচিত্র, তার প্রতিধ্বনিত কথা-বার্তা ও স্বাভাবিক প্রবাদ ব্যবহার দেখে থাকে, তাই লেখকের বক্তব্য এবং তার সম্পাদনার বিষয়বস্তু তাকে প্রভাবিত করে।"[3]
    ***


    ৫- তাদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের উদাহরণ



    ক - লুইস শেইখো (Louis Cheikho)
    খ - হেনরি ল্যামেনস (Henri Lammens)
    গ – শানতিউর (chanteur)
    ***


    ক - লুইস শেইখো (Louis Cheikho)



    লুইস শেইখোকে আরব ও ইসলামিক ঐতিহ্যের অধ্যয়নের ক্ষেত্রে লেবাননের জেসুইট পাদ্রিদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেসুইট গবেষক হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং তিনি জেসুইটদের চর্চিত বিকৃতি ও জালিয়াতির পদ্ধতির একজন রোল মডেল। সামনে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করবো, ইনশা আল্লাহ! এ বিষয়ে আলোচনা আমি কয়েক ভাগে বিভক্ত করেছি:
    (১) তার জীবনী
    (২) তার প্রকাশনা কার্যক্রমসমূহ
    (৩) তার কিছু রচনা ও চিন্তাধারা নিয়ে মূল্যায়ন
    ***



    (১) তার জীবনী



    তিনি হলেন রিযকুল্লাহ বিন ইউসুফ বিন আব্দুল মসীহ বিন ইয়াকুব বিন আব্দুল মসীহ শেইখো ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে মার্দিনে একটি ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের মামা ছিলেন রেভারেন্ড গ্যাব্রিয়েল ডেনবো। তিনি সেন্ট হরমিজডের দিকে সম্বন্ধিত ক্যালডীয় সন্ন্যাসবাদের প্রতিষ্ঠাতা।
    তাঁর ভাই জেসুইট ইস্তানস্লাউস পড়াশোনার জন্য তাঁর আগে লেবাননে আসেন, তারপর রিযকুল্লাহ আট বছর বয়সে তাঁর সাথে যোগ দেন। তিনি গাজিরে অধ্যয়ন করেন এবং জেসুইট পাদ্রিদের স্কুলে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য ইউরোপে নৌ পথে যাত্রা করেন। তিনি গ্রীক, ল্যাটিন ও ফরাসি ভাষা অধ্যয়ন করে লেভান্টে ফিরে আসেন। ১৮৭৪ সালে তিনি জেসুইট পাদ্রিদের সঙ্গে যোগ দেন।
    গাজিরের জেসুইট স্কুল ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে বৈরুতে স্থানান্তরিত হলে সেখানে তিনি আরবী ভাষার শিক্ষক হন, তারপর জেসুইট অর্ডারে যোগ দেন। তিনি আরবী সাহিত্য রচনা ও প্রকাশনার কাজ করেন এবং আল-মাশরিক পত্রিকা চালু করে তাতে দীর্ঘ পঁচিশ বছর যাবৎ কাজ করেন। এছাড়াও তিনি আরবী বই প্রকাশনা শুরু করেন। ইউরোপের বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করতে এবং প্রাচীন আরবী পাণ্ডুলিপি অনুসন্ধান করতে তিনি বহুবার ইউরোপে সফর করেন। এমনিভাবে তিনি লেভান্ট, আলেপ্পো, মসুল, বাগদাদ সহ অন্যান্য প্রাচ্য দেশীয় অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। এভাবেই তিনি জেসুইট ফাদারদের মঠে একটি বড় লাইব্রেরি গড়ে তুলেন।
    তিনি দামেস্কের আরবী ভাষা একাডেমির একজন সদস্য ছিলেন। আরবী, ফরাসি ও ল্যাটিন ভাষা তিনি আয়ত্ত করেছিলেন এবং ইংরেজি, ইতালীয়, হিব্রু, তুর্কি, সিরিয়াক ও গ্রীকের মতো অনেক ভাষা জানতেন। তিনি ১৯২৮ সালে বৈরুতে মারা যান।[4]
    ***


