Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ১৬ || “আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।। শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ || ১৪তম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ১৬ || “আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।। শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ || ১৪তম পর্ব

    আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
    আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা ।।
    শাইখ
    আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
    এরথেকে || ৪তম পর্ব

    ===================


    দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ: আকিদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা থেকে বিচ্যুতির ধরন:

    ০১. যে সব শাসক গাইরুল্লাহর বিধান দিয়ে শাসন করে ও ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের বন্ধু বানিয়ে দুটি অপরাধকে সন্নিবেশিত ঘটিয়েছে-


    এ যুগে আল-ওয়ালা ওয়াল-বারার ক্ষেত্রে ইসলামের নীতি থেকে সবচেয়ে বেশি বিচ্যুত শ্রেণী হলো: সে সব শাসকশ্রেণী, যারা ইসলামী শরীয়াহ থেকে বের হয়ে ইসলামী দেশগুলোর ক্ষমতা আঁকড়ে আছে। যদিও তারা নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে দাবি করে থাকে

    মুসলিম উম্মাহর উপর এ শাসকগোষ্ঠীর বিপদ দিন-দিন বেড়ে চলছে। এমনকি মুসলমানদেরকে সহীহ আকীদা থেকে বিচ্যুত করা এবং দ্বীন অনুসরণের পথে বাধা হওয়ার মাধ্যমে এরা মুসলিমদের উপর সর্বোচ্চ বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, তারা ইসলামী আকীদা থেকে সবচেয়ে বেশি বিচ্যুত, জীবন ও সম্পদসহ মুসলিমদের প্রায় সব বিষয়কে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণকারী একটি গোষ্ঠী। তা ছাড়া তারা একই সাথে সব স্থানে ছড়িয়ে আছে; ফলে পৃথিবীর কোনো মুসলিম দেশ তাদের অনিষ্টতা থেকে বাঁচার কল্পনাই করতে পারছে না।

    এ শাসকগোষ্ঠীর বিচ্যুতি যৌগিক বিচ্যুতি। একে তো তারা ইসলামী শরীয়াহ মতে শাসনকার্য পরিচালনা করেই না। তার উপর তারা ইসলামের চির শত্রুদের আদেশ-নিষেধ পালন ও তাদের বন্ধুত্ব রক্ষা করে আসছে, বিশেষত ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের।

    ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের সাথে সখ্যতার প্রতি যখন আমরা নজর বুলাই, তখন দেখতে পাব- ইসলামী বিশ্ব, বিশেষত আরববিশ্বকে তারা ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের রসদ সরবরাহ, সংরক্ষণে যুতসই ঘাঁটিতে রূপ দিয়েছে। জাযিরাতুল আরব, উপ-সাগরীয় রাষ্ট্রসমূহ, মিশর ও জর্দানের দিকে তাকালে যে কোনো চক্ষুষ্মান ব্যক্তি দেখতে পাবে- ইসলামী বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র আজ ক্রুসেডার বাহিনীর সাংস্কৃতিক ও সামরিক আগ্রাসনের ঘাঁটি ও অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আরও দেখা যাবে যে, এসব শাসক মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে নব্য ক্রুসেডযুদ্ধের লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে।

    আমাদের আধুনিক ইতিহাসে সাম্প্রতিক সময় থেকে শুরু করে গত শতকের সে সব শাসকদের ইতিহাসে যদি নজর দিই, যারা জোরপূর্বক মুসলিম বিশ্বে চেপে বসে ইসলামী শরীয়াহর বাহিরে দেশ পরিচালনা করেছে, তাহলে দেখতে পাই- মুসলমানদের উপর চেপে বসা এসব শাসকদেরকে ইসলামের চিরশত্রু আমেরিকা, ইসরাইল, ফ্রান্স, ব্রিটেন নিরন্তর ষড়যন্ত্র, গোপন সম্পর্ক, সরাসরি আগ্রাসন, ঋণ প্রদান, অনুদান, গোপন লেনদেন, অরাজকতা ও গোয়েন্দাগিরির মাধ্যমে পুতুল রাজায় পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে। এসব ইতিহাস আলোচনার সুযোগ এখানে নেই। তবে আমরা দেখিয়ে দিতে চাই যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইসলামের বিরোধীশক্তিগুলো যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার খোলসে এসব শাসককে হাতের মুঠোয় নিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেসে ব্যবস্থা হলো জাতিসংঘ; যা যুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদীদেরই অনুবর্তী।

    ইসলামী মানদণ্ডে জাতিসংঘের সারকথা হলো, এটি একটি আন্তর্জাতিক আধিপত্যবাদী কুফরী সংঘ। এখানে প্রবেশ করা জায়েয নয়। এর নিকট বিচার কামনা করাও জায়েয নয়; যেটি ইসলামী শরীয়াহকে প্রত্যাখান করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেযেখানে এ পৃথিবীর পাঁচটি আগ্রাসী মোড়ল কুফরী রাষ্ট্রের পরিচালনার বাহিরে কারো নাক গলানোর ক্ষমতা নেই। তারাই নিরাপত্তা পরিষদের ব্যানারে জাতিসংঘের নেতৃত্ব আঁকড়ে আছে।

    আমরা আরও দেখিয়ে দিতে চাই যে, ইসলামের শত্রুরা এসব শাসককে বিভিন্ন সরকারি চুক্তি ও বৈঠকের মাধ্যমে ফিলিস্তিনে দখলদার ইয়াহুদী রাষ্ট্রকে বৈধতা দিতে রাজি করিয়েছে। সেই ১৯৪৯ সালের অস্ত্র বিরতি চুক্তি থেকে শুরু করে ১৯৯৩ সালের অসলো-চুক্তি পর্যন্ত। সবশেষে ২০০২ সালে বৈরুত-চুক্তিতে আরবলীগ থেকে ইসরাইল রাষ্ট্রের পূর্ণ বৈধতার স্বীকৃতি আদায় করে নেওয়া হয়েছে।