    (২) তার প্রকাশনা কার্যক্রমসমূহ



    তন্মধ্যে কিছু ধর্মীয় ও ধর্মতাত্ত্বিক বিষয়ের: যেমন- খ্রিস্টের ধর্মতত্ত্বের সুস্পষ্ট প্রমাণ, খ্রিস্টধর্মের প্রাচীন লেখকদের ধর্মীয় নিবন্ধের একটি সংগ্রহ, দামেস্কের সেন্ট জন, সেন্ট পেট্রোস (বিশপ) ক্যানিসিয়াস ও ব্লেসেড প্লের্মিনাসের মত সাধুদের জীবনী। লেবাননের আওলিয়াউল্লাহদের জীবনী। যীশুর শৈশবের প্রতি ভক্তি।
    কতক হলো বিতর্কমূলক: যেমন- আইনি এবং মিথ্যা গসপেল, বিতর্কমূলক কথোপকথন এবং মুহাম্মদ তাহের আল-তানিরের জালিয়াতির খণ্ডন। এই শেষটা মুহাম্মদ তাহির আল-তানির রচিত খ্রিস্টান ধর্মের প্যাগান বিশ্বাস বইটির খণ্ডন। আরো আছে ফ্রিম্যাসনারি সহযোগীদের গোপনীয়তা উন্মোচন।
    কতক রচনা দর্শন বিষয়ক: যেমন- প্রাচীন দার্শনিকদের দার্শনিক নিবন্ধের একটি সংগ্রহ, আত্মা ও বিবেকের উপর নিবন্ধ, ধর্মীয় সহজতা, জাদু শব্দ এবং অ-ধর্মীয় বৈজ্ঞানিক বিদ্যালয়ের যৌক্তিক নিয়ম-কানুন।
    কিছু রয়েছে বই-পুস্তক বিষয়ক: পবিত্র ধর্মগ্রন্থে থাকা সমস্যাগুলোর ব্যাখ্যা এবং সেগুলোর ব্যাপারে ভুলভাল মতামতের খণ্ডন
    আবার কিছু রচনা ও প্রকাশনা ইতিহাস বিষয়ক: কিব্রুত: ইতিহাস ও পুরাকীর্তি, এমনিভাবে বর্তমান জাজিরাতুল আরবের (আরব উপদ্বীপের) ইতিহাস, বিশ্ব যুদ্ধের ইতিহাস, খ্রিস্টধর্মের ইতিহাস এবং জাহেলিয়াতের যুগে খ্রিস্টান সাহিত্য, উনিশ শতকে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম চতুর্থাংশে আরব সাহিত্যের ইতিহাস, খ্রিস্টান লেখকদের আরবী পাণ্ডুলিপি, তুর সিনার বিশপদের ইতিহাস, লেভান্ট, প্যালেস্টাইন ও ইরাকে মুদ্রণের ইতিহাস, প্রাচ্যের গ্রন্থাগারগুলোর পাণ্ডুলিপির বিবরণ, জেসুইট পাদ্রিদল ও ম্যারোনাইট সম্প্রদায়ের ইতিহাস, আলেপ্পোতে সাহিত্যের নবজাগরণের ইতিহাস, লেভান্টে দূত প্রতিনিধিদের ইতিহাস এবং ইবনুল আব্রি: জীবন ও কর্ম।

    ইতিহাস বিষয়ে তিনি আরো প্রকাশ করেছেন: সালেহ বিন ইয়াহিয়া রচিত বৈরুত এবং পাশ্চাত্যের শাসকদের ইতিহাস, শাকির বিন আল রাহেবের ইতিহাস, সাঈদ বিন ইয়াহিয়া আল-আনতাকির পরিশিষ্ট সহ সাইদ বিন বাট্রিকের ইতিহাস, মাহবুব আল-মুনবাজির ইতিহাস। আবুল-কাসিম সাইদ আল-আন্দালুসি প্রণীত জাতি-গোষ্ঠীর নানা স্তরের ইতিহাস এবং ১৮৬০ সালে লেবানন ও দামেস্কের ঘটনাবলীর ইতিহাস।
    ভাষা শাস্ত্রে তার অবদান হল:نزهة الطرف في مختصر الصرف، والوسائل لترقية اللغة العربية، واللغة العامية بازاء اللغة الفصيحة এই গ্রন্থগুলো। আরো আছে, আরবী ভাষা সাহিত্যের ইতিহাস বিষয়ক বইগুলোর সমালোচনা পর্যালোচনা, জর্জ যাইদান প্রণীত জাতি-গোষ্ঠীর নানা স্তর এবং ইলমুল আদব গ্রন্থ।
    তিনি বেশ কয়েকটি ভাষা শাস্ত্রীয় বই প্রকাশ করেছেন: আল-হামদানির আল-আলফাজুল কিতাবিয়া, সাআলাবির ফিকহুল্লুগাহ, ইবনুসকিতের তাহ্জিবুল আলফাজ, ইবনে দেরস্তাওয়াইহের কিতাবুল-কিতাব, আল-বালাগাহ ফি শুযুরিল লুগাহ, নির্বাচিত নিয়ম-রীতি ও অভিধান সহকারে ল্যাটিন ভাষায় আরবী ব্যাকরণ।
    কাব্য সাহিত্যে: প্রাক-ইসলামী যুগে এবং ইসলামের পরে খ্রিস্টান কবিদের বই, আল-খানসা', আল-খারনাক, আল-সামাউল, আল-মুতালমিস, সালামা বিন জান্দাল, আবি- আল আতাহিয়াহ'র কাব্য সংকলনসমূহ প্রকাশ। আরব কবিদের শোকগাথা এবং আল-বুহতারির হামাসা প্রকাশ।
    গদ্য সাহিত্যে ও নির্বাচিত প্রবন্ধে:
    ترقية القارئ، ومرقاة المجاني، ومجاني الأدب مع شروحه، وأطرب الشعر وأطيب النثر، والأحداث الكتابية والتشابيه النصرانية في شعراء الجاهلية، وأطيب الفكاهات في أربع روايات، وروضة الأحداث في أطايب الأحداث
    তার মধ্যে তিনি প্রকাশ করেছেন: কালিলা ও দিমনা, ইবনুল মির্যাবানের فضائل الكلاب لابن المرزبانআর قانون وزارة بني عثمان أصاف نامه
    তার অনেকগুলো ভ্রমণ-কাহিনী ও সফরনামা রয়েছে। যেমন- বৈরুত থেকে ভারতের সফর, হিমস, হামা, আলেপ্পো, দামেস্ক ও জবেইল সফর। প্রতিটা শহরের বিবরণ ও নিদর্শন তিনি তুলে ধরেছেন সেগুলোতে।
    শিল্প বিষয়ক বিভিন্ন বই: যেমন- অ্যারিস্টটলের আলো নিবন্ধ, মোরেস্টাসের সুরের যন্ত্র, বানি মুসার বাঁশি, সিসিলিয়ানের মুকহুলাহ (সুরমাদানি), আলী ইবনে ঈসার অ্যাস্ট্রোল্যাব এবং তার ব্যবহার প্রক্রিয়া[5]
    ***



    (৩) তার কিছু রচনা ও চিন্তাধারা নিয়ে মূল্যায়ন



    ক) দিওয়ানু আবিল আতাহিয়া
    লুইস শেইখো তাঁর বই (আল আনওয়ারুয যাহিয়া ফী দিওয়ানে আবি আল-আতাহিয়া) প্রকাশ করেছিলেন। সেই কাব্যগ্রন্থে তিনি যথেচ্ছা পরিবর্তন ও কাটাচেরা করেছেন। এমনকি তিনি ইমাম ইবনে আব্দুল বার রহিমাহুল্লাহরও ছদ্মবেশ ধারণ করেছেন, তার সূত্রে মিথ্যা উদ্ধৃতি এনেছেন। তাই কভারে লিখেছেএ গ্রন্থে নামিরীর বর্ণনা নকল করা হয়েছে এবং প্রসিদ্ধ সাহিত্যিকদের বই থেকে উদ্ধৃতি আনা হয়েছে। যেমন- আসফাহানী, আলমুবাররাদ, ইবনে আবদে রাব্বিহ, আলমাসউদী, আলমাওয়ারদী, আলগাজালী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।” এখানে তিনি ইমাম ইবনে আব্দুল বারের শুধু নামিরী উপাধি উল্লেখ করেছেন। পাঠকবর্গ জানতেই পারেননি, লেখক কাকে বুঝিয়েছেন?
    এই পুরো কাব্য সংকলনটি ডক্টর শাকরী ফয়সাল রহিমাহুল্লাহ তাহকীক করেছেন। আবুল আতাহিয়াহ’র কবিতার মূলনীতি ও পাণ্ডুলিপি নিয়ে গবেষণা কালে তিনি যেটা আবিষ্কার করেছেন, তার মধ্যে একটা হল আল্লামা আহমদ শাকের রহিমাহুল্লাহ ইবনে কুতাইবা রচিত- ‘আশ-শেয়ের ওয়াশ শুআরা’ গ্রন্থ তাহকীক করার সময় আবুল আতাহিয়াহর জীবনী উল্লেখ কালে যা বলেছেন: "কবিতা সংকলনটি প্রসিদ্ধ। জেসুইট ফাদাররা এটা মুদ্রণ ও প্রকাশ করেছে। বৈরুতে তাদের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮৮৬ সালে এটা মুদ্রণ হয়। জেসুইটরা এমন সম্প্রদায় যাদের উপর নির্ভর করা যায় না, তাদের উদ্ধৃতি বর্ণনার উপর আস্থা রাখা যায় না। কারণ তারা খেয়াল-খুশিমতো যথেচ্ছা পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে, দলান্ধতা করে এবং বিকৃতি ঘটায়। কিন্তু যে সংকলন এখন দেখা যাচ্ছে তা মানুষের হাতে পাওয়া গিয়েছে।"[6]
    এ বক্তব্য ড. শুকরি ফয়সালকে বিস্মিত করে দেয়। একপর্যায়ে তিনি নিজেই তাদের বিকৃতি সাধন ও দলপ্রীতির সুস্পষ্ট নিদর্শন পেয়ে যান। ড. শুকরি ফয়সাল রহিমাহুল্লাহ সেই জালিয়াতি, পরিবর্তন এবং কাটাচেরার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, যা লুইস শেইখো করেছিলেন।
    পাঠক শুকরি ফয়সালের তাহকীকে [7] আবুল-আতহিয়ার দেওয়ানের ভূমিকা দেখে আসতে পারেন। তবে আমি এখানে নিজেকে লুইস শেইখোর অসাধুতা ও ধর্মান্ধতার কিছু স্পষ্ট উদাহরণ উল্লেখের মাঝেই ক্ষান্ত দেব:
    দেখে তো মনে হয়েছে, লুইস শেইখো আবুল-আতাহিয়ার কবিতায় আমাদের সরদার মুহাম্মদের নাম সহ্য করতে পারেননি, এমনকি 'নবী' বা 'রাসূলুল্লাহ' শব্দ পর্যন্ত তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই তিনি যেভাবে ইচ্ছা এটিকে বিকৃত করেছেন। এই বিকৃতির কারণে চরণের অধিকাংশ তার পরিবর্তন করতে হয়েছে, যাতে ছন্দমিল ব্যাহত না হয়।
    তাই “بالنبي محمد সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবর্তন করাতে মূল কবিতায় যেভাবে বিকৃতি ঘটেছে সেটা নিম্নরূপ:-
    وإذا ذكرت محمدًا ومصابه فاذكر مصابك بالنبي محمد[8]
    এখানে বিকৃতি ঘটিয়ে তিনি লিখেছেন