    এখানে আরও উল্লেখ করা সমীচীন মনে করছি- ইসরাইলের সাথে চুক্তি এবং ফিলিস্তিনে তাদের দখলদারিত্বের স্বীকৃতি দেওয়া শরীয়াহর ওয়াজিব হুকুম এবং আবশ্যকীয় দ্বীনি বিষয়কে অস্বীকার করার নামান্তর।

    তেমনি এটি ইসলামী রাষ্ট্রে হানাদার কাফেরদেরকে প্রতিহত করার যে বিধান মুসলমানদের উপর ফরযে আইন, তাকেও অস্বীকার করার নামান্তর। তেমনি এটি ফিলিস্তিনী মুসলমানদেরকে যে সাহায্য করা ওয়াজিব; তাও অস্বীকার করার নামান্তর। অথচ এটি শরীয়াহ প্রমাণিত ফরযে আইন, দ্বীনের অবশ্য পালনীয় একটি বিধান। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-

    وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا ﴿النساء: ٧٥﴾


    আর তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করছ না? দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে; যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এ জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে অত্যাচারী। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অভিভাবক নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।” (সূরা নিসা: ৭৫)

    ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, আল্লাহর বাণী-

    وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ



    আর তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করছ না?” উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা জিহাদে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আয়াতের সারকথা হলো, সে সব কাফের-মুশরিকদের হাত থেকে দুর্বল মুসলমানদেরকে মুক্ত করতে হবে, যারা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিচ্ছে এবং দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কালিমা বুলন্দ করা, দ্বীনকে বিজয়ী করা এবং তার দুর্বল বান্দাদেরকে মুক্ত করার জন্য জিহাদ ফরয করে দিয়েছেন। যদিও তাতে জান দিতে হোক না কেন।” (তাফসীরে কুরতুবী, ৫/২৭৯)

    তারা শুধু ফরযে আইন ছেড়ে দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি; বরং অধিকাংশ আরব দেশ ১৯৯৬র শারম আল-শাইখ ষড়যন্ত্রে ইসরাইল, আমেরিকা, রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে অংশগ্রহণ করে এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হয় যে, তারা মুজাহিদীনের হামলা থেকে ইসরাইলকে সুরক্ষা দেবে

    কুফরী মোড়লদের কাছে এহেন নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের প্রেক্ষিতে ইসলামবিরোধী শক্তি, বিশেষত নব্য ক্রুসেডার (আমেরিকা) তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক আগ্রাসনের লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমাদের দেশগুলোর শাসকগোষ্ঠীকে হাত করে নিয়েছে।

    সময়ের পরিবর্তনে আজ আমাদের দেখতে হচ্ছে, তারা পুরোপুরি নব্য ক্রুসেডারদের তাঁবেদারে পরিণত হয়েছে। তাই তো ফিলিস্তিন টুকরো টুকরো হচ্ছে, আঘাতে আঘাতে বিধ্বস্ত হচ্ছে, প্রতিদিন শহীদ হচ্ছে কত শত ফিলিস্তিনী; কিন্তু প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলো নীরব-নির্বিকার বা আঁতাঁত করে আছে ইসরাইলের সাথে। ইরাকী মুসলমানদেরকে হত্যা করা, তাদের ভূমি দখল করা এবং তাদের পেট্রোল ছিনতাই করার জন্য হামলার পর হামলা করা হচ্ছে। আর আরব প্রতিবেশীরা নব্য ক্রুসেডারদেরকে নিয়মিত সব ধরনের সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। আফগানিস্তানে ক্রুসেডার বাহিনী সৈন্য প্রেরণ করে আর প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো আমেরিকার সাথে আঁতাঁত করে আফগান ও আফগান জাতিকে কর্তৃত্বে আনার পাঁয়তারা করে।

    শরীয়াহ থেকে নির্বাসিত এসব শাসকের মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, নির্যাতন, অপরাধসমূহ, কারো কাছে অস্পষ্ট নয়। বিশেষত ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের সাথে তাদের বন্ধুত্ব দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট।

    তাই তো তারা তাদের বিরুদ্ধে উম্মতে মুসলিমাহ ও তার বীর সন্তান মুজাহিদীনের সংগ্রামে ভীত হয়ে, বিশেষত ফিলিস্তিন, ইরাক, চেচনিয়া ও কাশ্মীরে ইসরাইল-আমেরিকার উৎপাত বেড়ে যাওয়ার পর, মুসলমানদেরকে দমন করা, তাদের নিজেদের দুর্বলতা, নেতিবাচকতা ও তাঁবেদারিকে আড়াল করার জন্য বিদেশী প্রভুদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো তারা, যারা ইসলামের পোশাক পরিধান করে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়ার ঢং করে; যাতে এর মাধ্যমে সহজেই মুসলমানদের আস্থা, বিশ্বাস ও হৃদয়-মননে স্থান করে নিতে পারে। ঠিক জীবনবিধ্বংসী ভাইরাসের মতো, যা হিউম্যান ইমিউন সিস্টেমকে (মানুষের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে) এবং মানুষের শারীরিক কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয় তথা মানবদেহকে ভেতরে ভেতরে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়

    এ বিষয়ে নিচের আলোচনায় সম্প্রসারিত করার প্রয়াস পাব।





    আরও পড়ুন
    ১৩তম পর্ব ---------------------------------------------------------------------------------------------- ১৫তম পর্ব
    Last edited by tahsin muhammad; 09-06-2024, 09:37 PM.

  • #2
    জাযাকাল্লাহ খাইরান

    Comment

    Working...
    X