    وإذا ذكرت العابدين وذلهم فاجعل ملاذك بالإله الأوحد[9]
    তিনি بنبي قام কে بنذير قام এ বিকৃত করে দিয়েছেন। এরপরের চরণে بنبي فتح الله به কে بخطيب فتح الله به দ্বারা পরিবর্তন করেছেন। তৃতীয় চরণে مرسلশব্দকে তিনি পরিবর্তন করেছেন ابن من দ্বারা। চতুর্থ চরণে فرسول الله ইবারত তিনি পরিবর্তন করেছেন فنذير الخيرদ্বারা।
    واحمدوا الله الذي أكرمكم بنبي قام فيكم ونصح
    بنبي فتح الله به كل خير نلتموه وشرح
    مرسل لو يوزن الناس به في التقى والبر شالوا ورجح
    فرسول الله أولى بالعلى ورسول الله أولى بالمِدَح[10]
    এই চারটি চরণকে তিনি যেভাবে পরিবর্তন করেছেন সেই বিকৃত রূপ নিম্নে দেয়া হল:
    واحمدوا الله الذي أكرمكم بنذير قام فيكم فنصح
    بخطيب فتح الله به كل خير نلتموه وشرح
    ابن من لو يوزن الناس به في التقى والبر طاشوا ورجح
    فنذير الخير أولى بالعلى ونذير الخير أولى بالمِدَح[11]
    লুইস শেইখোর ابن من শব্দের ব্যবহার দেখে আমি থমকে দাঁড়িয়েছি। তিনি এ শব্দ কেন ব্যবহার করেছেন?
    তিনি কি এর দ্বারা ঈসা আলাইহিস সালামের দিকে ইশারা করতে চান? কারণ ঈসা আলাইহিস সালাম তো তার ধারণা মতে একই সময়ে আল্লাহর পুত্র আবার মানব সন্তান?! তারাতো ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তায়ালার পুত্র বলে থাকে-নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা এ থেকে পবিত্র এবং বহু ঊর্ধ্বে! একইভাবে ঈসা আলাইহিস সালামকে দাউদ আলাইহিস সালামের প্রতিও সম্বন্ধ করে থাকে। তাদের কিতাবগুলোতে বিকৃতির উপস্থিতি এবং তাদের এই দাবির অশুদ্ধতা যে, আল্লাহ এগুলোর প্রণয়নকারীদেরকে ইলহাম করেছেনসেই বিকৃতি ও অশুদ্ধতার দলীল হিসেবে তাদের কিতাবগুলোর পরস্পর বিরোধী বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনাকালে অচিরেই এ নিয়ে কথা হবে, ইনশা আল্লাহ!
    তিনি যদি বিকৃতির কোন সুযোগ না পেয়েছেন, তখন পুরো চরণ সরিয়ে দিয়েছেন।
    যেমন- নিম্নোক্ত চরণ তিনি সরিয়ে দিয়েছেন
    وهو الذي بعث النبي محمدًا صلى الإله على النبي المصطفى[12]
    এরপরের চরণে وانقذنا به ইবারত তিনি পরিবর্তন করেছেন وأنقذ شعبه এ।
    পুরো চরণের পূর্বরূপ ও বিকৃত রূপ নিম্নে লক্ষ্য করুন
    وهو الذي أنجى وأنقذنا به بعد الضلال من الضلال إلى الهدى[13]
    এটাকে তিনি পরিবর্তন করে লিখেছেন
    وهو الذي أنجى وأنقذ شعبه بعد الضلال من الضلال إلى الهدى[14]
    এখানে আমি আবারো জিজ্ঞেস করতে চাই, الشعب শব্দটা এখানে তিনি কেন ব্যবহার করলেন? তিনি কি খ্রিস্টানদের বাইবেলে থাকা প্রসিদ্ধ অর্থ বোঝাতে চান? যেখানে বাইবেল এ শব্দ দ্বারা ইহুদীদেরকে অথবা যীশুর প্রতি ঈমান আনয়নকারীদেরকে বুঝিয়েছে? যেমন রাসূলদের কাজকর্মের ব্যাপারে এসেছে
    "তারা আনন্দ ও হৃদয়ের সরলতা নিয়ে খাদ্য গ্রহণ করতেন ২:৪৭০ আল্লাহর প্রশংসা করতেন, গোটা الشعب তথা সকল লোকের কাছে তাদের অনুগ্রহ রয়েছে এবং প্রভু প্রতিদিন গির্জায় যুক্ত করেন ঐ সমস্ত লোককে যারা মুখলিস ও একনিষ্ঠ।[15]
    এমনিভাবে নিম্নোক্ত চরণটিও তিনি সরিয়ে ফেলেছেন
    أين أين النبي صلى عليه الله من مهتد رشيد وهاد[16]
    যখনই তিনি لا شريك لهইবারত সামনে দেখেছেন, তখনই খ্রিস্টানদের ট্রিনিটি বা ত্রিত্ববাদ বোঝানোর লোভে তিনি বাক্য পরিবর্তন করেছেন।
    তাইতো দেখা যায়
    الحمد لله شكرا لا شريك له كم حبيب من الأهلين مُختَلَسِ[17]
    তিনি পরিবর্তন করে লিখেছেন
    الحمد لله شكرا لا مثيل له كم حبيب من الأهلين مُختَلَس
    অপর একটি চরণ
    فحسبي الله ربي لا شريك له إليه ما كان من بسطي ومن قبضي[18]
    তিনি পরিবর্তন করে লিখেছেন
    فحسبي الله ربي لا شبيه به وضعت فيه كلا بسطي ومنقبضي[19]
    এরপর যখন দেখলেন, এটুকু বিকৃতিতে তিনি তৃপ্ত হতে পারছেন না, তখন পুরো চরণ সরিয়ে দিয়েছেন। একই কাজ করেছেন নিম্নোক্ত চরণে
    الحمد لله لا شريك له حاشا له أن يكون مشتركا[20]
    মাওলা সুবহানাহু তায়ালার কোন পুত্র না থাকার কথাটাকে তিনি বিকৃত করেছেন যাতে খ্রিস্টানদের আকীদা-বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। কারণ তারা তো মনে করে, যীশু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পুত্র। (আল্লাহ এ থেকে পবিত্র এবং বহু ঊর্ধ্বে!)
    এর উদাহরণ হল
    তিনি لست والدًا যার অর্থ হলো আমি পিতা নইএটাকে পরিবর্তন করে লিখেছেন: لست محدثًا
    বিকৃতির আগে ও পরে পুরো চরণ লক্ষ্য করুন:
    شهدنا لك اللهم أن لست والدًا ولكنك المولى ولست بمولود[21]
    পরিবর্তন করে লিখেছেন
    شهدنا لك اللهم أن لست محدثًا ولكنك المولى ولست بمجحود[22]
    তিনি একটি চরণের প্রায় পুরো অর্ধেক পরিবর্তন করে ফেলেছেনهو الذي لم يولد ولم يلد এই প্রায় পুরো অর্ধেক তিনি ভিন্ন অর্থে পরিবর্তন করে ফেলেছেন।
    কবিতাটি তিনি যেভাবে পরিবর্তন করেছেন
    الحمد لله الواحد الصمد هو الذي لم يولد ولم يلد[23]
    তিনি পরিবর্তন করে লিখেছেন
    الحمد لله الواحد الصمد فهو الذي به رجائي وسندي[24]
    কুরআনে উক্ত একটি প্রসিদ্ধ শব্দ হলো أوّاب. লুইস শেইখো এটা পরিবর্তন করে লিখেছেন أوْ آب
    কবিতার চরণ পরিবর্তনের আগে ছিল
    طوبى لكل مراقب ولكل أواب شكور[25]
    পরিবর্তন করে লিখেছেন
    طوبى لكل مراقب ولكل أو آب شكور[26]
    আমরা জানি, খ্রিস্টানদের ট্রিনিটি তিন শব্দ দ্বারা গঠিত, آب، إبن، الروح القدسঅর্থাৎ পিতা পুত্র এবং পুণ্যাত্মা!!!
    বেশ কয়েকটি চরণ মুছে ফেলা:
    তিনি নিম্নোক্ত ছয়টি চরণ সরিয়ে দিয়েছেন যেগুলোর মধ্যে হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসায় পাঁচটি রচিত
    سلام على قبر النبي محمد نبي الهدى والمصطفى والمؤيد
    نبي هدانا الله بعد ضلالة به، لم نكن لولا هداه لنهتدي
    فكان رسول الله مفتاح رحمة من الله أهداها لكل موحد
    وكان رسول الله أفضل من مشى على الأرض إلا أنه لم يخلد
    شهدت على أن لا نبوة بعده وأن ليس حي بعده بمخلد
    وأن البلى يأتي على كل جدة وأن المنايا للعباد بمرصد[27]

    অর্থ:
    “নবী মুহাম্মদের কবরে সালাম, যিনি হেদায়েতের নবী এবং মনোনীত ও সাহায্যপ্রাপ্ত
    তিনি এমন নবী যার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে পথভ্রষ্টতা থেকে হেদায়েত দিয়েছেন, যদি তিনি না হতেন তবে আমরা হেদায়েত লাভ করতাম না
    অতএব, তিনি রাসূলুল্লাহ; যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের চাবি। প্রতিটি একত্ববাদী ব্যক্তির জন্য আল্লাহ এই রহমত দান করেছেন
    রাসূলুল্লাহ হলেন ভূপৃষ্ঠে সর্বশ্রেষ্ঠ, তবে তিনি চিরকালজীবি হননি
    আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তার পর কোন নবুয়াত নেই, আর কোন জীবিত সত্ত্বা তার পরে চিরকাল থাকবে না
    নিশ্চয়ই বিপদ আপদ মর্যাদা অর্জনের পথে আসবেই
    মৃত্যু প্রত্যেক বান্দার জন্য অপেক্ষা করছে।”

    এমনিভাবে হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসায় রচিত ৭ টি চরণ মুছে দিয়েছেন-
    لِيَبكِ رسولَ الله من كان باكيا ولا تنس قبرًا بالمدينة ثاويا
    جزى الله عنا كل خير محمدًا فقد كان مهديًا دليلًا وهاديا
    ولن تَسرِيَ الذكرى بما هو أهله إذا كنت للبَرِ المطهر ناسيا
    أتنسى رسولَ الله أفضل من مشى وآثاره بالمسجدين كما هيا
    وكان أبر الناس بالناس كلهم وأكرمهم بيتًا وشِعبًا وواديًا
    تكدر من بعد النبي محمد عليه سلام الله ما كان صافيا
    فكم من منار كان أوضحه لنا ومن عَلم أمسى وأصبح عافيا[28]

    অর্থ :
    “কেউ যদি কাঁদতে চায় সে যেন রাসূলুল্লাহর জন্য কাঁদে, তুমি ভুলে যেও না সে মহান ব্যক্তির রওজার কথা যিনি ছিলেন মদিনার বাসিন্দা।
    আল্লাহ তায়ালা আমাদের পক্ষ থেকে সকল কল্যাণ এর দ্বারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রতিদান দান করুন, কারণ তিনি ছিলেন হেদায়েতপ্রাপ্ত, পথপ্রদর্শক ও সত্যের দলীল
    তুমি যদি নেককার পবিত্র এই মহামানবকে ভুলে যাও, তবে যোগ্য মানুষের স্মৃতি কখনোই তোমার মাঝে সঞ্চারিত হবে না।
    তুমি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভুলে যাচ্ছ! যিনি ছিলেন ভূপৃষ্ঠে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং যার পদাঙ্কগুলো উভয় মসজিদে (তথা মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববী) আজও সদা জাগ্রত।
    তিনি ছিলেন সকল মানুষের মাঝে সবচেয়ে নেককার, গৃহ, গোত্র ও উপত্যকা তথা অঞ্চল বিবেচনায় তাঁর আগমন ছিল সবচেয়ে সম্মানজনক।
    নবীজি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদায়ের পর এমন অনেক কিছুই হয়ে গিয়েছে ঘোলাটে ও অপ-মিশ্রিত, যেগুলো তাঁর জীবদ্দশায় ছিল স্বচ্ছ।
    এমন কতই না আলোর মিনার আর হেদায়েতের পতাকা তিনি আমাদের জন্য উড্ডয়ন করে গিয়েছেন, যেগুলো সবই আজ হয়ে গিয়েছে ভূলুণ্ঠিত।”

    এগুলো হলো অনেক বিকৃতির কিছু নমুনা। লুইস শেইখো কর্তৃক প্রকাশিত সংস্করণে ভরে আছে এমন কত বিকৃতি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, জেসুইটদের আস্থার বিষয়ে শাইখ আহমাদ শাকেরের কাছ থেকে আমরা যা উদ্ধৃত করেছি, সেটাও অতিক্রম করেছে লুইস শেইখো এই নির্লজ্জ বিকৃতি সম্পর্কে ডঃ শাকরি ফয়সাল রহিমাহুল্লাহ বলেছেন: "এগুলো ছাড়াও আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে। সচেতন পাঠক অনুসন্ধানী মন নিয়ে পাদটীকাগুলোতে নজর দিলে সেগুলো খুঁজে পাবেন। যে কোনোভাবেই হোক, পাঠক সেগুলো দেখার পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারবে যে, শাইখ শাকির আমাদের আলোচ্য তাঁর রচিত প্রবন্ধে যত ধরনের খেয়াল-খুশী, দলপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্বের কথা ইশারা করেছেন, লুইস শেইখোর বিকৃতিগুলো সেগুলোর সীমা পর্যন্ত অতিক্রম করে গেছে। তার সকল বিকৃতি কুরআনের শব্দাবলী ও বর্ণনাভঙ্গি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে আঘাত করেছে, নয়তো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর রিসালাত সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলীকে আঘাত করেছে, ইসলামী বিভিন্ন আকীদা-বিশ্বাস যেমন একত্ববাদ পুনরুত্থান ও আখেরাতের ধ্যান-ধারণাকে আঘাত করেছে।"
    “বহুকাল যাবৎ সাহিত্যের অঙ্গন সেসব লোক নিয়ন্ত্রণ করছে, যাদের কাছে কর্মের শুচিতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার কোন মূল্য নেই। প্রবৃত্তির তাড়নায় তারা সাহিত্যের অঙ্গনকে কলুষিত করেছে। নগ্ন পায়ে মাড়িয়ে চলেছে। এই অঙ্গনে সকল প্রকার শালীনতা ও লজ্জাশীলতার বাঁধ তারা গুঁড়িয়ে দিয়েছে।”[29] তাই বর্তমান যুগে সাহিত্য অধ্যয়নকারীদের কর্তব্য হচ্ছে- সাহিত্যের অঙ্গনকে এসব প্রবৃত্তি-পূজারিদের হাত থেকে মুক্ত করা।
    ***





    (খ) কতক বিখ্যাত খ্রিস্টান লেখকের প্রাচীন ধর্মীয় কিছু নিবন্ধ
    লুইস শেইখো তার مقالات دينية قديمة -(প্রাচীন কিছু ধর্মীয় নিবন্ধন) গ্রন্থে কিছু খ্রিস্টান প্রাচীন পুস্তিকার কথা প্রকাশ করেছিলেন এবং তিনি সেগুলোর ভেতর অ্যান্টিওকের পলের বার্তা প্রকাশ করেছিলেন, যার সম্পর্কে লুইস শেইখো উল্লেখ করেছিলেন যে, খ্রিস্টান মধ্যবিত্ত সমাজ প্রশংসার সাথে তার বিতর্ককে গ্রহণ করেছিল। কারণ তাদের দৃষ্টিতে তার বিতর্কগুলো উৎকৃষ্ট শব্দাবলী, সঠিক মতামত, জুতসই দলীল এবং উজ্জ্বল প্রমাণাদির কারণে অনন্য ছিল।[30]
    ‘অ্যান্টিওকের পলের রিসালা’ হলো সেই রচনা, যা ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ তাঁর মূল্যবান الجواب الصحيح لمن بدل دين المسيح -(ঈসা আলাইহিস সালামের ধর্ম পরিবর্তনকারীর জন্য বিশুদ্ধ জবাব) গ্রন্থে খণ্ডন করেছেন।[31]
    কখনো কিছু কিছু ক্ষতিকর জিনিসও উপকারী প্রমাণিত হয়। (এখানেও তাই হয়েছে অর্থাৎ অ্যান্টিওকের পলের ক্ষতিকর বিষয়গুলো আসার কারণে ইমাম তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ কর্তৃক উপকারী খণ্ডন আমরা পেয়েছি। ইমাম সাহেবের এই রচনা যেন অ্যান্টিওকের পলের অবদান।)
    ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ তাঁর গ্রন্থে অ্যান্টিওকের পলের সমস্ত সংশয় নিরসন করেছেন। আল্লাহর রহমতে ইমাম সাহেবের গ্রন্থ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এবং ব্যাপক প্রচার-প্রসার লাভ করেছে। খ্রিস্টবাদকে যারাই খণ্ডন করতে চায়, তারা ইমাম সাহেবের উক্ত গ্রন্থকে মৌলিক রেফারেন্স হিসেবে পেয়ে যায়। উক্ত গ্রন্থের বেশ কয়েকটি সংস্করণ মুদ্রিত হয়েছে। ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জনের জন্য উক্ত গ্রন্থের তাহকীকে[32] বেশ কিছু গবেষণাপত্র জমা হয়েছে, যেখানে উক্ত গ্রন্থকেই গবেষণার বিষয়বস্তু হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।[33]
    *****




    (চলবে, ইন শা আল্লাহ)
    [1] التبشير والاستعمار - পৃষ্ঠা: ২২৪

    [2] المستشرقون ومنهج التزوير والتلفيق في التراث الإسلام - পৃষ্ঠা: ১০৭

    [3] المستشرقون ومنهج التزوير والتلفيق في التراث الإسلام - পৃষ্ঠা: ১০৬, ১০৭

    [4] معجم المطبوعات ج: 2 ص: 1166 1167، الأعلام للزركلي ج: 5 ص: 246، المستشرقون ومنهج التزوير والتلفيق في التراث الإسلامي ص: 89.

    [5] تاريخ الآداب العربية ج :3 ص: 462 و463، معجم المطبوعات العربية ج: 2 ص: 1167 إلى 1170.

    [6] الشعر والشعراء - খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৭৯১

    [7] أبو العتاهية أشعاره وأخباره - ভূমিকা: পৃষ্ঠা: ৫১৪

    [8] أبو العتاهية أشعاره وأخباره- শ্লোক: ১১ পৃষ্ঠা: ১১১

    [9] الأنوار الزاهية - পৃষ্ঠা: ৭৫

    [10] أبو العتاهية أشعاره وأخباره- শ্লোক: ১০০ পৃষ্ঠা: ১০০

    [11] الأنوار الزاهية - পৃষ্ঠা: ৬৭, ৬৮

    [12] أبو العتاهية أشعاره وأخباره البيت: 28 ق: 12 ص: 15، الأنوار الزاهية ص: 8.

    [13] أبو العتاهية أشعاره وأخباره البيت: 29 ق: 12 ص: 15.

    [14] الأنوار الزاهية ص: 8.

    [15] نسخة الكتاب المقدس لدى النصارى التي ترجمها إيلي سميث وفان ديك عام 1865- العهد الجديد- أعمال الرسل: 2: 46 و47.

    [16] أبو العتاهية أشعاره وأخباره ق: 114 ص: 112، الأنوار الزاهية ص: 76.

    [17] أبو العتاهية أشعاره وأخباره البيت: 9 ق: 199 ص: 194.

    [18] أبو العتاهية أشعاره وأخباره البيت: 2 ق: 213 ص: 203.

    [19] الأنوار الزاهية ص: 139.

    [20] أبو العتاهية أشعاره وأخباره ق: 273 ص" 261، الأنوار الزاهية ص: 181.

    [21] أبو العتاهية أشعاره وأخباره البيت: الثاني ق: 104 ص: 104.

    [22] الأنوار الزاهية ص: 70.

    [23] أبو العتاهية أشعاره وأخباره ق: 119 ص: 119.

    [24] الأنوار الزاهية ص: 78.

    [25] أبو العتاهية أشعاره وأخباره ق: 168 ص: 166.

    [26] الأنوار الزاهية ص: 113.

    [27] أبو العتاهية أشعاره وأخباره ق: 116 ص: 116، الأنوار الزاهية ص: 80.

    [28] أبو العتاهية أشعاره وأخباره ق: 450 ص: 433، الأنوار الزاهية ص: 299.

    [29] أبو العتاهية أشعاره وأخباره- المقدمة ص: 13 و14.

    [30] الغارة التنصيرية على أصالة القرآن الكريم ج: 1 ص: 31.

    [31] الجواب الصحيح بتحقيق: علي بن حسن بن ناصر وعبد العزيز إبراهيم العسكر وحمدان بن محمد الحمدان، ج: 1 ص: 30.
    আলী ইবনে হাসান ইবনে নাসের, আব্দুল আজিজ ইব্রাহিম আল আসকার এবং হামদান ইবনে মুহাম্মাদ আল্ হামদাম কর্তৃক তাহকীককৃত

    [32] তন্মধ্যে তিনটি থিসিস গবেষকদের যারা তৈরি করেছেন, তারা রিয়াদের ইমাম মুহাম্মাদ বিন সৌদ ইউনিভার্সিটির কলেজ অফ ফান্ডামেন্টালস অফ রিলিজিয়ন থেকে ধর্ম ও সমসাময়িক মতবাদ বিভাগ থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী পেয়েছেন। তারা হলেন- শাইখ আলী বিন হাসান বিন নাসের, শাইখ আব্দুল আজিজ ইব্রাহিম আল-আসকার এবং শাইখ হামদান বিন মুহাম্মদ আল-হামদান

    [33] যেমন প্রফেসর মরিয়ম আল-যামিলের রচনা, যার শিরোনাম হচ্ছেঃ (খ্রিস্টানদের ব্যাপারে ইবনে তাইমিয়ার অবস্থান)। এটির মাধ্যমে তিনি মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটির কলেজ অফ শরীয়াহ এবং ইসলামিক স্টাডিজ থেকে তার পিএইচডি অর্জন করেছেন।
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 12-31-2022, 07:35 PM.
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

  • #2
    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। ভূমিকা পর্ব ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-১ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-২ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৩ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9


    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৪ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৫ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৬ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৭ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৮ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৯ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B9
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      আসসালামু আলাইকুম হুজুর সম্পূর্ণ পর্ব কবে রিলিজ করবেন? রাব্বি কাবাহ আপনাদের উত্তম জাঝা দান করুন।

      ইনশাআল্লাহ্ আমরা প্রচার করবো ""
      সর্বোত্তম আমল হলো
      আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং মহান মহীয়ান
      আল্লাহর পথে জিহাদ করা।নাসায়ী,শরীফ

      Comment


      • #4
        Originally posted by media jihad View Post
        আসসালামু আলাইকুম হুজুর সম্পূর্ণ পর্ব কবে রিলিজ করবেন? রাব্বি কাবাহ আপনাদের উত্তম জাঝা দান করুন।
        ইনশাআল্লাহ্ আমরা প্রচার করবো ""
        ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ.
        অনুবাদের কাজ চলমান। ওয়া ইয়্যাকা জাযাল্লাহু খাইরান।
        “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

        Comment


        • #5
          আল্লাহ সকল মিডিয়ার ভাইদের কবুল করুন

          Comment


          • #6
            Originally posted by Tamim al ansari View Post
            আল্লাহ সকল মিডিয়ার ভাইদের কবুল করুন
            আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
            জাযাকাল্লাহু খাইরান।
            “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

            Comment

            Working...
            X